কুমিল্লার মাঠে ফেডারেশন কাপ ফুটবল ফাইনালের টাইব্রেকে মোহামেডানের শেষ শট। গোল করলেই ১৪ বছর অপেক্ষার অবসান হবে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে কয়েক হাজার দর্শক। অপলক তাকিয়ে কামরুল হাসানের দিকে। টিভির পর্দায় লাখো দর্শক। কামরুলের গোল হলেই উত্সব। হাইভোল্টেজ ফাইনালে কামরুল গোল করলেন। ফাইনাল জিতল মোহামেডান, উত্সবে মেতে উঠলেন মোহামেডানের লাখো লাখো দর্শক। শেষ গোলটা দেশের ফুটবলে নতুন জোয়ার এনে দিয়েছে। কামরুল ইসলাম যদি শেষ শটটা মিস করতেন কে জানে কি হতো মোহামেডানের ভাগ্যে। মঙ্গলবারের সেই ফাইনালের সন্ধ্যায় স্টেডিয়ামে অনেক দর্শককে কাঁদতে দেখা গেছে। মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ, অনেক সাবেক ফুটবলার পুরোনো দর্শকের চোখে পানি ঝরতে দেখা গিয়েছিল।
গোলদাতা কামরুল ইসলাম এখনো সেই ছবি ভুলতে পারেন না। যদি গোলটা না হতো, ট্রফিটা না পেতাম তাহলে কি হতো জানি না। তবে আমি অন্য কিছু না ভেবে মনোযোগ দিয়ে ছিলাম গোলের দিকে। ‘গোল করতে হবে জিততে হবে। আমাদের ফুটবল ক্যারিয়ারের ট্রফি নেই। এই সুযোগ ট্রফি তুলে নিয়ে আমরা ঢাকায় ফিরব—কথাগুলো বলছিলেন কামরুল ইসলাম।
ফাইনালের সেই গোলের কথা বলতে বলতে বারবার শিহরিত হচ্ছিলেন তরুণ ফুটবলার কামরুল। শরীরের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছিল কামরুলের। আবেগ-আপ্লুত কামরুল এখনো ভুলতে পারছেন না গোলের পর উত্তেজনার ছবিগুলো। টাইব্রেকে শট করতে গিয়ে কি ঘটেছিল কীভাবে নিজেকে গুছিয়ে রাখলেন। আবাহনীর গোলকিপার সোহেলের পাতানো ফাঁদ কীভাবে এড়িয়ে গেলেন সেই গল্পটা তুলে আনলেন কামরুল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্যানভাসে তুলির শেষ আঁচড় দিয়েছিলেন কামরুল।
স্পট কিক করতে গেলে আবাহনী গোলকিপার সোহেল যে কোনো শুটারকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে এলোমেলো করে দেওয়ার কৌশল করেন সোহেল। শট নেওয়ার আগে বল নিয়ে নড়াচড়া করেন। মোহামেডানের কামরুল ইসলাম শট নিতে গিয়ে বলের ধারে কাছে যাননি। রেফারি আলমগীর সরকারের কাছে গিয়ে বলছেন সোহেল ভাইয়ের কাজ শেষ হলে পোস্টে যেতে বলেন। রেফারিও সোহেলকে বলছেন তোমার কাজ শেষ হলে পোস্টে যাও। সোহেলকে ডজ দিয়ে কামরুল শট করলেন বাম দিকে। সোহেল ঝাঁপ দিয়েছে ডানদিকে।
চট্টগ্রাম কাপ্তাইয়ের ছেলে কামরুল ছয়-সাত বছর ধরে ঢাকার ফুটবলে খেলছেন। মোহামেডানে খেলছেন তিন বছর ধরে। ফুটবলের এমন মোমেন্টে উইনিং গোল আর আসেনি তার ক্যারিয়ারে। ‘দুই জন বিদেশি ফুটবলার, তারা শট নিতে পারবেন না। ইনজুরি ছিল। আমাকে শট নিতে হবে। এটি আমার জীবনের সেরা মোমেন্ট। আমার গোলে ট্রফি। আমার শেষ শটটার দিকে সবাই তাকিয়ে। আমি এক ফোঁটা টেনশন করিনি—বললেন কামরুল। লেফটব্যাক পজিশনের এই ফুটবলার বললেন,‘যখন দেখলাম কলিন্দ্রেসের শট গোলকিপার বিপু ঠেকিয়ে দিয়েছেন। সেখান থেকে আমি প্রেরণা পেয়েছি আমাকেও গোল করতে হবে।’