বর্তমান অর্থনীতি প্রেক্ষাপট যদি বিচার করিয়া দেখা হয়, তাহা হইলে সেইখানে দুইটি বড় বিষফোড়া লক্ষ করা যাইবে। একটি হইতেছে—মূল্যস্ফীতি, আরেকটি ডলার-সংকট। এই দুইটি বড় সমস্যা সমাধানের কোনো পথ বা পদক্ষেপ এই বাজেটে বিশেষ লক্ষ করা যায় নাই। আর সেই কারণেই প্রস্তাবিত বাজেটকে সময়োপযোগী বলা যাইবে না। তবে সমস্যার সমাধান না করিতে পারিলেও আরও জটিল যাহাতে না হয় তাহা নিশ্চিত করিতে হবে। বরাবর আমরা যেই ধরনের আশ্বাস বাজেটে পাই, তাহাই এই বাজেটে মিলিয়াছে। আরেকটি বিষয় ভাবিবার আছে। যেমন বিশাল বাজেট ঘাটতি। প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। ইহার ফলে একদিকে যেমন রিজার্ভের ওপরে চাপ বাড়িবে, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির চাপও বাড়িবে। যে কৌশলে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হইয়াছে, তাহাতে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়িবার আশঙ্কা রহিয়াছে। কারণ বাজেটে পরোক্ষ করের নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। ইহা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের পণ্যের ওপর করারোপ করা হইয়াছে। কর কমাইবার তালিকাটি খুবই ছোট। আমরা জানি, সাধারণত বাজেট ঘাটতি এবং করারোপের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়া থাকে। বিনিয়োগের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তাহা কতটা অর্জিত হইবে উহা লইয়াও সংশয় রহিয়াছে। ইত্তেফাকের সঙ্গে আলোচনায় অর্থনীতিবিদরা বলিয়াছেন, এই মুহূর্তে আমাদের ডলার-সংকট হইল বড় একটি সংকট। এই সংকট হইতে বাহির হইয়া আসিতে হইবে। তাহা না হইলে বিনিয়োগ হইবে না। বাজেট ঘাটতির কারণে বরং ডলারের চাপটা আরও বাড়িবে।
বাজেট ঘোষণার পর হইতেই অনেক অর্থনীতিবিদ বলিতেছেন, প্রকৃত পক্ষে এই সময়ে যেই সকল বিষয় বাজেটে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তা প্রস্তাবিত বাজেটে আসে নাই। বাজেটের মাধ্যমে যেই ধরনের সংস্কারের সুযোগ ছিল, তাহাও উপস্থিত নহে। সামষ্টিকভাবে বাজেটটি সম্প্রসারণমূলক। কারণ, বাজেটে ঘাটতি বিগত অর্থবছরের চাইতে অনেক বেশি। বাজেট ঘাটতির পরিমাণ বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পে (এডিপি) বরাদ্দের কাছাকাছি। এডিপি যেমন বিশাল, বাজেট ঘাটতিও বিশাল।
ইহা ছাড়া বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে পরিকল্পনার কথা বলা হইয়াছে, তাহা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ নহে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমরা দেখিয়াছি রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চাইতে কম হইয়াছে, এই জন্য মোবাইল ফোন, কলম, সিলিন্ডার—এসব সামগ্রীর ওপর কর বসানোর বিকল্প ছিল না। যদিও ইহাতে জনমনে কিছুটা অসন্তোষ তৈরি হইয়াছে।
সম্প্রসারণমূলক বাজেট ভালো কি মন্দ, ইহা নির্ভর করে অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতির ওপর। যদি এখন আগের মতো ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) থাকিত, তাহা হইলে এই বাজেট অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক ও প্রবৃদ্ধি সহায়ক হতো। কিন্তু এখন দেশের অর্থনীতি একটি প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে রহিয়াছে। তাহার পরও আশা থাকিবে সরকার দক্ষতার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নে সফল হইবে। কারণ এই বাজেটের সঙ্গে অর্থনৈতিক অবস্থার নিবিড় সম্পর্ক রহিয়াছে।