শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

গ্রাম আদালত পরিচালনায় সারা দেশে এপ্রিল মাসে প্রথম মাদারীপুর, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের প্রশংসা

আপডেট : ২৩ মে ২০২৩, ০৫:০৪

মাদারীপুরে স্থানীয় সরকার ব্যাবস্থাপনায় হাস্যমুখে সন্তোষজনক নাগরিক সেবার এক নবতর যাত্রা সূচনা করেছেন নতুন ডিডিএলজি মো. নজরুল ইসলাম। দক্ষিণের দ্বার খ্যাত দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন  জেলা মাদারীপুর। বিগত দীর্ঘদিন ধরে এই জেলায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, গ্রাম আদালত পরিচালনা, ট্যাক্স রাজস্ব  আদায়, স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, শূন্যপদ সমূহে নিয়োগ না হওয়া, পৌর মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান, সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের সহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না হওয়াসহ সার্বিক কার্যক্রমে এক স্থবিরতা বিরাজ করছিল। স্থানীয় সরকার কার্যক্রমে মাদারীপুর ন্যাশনাল র‌্যাংকিং এ দীর্ঘদিন ধরে একেবারে শেষে অবস্থান করা সহ জেলার নাগরিকবৃন্দ দীঘদিন ধরে সেবা প্রাপ্তিতে বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন। 

গত ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে নিয়মিত পদায়ন উপসচিব মো. নজরুল ইসলাম(প্রশাসন ক্যাডার, বিসিএস, ২৮ তম ব্যাচ) ডিডিএলজি, উপপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। শুরু করেন হাস্যমুখে সন্তোষজনক জনসেবা প্রদানের এক অতুলনীয়, ইতিবাচক ও আস্থাময় নতুন শুভযাত্রা। তার যোগদান কালের অব্যবহিত পূর্ব সময়ে মাদারীপুর জেলা জাতীয় র‌্যাংকিং এ সমগ্র দেশের জেলা সমূহের মধ্যে ৫৮ তম অবস্থানে ছিল। মাদারীপুর জেলায় বতমান ৫৯টি ইউপি এর হিসাব সহকারি কম্পিউটার অপারেটর এর পদে মামলা জনিত ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার কারনে নিয়োগ না হওয়ায় এবং পদ শূন্য থাকায় ইউপি সমূহে প্রান্তিক পর্যায়ের সেবাদান বিঘ্নিত হচ্ছিল এবং সাধারন মানুষ হয়রানির ও নিগ্রহের শিকার হচ্ছিলেন। গ্রাম আদালত সঠিকভাবে নিয়মিত পরিচালতি হচ্ছিল না। রেমিটেন্স আয়ে অন্যতম শীর্ষ জেলা হলেও, ইটালি ও ইউরোপের অন্যান্য দেশে কর্মরত প্রবাসী নাগরিক ও তাদের পরিবার, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা গ্রহনে দীর্ঘসুত্রীতা, হয়রানিসহ আর্থিক লোকসান ও নিগ্রহের মুখোমুখি হচ্ছিলেন। একই সাথে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনসহ স্থানীয় সরকার পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকা ও জ্ঞানের অভাবে সরকারের জাতীয় পলিসি বাস্তবায়নে মন্থরতা সৃষ্টি হচ্ছিল। নতুন ডিডিএলজি মো. নজরুল ইসলাম যোগদান পরবর্তী ধীরস্থির মস্তিকে সমস্যা সমূহ চিহ্নিত করে এর সমাধানকল্পে শুরু করেন প্রয়োজনীয় কার্যক্রম। স্বল্পতম সময়ে যাবতীয় সমস্যার বেশিরভাগের সমাধানে স্থাপন করেন এক অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত। মাদারীপুরের সাধারন আপামর জনসাধানের কাছে আন্তরিক ও ফলপ্রসু সেবায় এক অনুপমেয় আস্থার প্রতীক নতুন ডিডিএলজি মো.নজরুল ইসলাম। ইউপি হিসাব সহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদের দীর্ঘদিনের মামলাজনিত জটিলতা ও নিয়োগ না হওয়ার সমস্যা সমাধান করে দ্রুততম সময়ে সর্ম্পূণ দুর্নিতিমুক্ত, মেধা ও কারিগরি দক্ষতা ভিত্তিক শতভাগ নিয়মতান্ত্রিকভাবে সব শূন্যপদের নিয়োগ দান করে সূচনা করেন, সমস্যা সমাধানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।  বহুপূবে বিজ্ঞাপন শুধুমাত্র ন্যুণতম ফি দিয়ে অন্য কোন পয়সা খরচ না করে যে সরকারী চাকুরী লাভ করা যায়, সৃষ্টি করেন তার এক বাস্তব উদাহরন।

 এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট একাধিক উপকার ভোগীরা বলেন, ডিডিএলজি মো. নজরুল ইসলাম যোগদানের কিছুদিন পরেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেন  এবং জেলা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে মাদারীপুর জেলার সব পৌরসভার সম্মানিত মেয়র, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা, সকল ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সচিব,  সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও অন্যান্যদের নিয়ে আরম্ভ করেন এক ন্যাশনাল কর্মশালা ও  ২ দিন ব্যাপী পূর্নাঙ্গ প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা কর্মসূচী। এতে সরকারের রেজিষ্টার জেনারেল স্বয়ং এবং তার উচ্চ পর্যায়ের কারিগরি টিম সরাসরি প্রশিক্ষণ দেন এবং সমস্যা সমূহের তাৎক্ষনিক সমাধান প্রদান করেন। এর ফলে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে এক আমূল পরিবর্তনের সূচনা হয়। স্বল্পতম সময়ে মাদারীপুর জাতীয় পযায়ে তার শেষের দিকের ৫৮ তম অবস্থান থেকে ২৮তম অবস্থানে উত্তরণে সাফল্য পায় এবং ক্রমান্বয়ে এ কার্যক্রম অগ্রসরমান। ডিডিএলজির নিয়মিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ মনিটরিং, পরিদর্শন, পরিবীক্ষণের ফলে এবং তার উদ্ভাবনী উদ্যোমী উদ্যাগের ফলে গ্রাম আদালত পরিচালনায় এপ্রিল মাসে সমগ্র দেশে মাদারীপুর ১ম স্থান লাভ করে। অর্জন করে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের প্রসংশাপত্র। যা মাদারীপুরের জন্য এক প্রশংসনীয় অর্জন।

এ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান খোকন বয়াতি বলেন, ডিডিএলজি স্যারের উৎসাহ, গাইডলাইন ও সহায়তার ফলে আমরা সবাই নতুনভাবে কাজে ঝাপিয়ে পড়েছি। একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও অত্যান্ত সম্ভ্র্রান্ত পরিবারের সন্তান হয়েও সব মানুষের সাথে সদা সর্বদা হাস্যমুখে খুবই আন্তরিকতা দিয়ে পরামর্শ প্রদান, সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার যে দৃষ্টান্ত এই ডিডিএলজি স্যার স্থাপন করেছেন, তা সমগ্র মাদারীপুরবাসী আজীবন মনে রাখবে। প্রশাসন ক্যাডারের অফিসার হয়েও যে এতো জনবান্ধব ও গনমুখী হওয়া যায়, কোনো মানুষ যে এতা নির্মোহ, র্নিলোভ এবং এতো পরোপকারী হতে পারে, তার সত্যিই এক বিরল দৃষ্টান্ত ডিডিএলজি মোঃ নজরুল ইসলাম ।

এই ডিডিএলজির তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান সমূহের রাজস্ব আদায়ে সক্রিয় গতিশীলতা, ইউপি মেম্বার, ইউপি চেয়ারম্যানদের নাগরিক সেবায় অধিকতর উদ্বুদ্ধকরণ, পৌর মেয়র, কাউন্সিলরসহ জনপ্রতিনিধিদের কার্যক্রমে আরো গতিশীল সমন্বয় আনায়ণসহ, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প, এডিপি বাস্তবায়ন এবং নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরনে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমে মাদারীপুর জেলা আজ এক ভিন্ন ইতিবাচক অবস্থানে উপনীত।

সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন যিনি তাঁর সততা ও দক্ষতার জন্য সমগ্র দেশব্যাপী পরিচিত। তিনি বর্তমান ডিডিএলজি কে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে মাদারীপুরে পদায়নে অন্যতম ভূমিকা রাখেন। তিনি বলেন, অত্যন্ত সৎ, মেধাবী, কর্মতৎপর, উচ্চশিক্ষিত ও দক্ষ দায়িত্ববান কর্মকর্তা উপসচিব মো- নজরুল ইসলাম একজন কর্মবীর ও নিশ্চিতভাবে নির্ভর করার মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তি। এ ধরনের কর্মকর্তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র ঘোষীত ২০৪১ এর স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনের অন্যতম সহায়ক ও অনুকরণীয়। 

নবাগত জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনায় নানান বিশৃঙ্খলা, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতা লাঘবে ডিডিএলজি মো. নজরুল ইসলাম এর কর্মপ্রয়াস ও সমস্যা সমাধানে কর্মতৎপরতা নি:সন্দেহে এই জনপদের মানুষের সেবাপ্রাপ্তিতে  এক আলোকিত অধ্যয়ের সূচনা করেছে। একজন পেশাদারী ও মানবিক কর্মকর্তা হিসেবে জনসেবায় দায়িত্ব পালনে ডিডিএলজি নজরুলের সফল কার্যক্রমে নি:সন্দেহে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ একই সাথে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিবৃন্দকেও উদ্বুদ্ধ-উৎসাহী করবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। সমগ্র দেশে গ্রাম আদালত পরিচালনায় প্রথম স্থান অধিকার, অল্প সময়ে ন্যাশনাল র‌্যাংকিং এ সম্মানজনক উত্তরন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে ডায়নামিক প্রগ্রেস, এসবই প্রশংসনীয় ও মাদারীপুর বাসীর জন্য প্রশাসনের সম্মিলিত কর্মপ্রয়াস।

ইত্তেফাক/ইআ