শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

সামনে অপেক্ষা করিতেছে সমূহ বিপদ

আপডেট : ২৭ মে ২০২৩, ০৩:০০

বাংলায় একটি প্রবাদ রহিয়াছে—‘এক বালতি দুধ নষ্ট করিতে এক ফোঁটা চোনাই যথেষ্ট।’ গত ১৪ বছর ধরিয়া ক্ষমতাসীন দল সারা দেশে যে বিপুল পরিমাণে উন্নয়নকাজ করিয়াছে—তাহাতে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কাহারো বদনাম করিবার কথা নহে। কিন্তু সরবে কিংবা নীরবে বিপুলসংখ্যক মানুষ সরকারের কিছু কিছু ব্যাপারে ভীষণভাবে মনঃক্ষুণ্ণ। প্রশ্ন হইল, কেন বদনাম হইতেছে সরকারের? উন্নয়নের এক বালতি দুধের মধ্যে কাহারা সেই চোনা, যাহাদের কারণে নষ্ট হইতেছে পুরা বালতিভরা দুধ?

সকলেই জানেন ও বোঝেন, এই চোনা হইল স্বাধীনতাবিরোধী অনুপ্রবেশকারী। নির্বাচন যত ঘনাইয়া আসিতেছে, ততই চারিদিক হইতে স্বাধীনতাবিরোধীরা নানান ধরনের ষড়যন্ত্রের জাল বিছাইতেছে। তাহারা অত্যন্ত চৌকশ। কূটবুদ্ধি এবং অর্থশক্তিতেও তাহারা অত্যন্ত বলীয়ান। কোথায়, কাহার মাধ্যমে, কীভাবে, কোন উপায়ে, কত টাকায়, কোন কৌশলে পদ-পদবি ক্রয় করিতে হয় এবং কী উপায়ে প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করিতে হয়—এই বিষয়গুলি তাহাদের চাইতে আর কেহ ভালো জানে না। তাহারাই এখন বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে তুলিতে তুলিতে ফেনা তুলিয়া ফেলে। তাহারা যাহা করে, ছক কষিয়া পরিকল্পনামাফিক করে। সুতরাং নির্বাচন লইয়া তাহাদের যেই ষড়যন্ত্র, তাহা যদি সফল না হয়, অন্তত নির্বাচনের পর দেখা যাইবে, তাহাদের বড় একটি অংশ সবচাইতে বেশি মনোনয়ন আদায় করিয়া লইয়াছে। তাহাদের প্ল্যান ‘এ’, প্ল্যান ‘বি’ কিংবা ‘সি’ রহিয়াছে। একটি সফল না হইলে অন্যটি ধরিয়া তাহারা অগ্রসর হইতেছে। সুতরাং ইহা বলা অত্যুক্তি হইবে না যে, এই সকল স্বাধীনতাবিরোধীর দ্বারা স্বাধীনতার সপক্ষের দলটি ইতিমধ্যেই কোণঠাসা হইয়া গিয়াছে। এই কারণে আমরা দেখিতে পাইতেছি, এককালে যাহারা চোখের উপর চোখ রাখিয়া কথা বলিবার সাহস পাইত না, এখন তাহারাই নানানভাবে ধৃষ্টতা দেখাইতেছে।

সেই যে ব্রিটিশরা ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতি দিয়া এই উপমহাদেশকে লইয়া খেলিয়াছিল, সেই খেলা এখনো অনেকেই খেলিতে গিয়া বিপদে পড়িতেছেন। কারণ, দুঃখজনক হইলেও সত্য, এই স্বাধীনতাবিরোধীদের পুষ্টিসাধন করিয়াছে স্বাধীনতার পক্ষের কিছু লোকজন। ক্ষমতার মদমত্ত মানুষকে অনেক সময় অন্ধ করিয়া দেয়। আমরা প্রতিবেশী একটি দেশের রাজ্যের ক্ষেত্রে এই কথাটি আরও সহজ করিয়া বুঝিতে পারি। সেইখানে একটি দল টানা ৩৪ বছর ক্ষমতায় আসীন ছিল। সেই সুদীর্ঘ বাম-জামানায় সেইখানে বিন্দু হইতে সিন্ধু অবধি সকল কিছুর মধ্যে কেবল কাস্তে-হাতুড়ি ও লাল রং দেখা যাইত। লক্ষ লক্ষ লাল পিপীলিকার স্রোতের মতো চারিদিকে ছিল কেবল তাহাদেরই কর্মী। কিন্তু যখন তাহারা ক্ষমতাহারা হইল, তাহার কয়েক বছর পর দেখা গেল, তাহাদের পতনের এপিটাফে প্রদীপ দেওয়ার মতো সামান্য কর্মীও নাই। কোথায় গেল সেই লক্ষ লক্ষ কর্মীর বাঁধভাঙা স্রোত? দেখা গেল, ইহাদের বড় একটি অংশ মুদ্রার ক্ষমতা-হারানো পিঠ হইতে মুদ্রার ক্ষমতাসীন অপর পিঠে চাপিয়া বসিয়াছে। অনেকের মতে, এই পরিবর্তন আসলে মুদ্রার এইপিঠ-ঐপিঠ মাত্র!

সুতরাং বাংলাদেশেরও স্বাধীনতাবিরোধীদের জঞ্জাল দূর করিতে হইবে। এই জঞ্জাল দূর না হইলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা এই জনপদকে বসবাস উপযুক্ত করিয়া যাইতে পারিব না। ক্ষমতাসীনদের দলে স্বাধীনতাবিরোধীদের অনুপ্রবেশ লইয়া পত্রপত্রিকায় এই সকল বিষয় লইয়া ইতিপূর্বে অনেক লেখালেখি হইয়াছে। সরকারের নিকট গোয়েন্দা রিপোর্ট নিশ্চয়ই রহিয়াছে। ক্ষমতাসীনদের নিশ্চয়ই অগোচরে নাই যে, কোনো কোনো জেলায় মানুষের নাভিশ্বাস উঠিয়া যাইতেছে। এমতাবস্থায় আমরা আরও স্পষ্ট করিয়া বলিতেছি, পত্রপত্রিকার লেখা কিংবা গোয়েন্দা রিপোর্ট দেখিবার দরকার নাই, অন্তত একটিবার সরকার কোনো একটি অঞ্চলকে ‘টেস্ট কেস’ হিসাবে যাচাই করিয়া দেখুক—উহার ভিতরের অবস্থাটি আসলে কী? মনে রাখিতে হইবে, আওয়ামী লীগের ইতিহাস ত্যাগ-তিতিক্ষার ইতিহাস। অনেক রক্ত, শ্রম, অত্যাচার, জেল-জুলুমের বিনিময়ে এই আওয়ামী লীগ দলটি আজিকে এই পর্যায়ে আসিয়াছে। সুতরাং এখন যদি স্বাধীনতাবিরোধীরা ইহার অন্দরে ঢুকিয়া অর্থের বিনিময়ে পদ-পদবি কিনিয়া অন্যদের দিকে চোখ রাঙায়, তখন সর্বনাশের আর কী বাকি থাকে? এইভাবে চলিতে পারে না। এই ব্যাপারে অতি সত্বর কঠোর ও যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হইলে সামনে সমূহ বিপদ অপেক্ষা করিতেছে—তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না।

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন