বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভারতের যে মুসলিম নারী কুস্তিগিরকে কোনো পুরুষ হারাতে পারেনি

আপডেট : ০২ জুন ২০২৩, ২০:৫৬

১৯৫০ এর দশকে যখন ভারতে নারীদের কুস্তি লড়াটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, তখনই পুরুষ পালোয়ানদের একটা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বসেছিলেন হামিদা বানু। খবর বিবিসি।

ওই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ১৯৫৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুজন পুরুষ চ্যাম্পিয়ন কুস্তিগির হেরে গিয়েছিলেন হামিদা বানুর কাছে। ওই দুজনের একজন ছিলেন পাটিয়ালার, অন্যজন কলকাতার।

সে বছরই মে মাসে তৃতীয় লড়াইয়ে নামার জন্য হামিদা বানু বরোদার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন।

তার বরোদা আসার কথা জেনে শহরে একটা হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল। বরোদার বাসিন্দা, পুরস্কৃত খো-খো খেলোয়াড়, ৮০ বছর বয়সী সুধীর পরব সেই সময়ে স্কুলের ছাত্র ছিলেন।

তিনি বলছিলেন, ‘আমার মনে আছে, ওই লড়াইটা মানুষের কাছে খুব আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল সেই সময়ে। এর আগে এরকম কোনো কুস্তির লড়াইয়ের কথা আগে কেউ শোনে নি।’

হামিদা বানুর চ্যালেঞ্জ: যে পুরুষ কুস্তিতে হারাতে পারবে, তাকেই বিয়ে করবেন তিনি

কুস্তির লড়াই দেখার জন্য দর্শকদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল প্রাচীন ইউনানি লড়াইয়ের মতো করে। কিন্তু হামিদা বানু দর্শকদের কৌতুহল মেটানোর জন্য কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়েছিলেন।

সংবাদ এজেন্সি ‘এপি’ প্রতিবেদন করেছিল, ‘ওই লড়াই মাত্র এক মিনিট ৩৪ সেকেন্ড ধরে চলেছিল। হামিদা বানু বাবা পালোয়ানকে চিৎ করে ফেলেছিলেন।‘

রেফারি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে হামিদা বানুকে বিয়ে করার কোনও সম্ভাবনাই আর নেই বাবা পালোয়ানের। হামিদা বানুর প্যাঁচ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ বাবা পালোয়ানও ঘোষণা করেন যে সেটিই ছিল তার শেষ ম্যাচ।

ভারতের প্রথম পেশাদার নারী কুস্তিগির হিসাবে বিখ্যাত হয়ে ওঠা হামিদা বানু সাহসের সঙ্গে সেই সব চিরাচরিত কাহিনীগুলিকে বদলিয়ে দিচ্ছিলেন, যেখানে নারীদের দুর্বল হিসাবে দেখানো হত।

সেই সময়ে কুস্তিকে পুরুষদের ক্রীড়া বলেই দেখানো হত।

খাদ্য তালিকা

হামিদা বানু এতটাই চর্চিত নাম হয়ে উঠেছিলেন যে তার ওজন, উচ্চতা, খাদ্য তালিকা, সব কিছু নিয়েই আলোচনা হত। যা জানা যায়, হামিদা বানুর ওজন ছিল ১০৭ কেজি আর তিনি ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা ছিলেন।

প্রতিদিন তার খাদ্য তালিকায় থাকত সাড়ে পাঁচ কিলো দুধ, পৌনে তিন কিলো সুপ, সওয়া দুই লিটার ফলের রস, একটা গোটা মুরগি, প্রায় এক কিলো খাসির মাংস, ৪৫০ গ্রাম মাখন, ছয়টা ডিম, এক কিলো বাদাম, দুটো বড় রুটি আর দুই প্লেট বিরিয়ানি।

এটাও বলা হত যে তিনি দিনে নয় ঘণ্টা ঘুমাতেন আর ছয় ঘণ্টা কসরত করতেন।

হামিদা উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরে জন্ম নেন। তবে সালাম নামে এক পালোয়ানের কাছে কুস্তি শেখার জন্য তিনি আলিগড়ে চলে আসেন।

Untitled-6

এক স্থানীয় সাংবাদিক হামিদা বানুর প্রশংসা করতে গিয়ে লেখেন, ‘তার সঙ্গে কোনো নারীর লড়াই করার সুযোগ যে পাওয়া যায় না, তার কারণ প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাব, তাই তাকে বাধ্য হয়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলা করতে হয়।’

হামিদা বানুর আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে এটা জানা যায় যে প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা কম থাকার পাশাপাশি সমাজের প্রাচীনপন্থীদের ভাবনা চিন্তার কারণেও ঘর ছেড়ে তাকে আলিগড়ে গিয়ে থিতু হতে হয়েছিল।

পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়াই

১৯৫৪ সালে যখন হামিদা বানু তার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রেখেছেন, সেই সময়ে তিনি দাবি করতেন যে ততদিনে তিনি ৩২০টি কুস্তির লড়াই জিতে ফেলেছেন।

তার উৎকর্ষ এমন পর্যায়ে পৌঁছিয়েছিল যে সে যুগের গল্প কাহিনীতেও তার ক্ষমতার কথা উল্লেখ করা হত। এরকম গল্পও আছে যেখানে বিয়ের পাত্রের শক্তিকে হামিদা বানুর শক্তির সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।

এসব মিলিয়েই বরোদার মানুষের কাছে কৌতুহলের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিলেন হামিদা বানু।

সুধীর পরব বলছিলেন, এক নারী পালোয়ান কোনো পুরুষ পালোয়ানের সঙ্গে লড়াইতে নামছেন, এটাই ছিল কৌতুহলের মূল কারণ।

তার কথায়, ‘১৯৫৪ সালে মানুষ বেশ প্রাচীনপন্থীই ছিল। তারা এটা মানতে প্রস্তুত ছিল না যে এরকম কোনো কুস্তির লড়াই হতে পারে। শহরে তার আসার ঘোষণা করা হয়েছিল নানা ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে, যেগুলোতে হামিদা বানুর প্যাঁচের কায়দার উল্লেখ করা থাকত। ঠিক যেভাবে সিনেমার প্রচার হত, এই লড়াইয়ের প্রচারও সেভাবেই করা হয়েছিল।’

পরে বলছিলেন, ‘আমার মনে আছে হামিদা বানু প্রথমে ছোট গামা পালোয়ানের সঙ্গে লড়বেন বলে ঠিক ছিল। গামা পালোয়ান লাহোরের বিখ্যাত গামা পালোয়ানের নামের সঙ্গে মিল রেখেই এই ছোট গামা পালোয়ানের নাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ সময়ে ছোট গামা পালোয়ান হামিদা বানুর সঙ্গে কুস্তি লড়তে অস্বীকার করেন।’ 

কোনো কোনো কুস্তিগির মনে করতেন যে নারী পালোয়ানের সঙ্গে কুস্তি লড়া একটা লজ্জাজনক ব্যাপার। অন্যদিকে অনেক মানুষ ক্ষুব্ধও ছিলেন যে একজন নারী সবার সামনে পুরুষদের লজ্জাজনক ভাবে হারিয়ে চলেছেন।

মহারাষ্ট্রের কোলাপুর শহরে শোভা সিং পাঞ্জাবী নামে এক কুস্তিগিরের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছিলেন হামিদা বানু। লড়াইয়ে ওই পুরুষ কুস্তিগির হেরে যাওয়ায় কুস্তি-প্রিয় মানুষজন নানা কথা শোনায় হামিদা বানুকে, তার ওপরে পাথরও ছোঁড়া হয়।

ভিড় সামলাতে পুলিশ ডাকতে হয়েছিল। অনেক সাধারণ মানুষ তো হামিদা বানুর ওই জয়কে বানোয়াটও বলেছিল।তবে বিষয়টা সেখানেই থেমে থাকে নি।

লেখক রনবিজয় সেন তার বই ‘নেশন অ্যাট প্লে: হিস্ট্রি অফ স্পোর্ট ইন ইন্ডিয়া’-তে লিখেছেন ওই ম্যাচে খেলা আর মনোরঞ্জন মিশিয়ে ফেলা হয়েছিল। হামিদা বানুর লড়াইয়ের পরে সেখানেই দুজন এমন পালোয়ানের মধ্যে লড়াই হওয়ার কথা ছিল, যাদের একজন ছিলেন খোঁড়া অন্যজন দৃষ্টিহীন।

‘তবে সেই ম্যাচটা বিনোদনের জন্যই আয়োজন করা হয়েছিল। তবে ম্যাচটি বাতিল করে দেওয়া হয় কারণ দৃষ্টিহীন পালোয়ান দাঁতের ব্যথার কথা জানিয়েছিলেন, তাই তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।’

সেনের লেখা অনুযায়ী, ‘হামিদা বানুকে শেষ পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের কাছে অভিযোগ জানাতে হয় যে তার ম্যাচগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। দেশাইয়ের জবাব ছিল ম্যাচগুলো নারী- পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে বন্ধ করা হচ্ছে না। ব্যবস্থাপকদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে বলেই ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থাপকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছিল যে হামিদা বানুর বিপরীতে ডামি পালোয়ান বা কমজোর কুস্তিগির নামানো হচ্ছে।’

হামিদা বানু (সামনের সারিতে, এক শিশুকে কোলে নিয়ে), পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে

কেউ তাকে হারাতে পারেনি

সেই সময়ে এটা একটা ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল যে হামিদা বানু কম জোর পালোয়ানদের বিরুদ্ধেই ম্যাচে নামছেন।

মহেশ্বর দয়াল ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত তার বই ‘আলম-এ-ইন্তখাব -দিল্লি’তে লিখেছেন, ‘তিনি একেবারে পুরুষ পালোয়ানদের মতোই লড়াই করতেন। যদিও কেউ কেউ মনে করত যে হামিদা বানু আর পুরুষ পালোয়ানদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া আগে থেকেই হয়ে যেত যাতে পুরুষরা জেনেশুনেই হামিদার কাছে হেরে যেতেন।’

পুরুষ লেখকদের মধ্যেও কেউ কেউ তাকে নিয়ে মজা করতেন আবার তার কৃতিত্ব নিয়ে প্রশ্নও তুলতেন।

নারীবাদী লেখিকা কুর্রতুল এন হায়দর তার কাহিনী ‘ডালনওয়ালা’তে হামিদা বানুর প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘১৯৫৪ সালে মুম্বাইতে একটা সর্বভারতীয় কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে হামিদা বানু তার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিলেন।’

তিনি লিখছেন, ‘কোনো মায়ের বেটা ওই বাঘের বাচ্চাকে হারাতে পারল না আর ওই প্রতিযোগিতাতেই অধ্যাপক তারাবাঈও দারুণ কুস্তি লড়েছিলেন। ওই দুই নারী পালোয়ানের ছবি বিজ্ঞাপনেও ছাপা হয়েছিল। সেইসব ছবিতে তাকে গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরিহিত অবস্থায় দেখা গিয়েছিল। তার গলায় অনেক পদক ঝুলছিল। ওইভাবেই তিনি ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছিলেন।’

সেই সময়ের রেকর্ড থেকে দেখা যাচ্ছে যে ১৯৫৪ সালেই মুম্বাইতে বিখ্যাত রাশিয়ান কুস্তিগির ভিরা চেস্তলিনকে এক মিনিটেরও কম সময়ে পরাজিত করেন। সে বছরই হামিদা বানু ইউরোপীয় পালোয়ানদের সঙ্গে কুস্তি লড়তে ইউরোপ যাওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।

কিন্তু ওইসব স্মরণীয় কুস্তি ম্যাচগুলির পরে হঠাৎই হামিদা বানু কুস্তি জগৎ থেকে হারিয়ে যান। তারপরে হামিদা বানুর নাম শুধুই ইতিহাসের পাতায় নজরে আসে।
হামিদা বানো ও সালাম পালোয়ান

হামিদা বানুর সম্পর্কে আরও জানার জন্য আমি তার কাছের মানুষ আর আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তারা এখন দেশ আর বিদেশের নানা জায়গায় বসবাস করেন।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল যে ইউরোপ যাওয়ার যে ঘোষণা হামিদা বানু করেছিলেন, সেটাই ছিল তার কুস্তি ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার কারণ।

হামিদা বানুর নাতি ফিরোজ শেখ এখন সৌদি আরবে থাকেন। তিনি বলছিলেন, ‘মুম্বাইতে এক বিদেশী নারী কুস্তিগির এসেছিলেন হামিদা বানুর সঙ্গে কুস্তি লড়তে। তিনি দাদীর কাছে হেরে যান। তিনি দাদীকে ইউরোপে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দাদীর গুরু সালাম পালোয়ান ওই প্রস্তাবে রাজী হন নি।’

তিনি আরও বলছিলেন, ‘দাদীকে আটকানোর জন্য সালাম পালোয়ান লাঠি দিয়ে মেরেছিলেন, হাত ভেঙ্গে দিয়েছিলেন।’

সেই সময়ে তারা দুজনে আলিগড় থেকে মাঝে মাঝেই মুম্বাই আর কল্যানে আসতেন। সেখানে তাদের দুধের ব্যবসা ছিল।

কল্যান শহরে হামিদা বানুর প্রতিবেশী ছিলেন রাহিল খান। হামিদা বানুর ওই মার খাওয়ার ঘটনাটি নিশ্চিত করলেন মি. খান। রাহিল খান এখন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। তার কথায়, সালাম পালোয়ান আসলে মেরে তার পা ভেঙ্গে দিয়েছিলেন।

তিনি বলছিলেন, ‘আমার খুব ভালো করেই মনে আছে, তিনি সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারতেন না। পরে যদিও তার পা ঠিক হয়ে যায় কিন্তু বহু বছর পর্যন্ত তিনি লাঠি ছাড়া ঠিক মতো হাঁটতে পারতেন না।’

‘দুজনের মধ্যে সাধারণ একটা ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। সালাম পালোয়ান আলিগড়ে ফিরে যান কিন্তু হামিদা বানো কল্যান শহরেই থেকে যান,’ বলছিলেন খান।

রাহিল খানের কথায়, ‘১৯৭৭ সালে হামিদা বানুর নাতির বিয়েতে সালাম পালোয়ান আবারও একবার কল্যানে এসেছিলেন। তখন দুজনের মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়েছিল। দুই তরফই লাঠি বার করে ফেলেছিল।’

সালাম পালোয়ান বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। তার আত্মীয়রা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক নেতা আর সিনেমার তারকাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি নিজেও একজন নবাবের মতো জীবন কাটাতেন।

হামিদা বাননু বিয়ে করেছিলেন?

রাহিল খানের বাবা-মা শিক্ষিত মানুষ ছিলেন, তাই হামিদা বাউ মাঝে মাঝেই তাদের কাছে আসতেন। খানের মা ফিরোজ শেখ আর তার ভাই বোনেদের ইংরেজি পড়াতেন।

তিনি বলছিলেন, ‘সালামের সঙ্গে ঝগড়া-অশান্তি যতই বাড়তে লাগল, হামিদা বানু নিজের সঞ্চয় সুরক্ষিত রাখতে সেগুলো আমার মায়ের কাছে গচ্ছিত রেখে যেতেন।’

কিন্তু শেষ জীবনে বেশ অভাবেই কাটাতে হয়েছিল হামিদা বানুকে।কল্যানে নিজের বাড়ির সামনে খোলা মাঠেই হামিদা বানু বুন্দি বিক্রি করতেন।

আবার তিনি নিজের সন্তানদের আলিগড় বা মির্জাপুরে যেতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। সালাম পালোয়ানের মেয়ে সহারা আলিগড়েই থাকেন।সালাম পালোয়ান যখন মৃত্যুশয্যায়, সেই সময়ে একবার হামিদা বানু আলিগড়ে এসেছিলেন তাকে দেখতে।

মির্জাপুরে হামিদা বানুর আত্মীয়রা এই বিষয়ে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করছিলেন কিন্তু আলিগড়ে সালাম পালোয়ানের আত্মীয়রা কথা বলার সময়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছিলেন।

তারা দাবি করছিলেন যে হামিদা বানু আসলে সালাম পালোয়ানকেই বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু সেটা স্বাধীনতারও আগের ঘটনা।

কিন্তু সালাম পালোয়ানের মেয়ে সহারা হামিদা বানুকে নিজের মা বলতে চাইছিলেন না। পরে তিনি বলেন যে তিনি তার সৎমা ছিলেন। হামিদা বানো আর সালাম পালোয়ান বিয়ে করেছিলেন, সেটাও জানালেন তিনি।

সহারা বলছিলেন যে, হামিদা বানুর বাবা মা তার এই পুরুষদের খেলা কুস্তি লড়াতে প্রবল আপত্তি ছিল। সেই সময়ে সালাম পালোয়ান তাদের শহরে গিয়েছিলেন। তখনই হামিদাকে বাইরে বেরিয়ে আসার সুযোগ করে দেন সালাম।

তার কথায়, ‘বাবা মির্জাপুর গিয়েছিলেন কুস্তি লড়তে। সেখানেই হামিদার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। তিনি তাকে এখানে আলিগড়ে নিয়ে আসেন।’

‘তিনি আমার বাবার সহায়তা চেয়েছিলেন। বাবার সাহায্যেই তিনি কুস্তি লড়তেন আর দুজনে একসঙ্গেই থাকতেন,’ বলছিলেন সহারা।

হামিদা বানুর নাতি ফিরোজ শেখ তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পাশে ছিলেন। তিনি সহারা বা অন্য আত্মীয়স্বজনদের কথা মানতে চান না। তিনি বলছিলেন, ‘হামিদা বানু সালাম পালোয়ানের সঙ্গে থাকতেন ঠিকই, কিন্তু কোনোদিন তাদের বিয়ে হয় নি।’

‘আসলে দাদী আমার বাবাকে দত্তক নিয়েছিলেন। তবে আমার কাছে তো তিনি আমার দাদীই,’ বলছিলেন  শেখ। হামিদা বানু আর সালাম পালোয়ানের পরিবারের একেক রকম কথা বাদ দিলেও তাদের দুজনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ঠিক কী ছিল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

কিন্তু এটা ঘটনা যে ‘কোনো মায়ের বেটা পয়দা হয় নি’, যে ওই ‘বাঘের বাচ্চা’ নারীকে কুস্তিতে শেষ দিন পর্যন্ত হারাতে পেরেছে।

ইত্তেফাক/এফএস