শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

নান্দনিক রূপে ফিরছে ‘ঢাকা গেট’

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩, ১৩:৪৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দোয়েল চত্বর পেরিয়ে টিএসসি যেতে চোখে পড়বে মোগল আমলের নান্দনিক স্থাপত্য ‘ঢাকা গেট’। তৎকালীন বাংলার সুবেদার মীর জুমলা রাজধানী ঢাকার নিরাপত্তা ব্যূহ হিসেবে তৈরি করেন এই গেট।

বহু বছরের অযত্ন, অবহেলায় ধীরে ধীরে এর নান্দনিকতা হারিয়ে যেতে থাকে। মুছে যেতে থাকে এর শেষ চিহ্নটুকুও। তবে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে আবারও নান্দনিক রূপে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

প্রত্নতত্ব বিশেষজ্ঞ ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষক স্থপতি ড. আবু সাঈদের নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ দলের সংস্কারের জন্য নতুন একটি নকশা তৈরি করেছে। ওই আদলে মূলত এর সংস্কারকাজ করা হবে।

এ বিষয়ে ড. আবু সাঈদ বলেন, এটাকে যদিও মীর জুমলার গেট বলা হয়ে থাকে, কিন্তু তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। ব্রিটিশ আমলে ম্যাজিস্ট্রেট ডয়লির সময় এই গেট তৈরি করা হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রমাণ মেলে। এই গেটের এখন তিনটি অংশ দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু শুরুতে এমনটি ছিল না, শুরুতে রাস্তাটি এক লেনের হওয়াতে গেটের দুটি অংশ ছিল। ১৯৬০ এর দিকে পাকিস্তান আমলে রাস্তাটি যখন দুই লেন করা হয় তখন একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়। তিন নেতার মাজারের অংশটি নতুন করে তৈরি করা হয়। দুই রাস্তার মাঝের পিলারটি সেই ভাঙা অংশেরই একটি অংশ।

তিনি বলেন, আদি যে চুন সুরকির প্লাস্টার দিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছিল, সেই একই উপকরণ দিয়েই আমরা এটি সংস্কার করব। আদি ডয়লির অংশটা থাকবে, ৬০ দশকের অংশটাও থাকবে। ওসমানী উদ্যান থেকে মীর জুমলার কামানটাও নতুন করে এনে স্থাপন করা হবে।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, মোগল আমলে বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে ব্যবহার করা হতো এই তোরণ। সেই সময় এর নাম ছিল ‘মীর জুমলার গেট’। পরে কখনো ‘ময়মনসিংহ গেট’ কখনো ‘ঢাকা গেট’ এবং অনেক পরে নামকরণ করা হয় ‘রমনা গেট’।

শুক্রবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গেটের তিনটি অংশের একটি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের দিকে, মাঝখানের অংশ পড়েছে সড়ক বিভাজকের ওপর এবং অপর অংশটি রয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে তিন নেতার মাজারের পাশে। আর সংস্কারকর্মীরা ব্যস্ত তাদের কাজে। সংস্কারকাজে গেটে পর্যাপ্ত পরিমাণ লাইটিং করা হবে। পাশাপাশি গেটের আশপাশে মানুষের বসার ব্যবস্থা থাকবে।

সিটি করপোরেশন জানায়, সংস্কার পরবর্তী দেখাশোনার জন্য নিরাপত্তা প্রহরী রাখা হবে।

আগামী নভেম্বরের মধ্যে এর সংস্কারকাজ শেষ হবে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, গত ৫০ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করে আসছি ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য। ইতিহাস ঐতিহ্য যদি সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত না হয়, তাহলে শহরের প্রাণ থাকে না। আমরা কখনো কোনো মেয়রকে এই বিষয়ে রাজি করাতে পারিনি। তারা সবাই নির্মাণের দিকে আগ্রহী ছিলেন। বর্তমান মেয়র ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষা করার একটি বড় প্রকল্প নিয়েছেন। সেই প্রকল্পের অংশ হিসেবেই এখন ঢাকা গেট ও নর্থব্রুক গেট সংরক্ষণের কাজ চলছে।

তিনি বলেন, এই কাজটি শেষ হলে সেখানে একটি মনোরম পরিবেশ তৈরি হবে। মানুষ তা দেখতে যাবে। ঢাকা গেট দেখে ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে। ১৮৩০ সালের দিকে এটি রমনা গেট হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন মীর জুমলা যখন আসাম অভিযান করেন তখন এই জায়গা থেকে তিনি যাত্রা শুরু করেছেন তাই এটাকে মীর জুমলা গেটও বলা হয়।

ঢাকা গেট সংস্কারের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক ২১নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, মোগল আমলের স্থাপত্য অনেক বিদেশিরা দেখতে আসেন। কিন্তু তারা খুঁজে পান না। চারিদিকে দালানকোঠার আড়ালে এই স্থাপত্য প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। অনেক স্থাপত্যই এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। এই ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো যদি আমরা সংস্কার করতে পারি তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্ম ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানবে পাশাপাশি এখানে আসতে বিদেশিদের আগ্রহ গড়ে তোলা যাবে।

ইত্তেফাক/আরএজে