আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য প্রস্তাবিত ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ১ শতাংশ অর্থাৎ ৭ হাজার ৬ শত ১৭ কোটি টাকা সংস্কৃতিখাতে বরাদ্দের দাবি জানিছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
বুধবার (৭ জুন) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার হলে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানান সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস।
মতবিনিময় সভার শুরুতেই সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মো. আহ্কাম উল্লাহ্ বলেন, আমাদের প্রত্যাশা হলো সংস্কৃতি, অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়সমূহ আমাদের বক্তব্যের গুরুত্ব ও যৌক্তিকতা অনুভব করে যথাযথ ব্যবস্থা ও উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, আমরা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলোম কিন্তু তিনি অবহেলা করেছেন। আজকে বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থায় সংস্কৃতি একটি অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবহেলিত বিষয় হয়েছে। অথচ যেই বাংলাদশের রাজনীতির ভিত্তি হচ্ছে সংস্কৃতি, সেই বাংলাদেশে সংস্কৃতি চর্চার জন্য কোন রকম সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নেই। এই নেই কথাটা বলছি এই কারণে, সরকারের যতটুকু অর্থ বরাদ্দ থাকে তার যে ব্যবস্থাপনা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় করে সেই খানে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষকে সম্পৃক্ত করার কোন প্রচেষ্টাই নেই। ঢাকাতে কিছু অনুষ্ঠানের জন্য কিছু থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়, ফান্ডিং করা হয়, সচিব মন্ত্রীরা এসে বক্তৃতা করেন। এমনি করেই তাদের কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ থাকে। তবে এখনও সময় আছে ঘুরে দাঁড়ানোর যদি বাংলাদেশকে বাঁচাতে চান।
বাজেটে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, সময়ের পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু সংস্কৃতির বাজেটের পরিবর্তন হচ্ছে না। প্রগতিশীল সমাজ নির্মাণের জন্য রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। কারণ সংস্কৃতিবিহীন জাতি অন্ধকারে ধাবিত হবে। সংস্কৃতি ছাড়া কোন জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। কোন মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে ন।
দাবিগুলোর ব্যাপারে গোলাম কুদ্দুস আরো বলেন, “এই দাবিগুলো আজকের নয়, গত বছরের। আমার কাছে যদি ৫ বছর আগের কোন ডকুমেন্ট থাকতো তবে সেটিই উপস্থাপন করতাম। কারণ আমাদের দাবিগুলো একই রয়েছে।”
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে সরবরাহকৃত আটটি লিখিত দাবির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে। জাতীয় বাজেটের ১ শতাংশ সাংস্কৃতিক খাতে বরাদ্দ দেওয়া। এই বরাদ্দের বড় একটি অংশ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, সংগঠনের অনুদান, শিল্পীসম্মানী এবং বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যয় করা।
এছাড়াও রয়েছে উপজেলা পর্যায়ে একজন শিল্পকলা অফিসার নিয়োগ, বেতার-টেলিভিশনসহ সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান ও অনুষ্ঠানে শিল্পী, যন্ত্রী ও কারিগরী কর্মীদের যুগোপোযোগী আর্থিক সম্মানী প্রদান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশনসমূহের স্থায়ী দপ্তর নির্মাণের জন্য মতিঝিল ক্রীড়া পল্লীর অনুরূপ জায়গা বরাদ্দ দেওয়া, সংস্কৃতিপল্লী নির্মাণ ইত্যাদি।
সভায় বরেণ্য নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ বলেন, সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের সচিব হয়ে কেউ আসতে চায় না। কারণ টাকা নাই। অর্থ এখানে মুখ্য বিষয়। গত বছরের স্টেটমেন্ট ছিলো সেটারই একটা অনিুলিপি দিতে হয়েছে। বাংলাদেশে যখন প্রথম প্ল্যানিং কমিশন ছিলো, নুরুল ইসলাম সাহেব তিনি কিছুদনি আগে মারা গেছেন, তখন এই দেশে ইকোনমিক্স বলে একটা বিষয় ছিলো, এরপরে সামরিক শাসন আসার পরে ইকনমিক্স নাই, এখন গণবিজ্ঞান, এরা হচ্ছে ধনবিজ্ঞানী, কিভাবে ধন লুণ্ঠন করা যায়, কিভাবে ধন পাচার করা যায়, সরকারকে সেই উপদেশ দিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে গ্রাম থেকে রাজধানী পর্যন্ত সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে তোল।
বাজেট বরাদ্দের জন্য আয়োজিত মতবিনিময় সভায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক শ্যামল দত্ত, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মী।
আলোচনা সভায় বিভিন্ন জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশনের ব্যক্তিবর্গ ও সাংস্কৃতিক কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।