শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় বন্ধ নির্মাণ কাজ

আপডেট : ২৭ মে ২০২৩, ২১:৫৭

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে আছে আশুগঞ্জ-নবীনগর সড়ক প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। প্রকল্পের ব্যয় ও ২ বছর সময় বাড়িয়েও চলতি বছরের ৩০ জুন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। 

তবে ইতিমধ্যে এই সড়কের মেঘনা ও পাগলা নদীর উপর ২টি সেতুসহ মোট ৯টি সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ করতে মন্ত্রণালয়ে দ্বিতীয় দফায় আবারও এক বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু এক বছর বাড়ানো সময়ের মধ্যেও নির্মাণ কাজ শেষ করার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা রয়েছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগ বলছে, কমপক্ষে ৭-৮ মাস সময় লাগতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি এলাকাবাসীর। 

জানা যায়, মেঘনা, তিতাস আর পাগলা নদীর পাড়ের বিচ্ছিন্ন জনপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা। এই উপজেলার সঙ্গে সড়ক পথে জেলা সদর এবং রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘবে আশুগঞ্জ-নবীনগর সড়ক নির্মাণ এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। ২০১৭ সালে এই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। পরে দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে প্রায়  ৪২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। 

কিন্তু অনুমোদিত প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এর কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে দুই বছর সময় বাড়ানোসহ প্রকল্প ব্যয় ১৮৫ কোটি বাড়িয়ে মোট প্রায় ৬০৫ কোটি টাকার একটি নতুন সংশোধিত প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংশোধিত প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়।  

নবীনগরের বীরগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মো. জহির রায়হান বলেন, জেলা সদরের সঙ্গে নবীনগর উপজেলার সরাসরি কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। ফলে নবীনগর এখনও একটি বিচ্ছিন্ন জনপদ। নবীনগর উপজেলা থেকে রাজধানী বা অন্য কোনো শহরে যেতে হলে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলা অথবা পার্শ্ববর্তী বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ঘুরে নারায়ণগঞ্জের ভূলতা-ধনবাড়িয়া আসতে হয়। এতে স্থানীয়দের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

বীরগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. কবির হোসেন বলেন, নবীনগর-আশুগঞ্জ সড়ক চালু হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সড়ক পথে নবীনগর থেকে সরাসরি চলাচল করা যাবে। সড়ক যোগাযোগ না থাকায় সন্ধ্যার পর ঢাকা থেকে ভৈরব কিংবা আশুগঞ্জে আসলে আর নবীনগর যাওয়া যায় না। আমরা বিচ্ছিন্ন জনপদে বসবাস করি, নৌকায় পারাপার আমাদের ভরসা। এই সড়কটি জন্য আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। 

আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মো. ইমরান বলেন, ইতিমধ্যে মেঘনা ও পাগলা নদীর ওপর বড় দুটি সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। আমরা চাই অন্তত দ্রুত সেতু দুটি চালু হোক। তাহলে নদী পারাপার ভোগান্তি অন্তত কিছুটা কমে আসবে।

সড়ক  জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে সড়ক নির্মাণ কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধি ও ভূমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ বরাদ্দসহ মোট ৬০৬ কোটি টাকার সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এই প্রকল্পের প্রায় ৪৫% ভাগ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হতে আরও ৭-৮ মাস লাগতে পারে। আগামী শুকনো মৌসুমে সড়কটির কাজ পুরোদমে শুরু করা সম্ভব হবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রহুল আমিন বলেন, আশুগঞ্জ-নবীনগর সড়ক প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে জন্য অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। জমির মালিকদের নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মৌজা অনুযায়ী জমির মূল্য নির্ধারণ করে যত দ্রুত সম্ভব ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ইত্তেফাক/এবি/পিও