বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণার শেষ মুহূর্তে বিরামহীন প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন প্রার্থীরা। দিনভর বৃষ্টি উপেক্ষা করেই তারা ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে স্ত্রী এবং আত্মীয়স্বজনরা যোগ দিয়েছেন। সভা ও সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকায় প্রার্থীরা নিজেরা ও তাদের পক্ষে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিভক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের সহায়তায় গণসংযোগ করেন। হ্যান্ডবিল বিতরণসহ ব্যানার ও পোস্টারে তিল ধারণের ঠাঁই নেই নগরীর প্রাণকেন্দ্রে। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক রয়েছে।
যদিও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী শুক্রবার (৯ জুন) গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছেন। সরকারের দু-একটা গোয়েন্দা সংস্থা একজন বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করীমের পক্ষ থেকে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে তার নির্বাচনী প্রচারণাকালে হামলার ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আইনি ব্যবস্থা চেয়ে আবেদন এবং তাদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেওয়ার জন্য পুলিশের তিন সাব-ইন্সপেক্টরকে নির্বাচনী দায়িত্ব না দেওয়ার জন্য পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন দিয়েছেন।
এদিকে শনিবার (১০ জুন) রাত ১২টা থেকে সব ধরনের প্রচার ও প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির জানান, ১২ জুন শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালনের জন্য ৩০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
অন্যদিকে নির্বাচন উপলক্ষে সব কেন্দ্র ও কক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপন কাজ শুরু হয়েছে। আজকের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রচারণা:
শুক্রবার দিনভর বৃষ্টি উপেক্ষা করে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা গণসংযোগ করেছেন। জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে মসজিদ কেন্দ্রিক প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন ৭ জন মেয়র, ১১৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থীসহ কর্মী ও সমর্থকরা। জুমার নামাজ আদায় শেষে কর্মীরা যেমন মসজিদের সামনে লিফলেট বিলি করেছেন, তেমনি প্রার্থীরাও চেষ্টা করেছেন নামাজের খুতবার শুরুতে নিজের কথা ভোটারসহ নগরবাসীর সামনে তুলে ধরতে। আবার অনেকে নেতাকর্মীকে দেখা গেছে মসজিদে প্রার্থীর বার্তা ভোটারদের সামনে তুলে ধরতে।
আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) নগরীর চৌমাথা এলাকার মারকাজ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। সেখানে তিনি নামাজের শুরুতে মুসল্লিদের কাছে দোয়া চান এবং ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানান। নামাজ শেষে তিনি ভোটারসহ মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে সেখান থেকে বের হয়ে চৌমাথা ও এর আশপাশের এলাকায় নগরবাসী ও সমর্থকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস নগরীর জামে কসাই মসজিদে নামাজ আদায় করেন। নামাজের শুরুতে তিনি ভোটার ও মুসল্লিদের কাছে দোয়া ও ভোট চান। এ সময় তিনি মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, আমি নগরপিতা নই, আমি আপনাদের মধ্যে নগর সেবক হতে চাই।
নামাজ শেষে নগরীর গির্জা মহল্লা এলাকায় গণসংযোগ ও কুশল বিনিময় করেন। অন্যদিকে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম নগরীর চকবাজারে জামে এবায়েদুল্লাহ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। সেখানে তিনি মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধু কলোনিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মিডিয়া উপকমিটির সদস্য কে এম শরীয়তউল্লাহ।
এছাড়া টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন নগরীর মুসলিম গোরস্থান সংলগ্ন জামে মসজিদে, হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান নগরীর মহাবাজ এলাকার একটি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। এর আগে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি নামাজ শেষে ওই এলাকায় গণসংযোগও করেন তারা।