শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাজেটে আয়করের প্রস্তাবনা ও কদম আলীর খোলা চিঠি

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩, ১৬:৩৯

কদম আলীর সাবজেক্ট ছিল ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা কিন্তু সে কেনো জানি আয়কর আইন নিয়ে কথা বলছে? সে এবারের বাজেটের কিছুই বুঝতে পারছে না। ভ্যাট আইন নিয়ে কথা বলতে ভেতরের অনেক কিছু বুঝতে বা জানতে হবে। ভ্যাট আদায়ের বিশাল টার্গেট দেওয়া হয়েছে কিন্তু সেটা আদায়ের কোনো নির্দেশনা নেই। কীভাবে আইনের প্রয়োগ করা হবে সেটা বোঝার অপেক্ষায় বা জানতে সময় নিচ্ছে বলে, আয়কর আইনের সহজ প্যাঁচ, যা জটিল করা হচ্ছে সেটা বোঝার চেষ্টা করছে বা উত্তর খুঁজছে।

বাজেটে প্রস্তাব করা হলো বর্তমানে সাধারণ করযোগ্য আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হলো। সহজ ভাষায় বললে, চাকুরিজীবি ব্যক্তি শ্রেণির কিছু সুবিধা বাদ দিয়ে কারো বাৎসরিক আয় সাড়ে তিন লাখ টাকা হলে তাকে কোনো ট্যাক্স দিতে হবে না। আবার সিটি কর্পোরেশন ও জেলা শহর ভেদে সর্বনিম্ন কর দেয়া আছে। সরকারি ৪৪ সেবা পেতে আয়কর দাখিলের স্লিপ নেওয়ার জন্য যাদের ক্ষেত্রে এই দুইটার কোনোটাতে না পড়লে, তাদের জন্য নতুন কর হার হলো দুই হাজার টাকা। কোন আইনের এই তিন ধরনের সর্বনিম্ন করদায় কি যৌক্তিক?

গত অর্থ বছরে সর্বমোট ৩২ লাখ আয়কর রিটার্ন দাখিল হয়, যেখানে বলা হয়েছিল যাদের কোনো আয় নাই কিন্তু বিভিন্ন প্রয়োজনে টিন নেওয়ার দরকার হয়েছে তারা শূন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এরকম আয়কর রিটার্ন জমা পরে প্রায় আট লাখ, যা মোট আয়কর রিটার্ন এর চার ভাগের এক ভাগ। এই আট লাখ রিটার্ন দখলকারীদের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নিলে সরকারের অধিক আয় হবে ১৬০ কোটি টাকা। সরকার কি মাত্র এই টাকার জন্য আইনের এই কঠোরতা বা অযৌক্তিক ভাবে আইন করলেন।

কদম আলী ও সরকার জানে মানুষ কর দিতে চান না, বহু ভাবে নিতে হয় কিন্তু তাই বলে এভাবে? আইনের মূল থিম থেকে একেবারে দূরে গিয়ে? আইন যেভাবে করা হোক না কেন সেটা সংবিধানের কোন ধারায় পরিপন্থী হতে পারবে না। সব কিছুতে ন্যায় বিচার পাওয়ার ও চাওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করা আছে। তাহলে যে কেউ চাইলে সেই পথে হাঁটতে পারেন। জনকল্যাণ মূলক কাজ বা উন্নয়নশীল দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে দরকার অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা। আইন তখনই কঠোরভাবে প্রয়োগ করেন যখন সহজ পন্থায় কাজ না হয।

সরকার চাইলে আইন নিশ্চিত করতে ও করদাতা বৃদ্ধি করতে নিম্নরূপ ভাবে কদম আলীর প্রস্তাব গুলো বিবেচনায় নিতে পারেন, অবশ্য কেউ দয়া করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত লেখাটা নিয়ে যান। একমাত্র তিনি এটা বিবেচনা করতে পারেন। এক্ষেত্রে কদম আলীর প্রস্তাব-

১. আট লাখ শূন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা ব্যক্তিদের সহযোগিতায় কিছু প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিতে পারেন, যারা উনাদের সহযোগিতা করবেন উনাদের সম্পদ বিবেচনা ও উৎসে কর্তন করা সমন্বয় করে মিনিমাম ট্যাক্স এ নিয়ে আসতে। ও আরো অধিক করদাতা পাওয়া যেতে পারে।

  ২. বিভিন্ন আয়কর সার্কেলে উৎসে কর কর্তনের প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যে রিটার্ন দাখিল করা হয় সেখান থেকে উৎসে আয়কর কর্তন করা সমস্ত পার্টির তথ্য কিছু প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করে তাদের রিটার্ন দাখিলের নিশ্চিত করা হয় তাহলে আরো অধিক করদাতা বের হবে।

৩. বাংলাদেশে বিভিন্ন ভাবে নানা প্রকার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে থাকে এবং সেই সময়ে তাদের থেকে উৎসে আয়কর কর্তন করা হয়। সরকার চাইলে তাদের একটা তালিকা করে এনবিআর এর তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের দ্বারা তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল কনফার্ম করতে পারেন।

৪. এলাকা ভিত্তিক যে সমস্ত ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান আছে তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করার জন্য সেই সমস্ত এলাকায় প্রতিনিধি নিয়োগ করা যেতে পারে যাদের কাজ হবে সেই এলাকার করযোগ্য ব্যাবসায়ীদের সহনীয়ভাবে আয়করের আওতায় নিয়ে আসা ও রিটার্ন দাখিলে সহযোগিতা করা।

এই কাজ গুলো করতে গেলে কমপক্ষে দশ হাজার লোকের কর্মংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তারা যে কর আদায় করবে, সেটার একটা অংশ তাদের দেওয়া হবে। যদিও সরকার নতুন আইনে এজেন্ট নিয়োগ করার বিধান করেছেন। যদি ওই এজেন্টের এই সমস্ত কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে আগামী নভেম্বর মাসে আমরা কমপক্ষে ৯০/১০০ লাখ লোককে আয়করের আওতায় আনতে পারব।

একটা বাস্তব গল্পঃ ছোট বেলা থেকে কদম আলীর মাথায় প্রচুর ঘন কালো চুল ছিল বা আছে। তার বড় ভাই একদিন তাকে বললেন তোর এই চুলের রহস্য হলো তোর মাথায় বুদ্ধির জায়গায় আছে গরুর গোবর, যা সার হিসাবে কাজ করে তোর মাথার চুল ঘন ও কালো করে। কদম আলী পারিবারিক ভাবে অন্যদের তুলনায় কম পড়ালেখা করত বলে এ ধরনের কথা শুনত, তারপরও থেমে থাকত না, যেমন থেমে নেই রাজস্ব আদায়ের জন্য সরকারের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের সেটার ভীতি দূর করার কার্যক্রম।

লেখকঃ ভ্যাট বিশেষজ্ঞ, তিনি ভ্যাটবন্ধু নামে পরিচিত।

 

ইত্তেফাক/এসসি