রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

প্যারিসের পুড়ে যাওয়া গির্জা পুনর্গঠনের কর্মযজ্ঞ

আপডেট : ২৭ মে ২০২৩, ১০:৪৮

আইফেল টাওয়ারের মতো এক ডাকে না চিনলেও নটর ডেম গির্জা প্যারিসের অন্যতম প্রতীক। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতির পর পুনর্গঠনের কাজ পুরোদমে চলছে। কাচের জানালা আবার আগের মহিমায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে৷ফ্লাভি ভ্যাঁসঁ-প্যুতি অত্যন্ত আলতোভাবে কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

মাস্টার গ্লাস মেকার হিসেবে তিনি প্যারিসের নটর ডেম গির্জার জানালার মেরামতি করছেন। সেইসঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের ফলে সৃষ্টি হওয়া কালির ছোপও দূর করতে হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব গির্জাটি আবার সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনার কারণে তাকে বেশ চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। 

নটর ডেম গির্জা

সে কারণে তারা দুটি শিফটে কাজ করছেন। স্থানীয় সময় সকাল ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত কাজ চলছে। ভ্যাঁসঁ-প্যুতি বলেন, 'এই দুঃস্বপ্ন মেরামত করা সত্যি অনবদ্য অভিজ্ঞতা। কারণ সাধারণত আমরা আরও বেশি সময় ধরে কাজ করি। কিন্তু এখানে তো এক ধরনের জরুরি অবস্থা বলা চলে। নটর ডেমের বিশেষ এক প্রতীকী চরিত্র রয়েছে। সেই অবস্থা পুনরুদ্ধার করতেই হবে।'

২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে অগ্নিকাণ্ডের সময় প্রায় অলৌকিকভাবে গির্জার জানালাগুলো বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু নটর ডেমের প্রতীক হিসেবে পরিচিত গির্জার চূড়াটি নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়ে। বহু দূর থেকে সেটা দেখা যেত। ছাদও ধসে গিয়েছিল। গোটা গির্জাই প্রায় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।

 ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

সেই দুর্ঘটনার পর ফ্রান্সের সরকার উচ্চাকাঙ্ক্ষী এক লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিল। পাঁচ বছরের মধ্যে মেরামতির কাজ শেষ করে আরও সুন্দর এক নটর ডেমের দরজা আবার খুলে দেবার অঙ্গীকার করেছিল সরকার। 

পুনর্গঠন প্রকল্পের উপ-প্রধান ফিলিপ জস্ট বলেন, 'এমন গুরুত্বপূর্ণ এক নির্মাণের সাইটে কেবল সেরা মানুষের কাজের অধিকার রয়েছে। টেন্ডারের ক্ষেত্রে আমরা সব কাজের জন্য সেরা মিস্ত্রীদের বেছে নিয়েছিলাম।'

নটর ডেমের প্রতীক হিসেবে পরিচিত গির্জার চূড়াটি নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়ে।

একশোরও বেশি কোম্পানি পুনর্গঠন প্রকল্পে কাজ করছে। এক হাজারেরও বেশি মিস্ত্রী কাজে হাত লাগাচ্ছেন। তবে সবাই কিন্তু মূল সাইটে সক্রিয় নন। ক্যাথিড্রালের জানালাগুলো গোটা ফ্রান্সজুড়ে বিভিন্ন কর্মশালায় পাঠানো হয়েছে। 

প্যারিসের দক্ষিণে ত্রোইয়ে শহরে ফ্লাভি ভ্যাঁসঁ-প্যুতির কর্মশালায়ও একটি জানালা এসেছে। তিনি মূলত ঊনবিংশ শতাব্দীর কাচের অংশগুলো নিয়ে কাজ করছেন। কয়েকটি এমনকি মধ্যযুগে তৈরি। জানালাগুলো ছাড়া ক্যাথিড্রাল খোলা সম্ভব নয়। 

ক্যাথিড্রালের জানালাগুলো গোটা ফ্রান্সজুড়ে বিভিন্ন কর্মশালায় পাঠানো হয়েছে। 

ফ্লাভি ভ্যাঁসঁ-প্যুতি মনে করেন, 'এই সব জানালা ছাড়া পবিত্র পরিবেশ হারিয়ে যাবে, অশুদ্ধ মনে হবে। জানালাগুলো ফিল্টারের মতো প্রাকৃতিক আলোকে ঐশ্বরিক আলোয় পরিণত করে।' ভেঙে পড়া গির্জার চূড়াও অবিকল আগের মতো করে তৈরি করার কথা। 

ফিলিপ জস্ট বলেন, 'কাঠের চূড়াটি আবার প্যারিসের আকাশে কয়েকশ মিটার উঁচুতে শোভা পাবে। বহুকাল এমনটা দেখা যায়নি। সে ক্ষেত্রে আমরা ঊনবিংশ শতাব্দীর স্থপতি ভিয়োলে-ল্য-দুকের কৌশল প্রয়োগ করবো।' গির্জা কর্তৃপক্ষের টাকার কোনো অভাব নেই। 

ঊনবিংশ শতাব্দীর স্থপতি ভিয়োলে-ল্য-দুকের কৌশল

মেরামতির কাজের জন্য গোটা বিশ্ব থেকে চাঁদা এসেছে। কিন্তু শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মূল্য শুধু অর্থ দিয়ে চোকানো হচ্ছে না। ফ্লাভি ভ্যাঁসঁ-প্যুতি বলেন, 'আমরা সেই মধ্যযুগ থেকে চলে আসা কাচ শিল্পীদের ধারা বহন করছি। প্রত্যেকে এই স্থাপত্য পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বহন করছে।'

আগুনের কালি ও কয়েকশ বছরের ধুলা দূর করার পর জানালাগুলো একেবারে ঝকমকে ও নতুন রূপে শোভা পাবে। ফলে ক্যাথিড্রালটি অগ্নিকাণ্ডের আগের তুলনায় হয়তো আরো সুন্দর হয়ে উঠবে।

ইত্তেফাক/ডিএস
 
unib