বরিশাল সিটি নির্বাচনে ১৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম। নির্বাচিত হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ইশতেহারের বাস্তবায়ন করার কথাও জানান হাতপাখা প্রতীকের এই প্রার্থী। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বেলা ১১টায় নগরীর বান্দরোডের একটি রেস্তোরায় এ ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।
ফয়জুল করিম বলেন, দীর্ঘদিনের জমে থাকা জঞ্জাল, সীমাহীন অনিয়ম, দুর্ভোগ, মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি নগরবাসীকে বিষিয়ে তুলেছে। জনমনে শান্তি নেই, স্বস্তি নেই, নিরাপত্তা নেই। তাই নগরজীবনে স্বস্তি, শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। ভিক্ষুকদের অসহায়ত্ব দূরীকরণ ও জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ নগরীতে কেউ অনাহারে থাকবে না।
ইশতেহারে ফয়জুল করিম বলেন, খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, ভিক্ষুকদের অসহায়ত্ব দূরীকরণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নগরীর জনবহুল এলাকায় পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক আধুনিক গণশৌচাগার নির্মাণ, প্রতিটি রাস্তায় পর্যাপ্ত সড়কবাতির ব্যবস্থা করা হবে। পথচারীদের জন্য ফুটপাতগুলো প্রশস্ত ও আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা হবে। রাস্তাঘাটের অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে বছরের শুরুতে নগরীর সঙ্গে সম্পৃক্ত সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সভা করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে। ভোলা থেকে বরিশালে গ্যাস–সংযোগ আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নিরাপদ বাসস্থান ও কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্সসহ সব ধরণের লাইসেন্স ফি সহনশীল পর্যায়ে আনা হবে। স্বল্প খরচে কোনো প্রকার বিড়ম্বনা ছাড়াই নতুন বিল্ডিং প্লান পাশ করা হবে। টেকসই ও উন্নত রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং সবুজায়ন ও শোভা বর্ধন করতে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য আধুনিক মানের ড্রেন নির্মাণ ও খাল খনন করা হবে। পরিকল্পিত পানি নিষ্কাশন পাম্পের মাধ্যমে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন করা হবে।
স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে তিনি বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অসহায়, গরিব ও ছিন্নমূল মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। গরিব নারীদের গর্ভকালীন চিকিৎসা বিনামূল্যে করা হবে। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হবে।
পরিচ্ছন্ন নগর গড়ার অঙ্গীকার করে ফয়জুল করিম বলেন, ‘ডোর টু ডোর’ বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। প্রতিটি এলাকায় ঢাকনাসহ ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগেই সব ধরনের বর্জ্য নিরাপদ দূরত্বে নির্দিষ্ট স্থানে অপসারণ করা হবে। মহল্লাভিত্তিক মশক ও কীট নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
ইশতেহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, মাদক, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলদার ও সিন্ডিকেটমুক্ত নগর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বিদেশগামী জনশক্তির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান ও সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নারী নির্যাতন, যৌতুক প্রথা ও ইভটিজিং বন্ধে তিনি বলেন, নারীদের পৃথক কর্মসংস্থানের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হবে। শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নারীদের জন্য পৃথক মার্কেট গড়ে তোলা হবে। নগরের প্রধান সড়কগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে কমিউনিটি পুলিশ ও নৈশপ্রহরী নিয়োগ করে নগরবাসীর নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।
এছাড়াও ইসলামী আন্দোলনের এই প্রার্থী বলেন, দেশীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা ও অপসংস্কৃতির আগ্রাসন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামাজিক মূল্যবোধ পরিপন্থী নয়, এমন সব ক্রীড়া ও শিল্প-সংস্কৃতি বিকাশের সুযোগ দেওয়া হবে। সব ধর্মের মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সব ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘সম্প্রীতি পরিষদ’ গঠন করা হবে। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি ‘নগরবিশেষজ্ঞ কমিটি’ গঠন করা হবে। নগরের ওলামায়ে কেরাম, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের সমন্বয়ে ‘পরামর্শ পরিষদ’ গঠন করা হবে।