মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

থানা হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ

অতিরিক্ত এসপিসহ ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ আদালতের

আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৩, ২৩:২৪

নাটোরে থানা হেফাজতে আসামিদের নির্যাতনের অভিযোগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় লালপুর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোসলেম উদ্দীন এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশও দেওয়া হয়।

অভিযুক্তরা হলেন-বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজিব, লালপুর থানার ওসি মো. উজ্জ্বল হোসেন, উপ-পরিদর্শক জাহিদ হাসান, ওমর ফারুক ও এক কনস্টেবল।

ভুক্তভোগীরা হলেন-পাবনার ঈশ্বরদীর ফতেহ মোহাম্মদপুর গ্রামের মো. সোহাগ হোসেন (৩০), মোকাররমপুর গ্রামের মো. সালাম (৩১), নাটোরের বড়ইগ্রামের নগর গ্রামের মো. শামীম মোল্লা (২৯) ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বারাদি গ্রামের মো. রাকিবুল ইসলাম (৩০)।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী আব্দুল্লাহ বিশ্বাস বলেন, বুধবার নাটোরের লালপুরে এক অটোরিকশা ছিনতাই মামলায় সালাম, শামীম ও সোহাগকে লালপুর আমলি আদালতে হাজির করা হয়। আসামিদের মধ্যে সোহাগ হোসেনের স্বীকারোক্তিমূলক জবাবনবন্দি রেকর্ড ও অন্য আসামিদের কারাগারে পাঠানোর জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ওমর ফারুক। এ সময় চার আসামির মধ্যে তিনজনই আদালতের কাছে নির্যাতনের অভিযোগ করেন।

সোহাগ হোসেন তার জবানবন্দিতে বলেন, রোববার (৯ জুলাই) রাত ৯টার দিকে ওসি উজ্জ্বল হোসেন তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে চোখ বেঁধে মারধর শুরু করে। তারপর মঙ্গলবার থানায় পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন ওসি তার পায়ের তালুতে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন এবং অণ্ডকোষে লাথি মারেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফ আল রাজিব তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকার করতে বলেন। নাহলে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হবে এবং এমন মামলা দেবেন যাতে কোনোদিন বউ-বাচ্চার মুখ দেখতে না পারে।

অপর আসামি সালাম তার জবানবন্দিতে বলেন, রোববার রাতে গ্রেপ্তারের পর তাকে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হয়। এরপর ভোর পাঁচটার দিকে তাকে থানায় নিয়ে আসে। সেদিন মারধর না করলেও মঙ্গলবার ওসি থানায় এসেই থাপ্পড় মারতে থাকেন। তারপর থানার ওপর তলায় নিয়ে এসআই জাহিদ হাসান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ওমর ফারুক তার আঙুলের ওপর টেবিল রেখে চাপ দিতে থাকেন। এতে সেলিমের কনিষ্ঠ আঙুল, মধ্যমা আঙুল ও অনামিকা আঙুলে মারাত্মক আঘাত লাগে। তারপর বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে টাখনুর ওপর পর্যন্ত লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এরপর বুধবার আবার তাকে পেটানো হয়।

আসামি শামীম মোল্লাও আদালতে দেওয়া তার জবানবন্দিতে নির্যাতনের অভিযোগ করে বলেন, সোমবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর রাস্তায় মারতে মারতে থানায় নিয়ে আসে। মঙ্গলবার সকালে থানার ওপর তলায় নিয়ে একজন কনস্টেবল, এসআই জাহিদ হাসান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা ওমর ফারুক চোখ বেঁধে টেবিলের নিচে মাথা রেখে লাঠি দিয়ে প্রচণ্ড মারধর করেন। তারপর দুই পা বেঁধে পায়ের তালুতে পেটান ও বুকে বারবার লাথি মারতে থাকেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকের দেওয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অভিযোগকারী তিন আসামির মধ্যে মো. সালাম এবং মো. শামীম মোল্লার শরীরে নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতা পান আদালত। অপর আসামি সোহাগের শরীরে দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন নেই বলে চিকিৎসক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।

লালপুর থানার ওসি উজ্জল হোসেন বলেন, থানা হেফাজতে আসামি নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

নাটোরের পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান বলেন, আদালতের আদেশের কথা শুনেছি। আদেশের কপি পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ইত্তেফাক/এবি/পিও