বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন জরুরি

আপডেট : ০২ জুন ২০২৩, ০৩:০০

বিলম্বে হইলেও আসিতেছে বর্ষাকাল। আবহাওয়াবিদরা বলিতেছেন চলতি মাসের ১৩-১৪ জুন হইতে দেশে বর্ষাকাল জাঁকিয়া বসিতে পারে। এমনকি এবার বর্ষা মৌসুমে হইতে পারে ভারী বৃষ্টিপাত। বর্ষাকাল আসিলেই ইদানীং কয়েক বছর ধরিয়া আমাদের মনে ডেঙ্গু লইয়া ভীতি তৈরি হইতে দেখা যায়। আবহাওয়াবিদ ও কীটতত্ত্ববিদদের কথাবার্তায় এইবার বাড়িতেছে সেই আশঙ্কাও। উদ্বেগের বিষয় হইল, এই বছর ঢাকার বাহিরেও সমানতালে বাড়িতেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। কিন্তু ইহা লইয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা আছে বলিয়া প্রতীয়মান হয় না। সাধারণত ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার বিস্তারের পিক টাইম বা সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময়কাল শুরু হয় জুলাই মাসের পর হইতে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইহার প্রাদুর্ভাব এখন পরিলক্ষিত হইতেছে ইহার আগে হইতেই।

ইতিমধ্যে গত দুই বছরের তুলনায় এই বছর ভয়ংকর রূপ গ্রহণ করিয়াছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। বিশেষ করিয়া গত বছরের চাইতে মে মাসে ছয় গুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হইয়াছে। দিনদিন পরিস্থিতি অবনতির দিকে। গত চার মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি হইতে এপ্রিল পর্যন্ত যেইখানে ৯৮৬ জন রোগী আক্রান্ত হন, সেখানে গেল মে মাসেই আক্রান্ত হইয়াছে ১ হাজার ৩৬ জন। এই তথ্য খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। অথচ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এখনো ইহা লইয়া দেখা যাইতেছে না তেমন প্রস্তুতি। বিশেষ নির্দেশনা ও গাইডলাইন জারি হইয়াছে বটে। কিন্তু তাহার বাস্তবায়ন খুব একটা নাই। অধিকাংশ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর জন্য নাই আলাদা ইউনিট। এমনকি ৯০ শতাংশ চিকিৎসাধীন রোগী হাসপাতালে পাইতেছেন না মশারি। মশারিবিহীন রোগী অন্য সাধারণ রোগীদের মধ্যেও ছড়াইতেছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। এদিকে মশা প্রতিরোধের সরঞ্জামের দামও ঊর্ধ্বমুখী। মশা প্রতিরোধে দরকার মশারি, মশার কয়েল, মসকিটো স্প্রে, ইলেকট্রনিকস রেকেট বা কিলার ব্যাট, মসকিটো বেস্ট কিলার, মসকিটো বাল্ব, মসকিটো ভ্যাপ্রোজারসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি। কিন্তু এই সকল পণ্যের দাম এখন চড়া। এই সংক্রান্ত আমদানি পণ্যের দাম কীভাবে হাতের নাগালে রাখা যায়, তাহা লইয়া চিন্তাভাবনা করিতে হইবে। কেননা এই সকল পণ্যের দাম কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২৫ হইতে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়া গিয়াছে।                                                                                                                                  এদিকে ডেঙ্গু-সংক্রান্ত চিকিত্সাব্যবস্থায় বিরাজ করিতেছে নানা অব্যবস্থাপনা। ইহাও আমাদের ভাবাইয়া তুলিতেছে। ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় খরচ হইতেছে ১৫ হইতে ৫০ হাজার টাকা। এই খরচ মেটাইতে অনেকে হিমশিম খাইতেছেন। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য অসহনীয়। তাহার উপর বাড়তি চিকিৎসা খরচ মিটানো খুবই কঠিন। এই জন্য ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা এবং সরকারি হাসপাতালগুলিতে ১০০ টাকা নির্ধারণ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ইহা ৭০০ হইতে ৮০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হইতেছে বলিয়া অভিযোগ রহিয়াছে। কিউলেক্স ও এডিস মশার উপদ্রব কমাইতে যেমন সিটি করপোরেশনসহ সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করিতে হইবে, ক্র্যাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করিতে হইবে, তেমনি ইহার চিকিৎসা খরচও যথাসম্ভব সাধ্যের মধ্যে রাখিতে হইবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলিতেছেন, এই বছর এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি। সবচাইতে বেশি সংক্রমণ পরিলক্ষিত হইতেছে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে। ঢাকার বাহিরে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। বলাবাহুল্য, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচাইতে জরুরি গণসচেতনতা ও আমাদের চারিপার্শ্ব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। মশা যাহাতে বংশবিস্তার না করিতে পারে এই জন্য সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের উচিত ফগিংয়ের চাইতে লার্ভিসাইডের ওপর গুরুত্বারোপ করা। ইহা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত টুল বিটিআইয়ের প্রয়োগ করা, জলাশয়-ড্রেনে গাপটি মাছ ছাড়া এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে আগাম প্রস্তুতিমূলক সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা। কীটতত্ত্ববিদদের ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী যেহেতু আগামী দিনগুলিতে আরও ডেঙ্গু ছড়াইবার আশঙ্কা রহিয়াছে, তাই ইয়া নিয়ন্ত্রণে ও প্রতিরোধে এখনই জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন করা জরুরি। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং এইখাতে বাজেট বাড়াইতে হইবে। সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখিতে সচেতনতামূলক গণ-লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম হাতে নিয়াছে। এই ব্যাপারে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোকেও আগাইয়া আসিতে হইবে।

 

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন