শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

মৎস্যভাণ্ডার কিশোরগঞ্জের হাওরে কমছে মাছ

আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৩, ১৩:১৫

মৎস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল। জেলার ৬৪ হাজার ৩০৬ হেক্টর আয়তনের ১২২ ছোট-বড় হাওর থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২২ হাজার মেট্রিক টন মাছ পাওয়া যায়। এছাড়া প্রচুর শামুক ও ঝিনুকসহ বিভিন্ন জলজপ্রাণি উৎপন্ন হয় এ হাওরাঞ্চলে। তবে প্রতি বছরই হাওরের মাছ কমছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, স্থায়ী অভয়াশ্রম না থাকায়, হাওরে ক্ষতিকর চায়না দুয়ারী জালের ব্যবহার, পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন, ইজারা প্রথা, সেচ দিয়ে মাছ শিকার, জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার ও হাওরে শুল্কমাসে পানিশূন্য হয়ে পড়ায় ক্রমেই এ মৎস্যভাণ্ডারে মাছের উৎপাদন কমছে।

এ হাওরগুলোতে মাছ ধরে জীবিকানির্বাহ করে হাজারো জেলে পরিবার। রোদ, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে জীবিকানির্বাহের তাগিদে জেলেরা দিনরাত হাওরে মাছ ধরেন। কেউ ডিঙি নৌকা নিয়ে কেউ ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে মাছ ধরেন। তবে দিন দিন হাওরে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় চিন্তিত তারা। বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন অনেকেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবেশগত কারণে হাওরে মাছের প্রজনন সমস্যা হচ্ছে। অনেক প্রজাতির মাছ এরই মধ্যে বিলুপ্তি হয়েছে। আরও অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার, সেচে মৎস্য নিধন, নির্বিচারে পোনা মাছ নিধনও হাওরে মাছ উৎপাদন কমে যাওয়ার জন্য দায়ী।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জের হাওরে ৮০ থেকে ১২০ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যায়। হাওরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে এবছর জেলায় ৪৫টি বিলে নার্সারি করা হচ্ছে। যেখানে এক থেকে দেড় মাস বয়সী মাছের পোনা লালনপালন করে পুরো বিলে ছাড়া হবে। জেলেদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।  এছাড়া জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্রচার ও প্রচারণা চালাচ্ছেন বিভিন্ন উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তারা। এগুলো ঠেকাতে নিয়মিত হাওরে অভিযান চালানো হচ্ছে।

আলীমুদ্দিন নামে এক জেলে বলেন, প্রকৃত জেলেদের মধ্যে জলমহাল ইজারা দিতে হবে। মৎস্য সমবায় সমিতিগুলোতে প্রতীকী নাম ব্যবহার করে একশ্রেণির অসাধু লোক জলমহাল ইজারা নিয়ে আড়ালে জলমহালের সুবিধা ভোগ করে। অর্থ দিয়ে জলমহালের মালিক বনে যায়। হাওরের জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তাহলে হাওর আবার মাছে ভরে উঠবে।

জেলে অখিল বর্মন বলেন, বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস এই তিন মাস প্রতিবছর মাছ ধরা বন্ধ রাখতে পারলে অনেকাংশে মাছের বংশবিস্তার বৃদ্ধি পাবে। কারণ এ সময় মাছ ডিম ছাড়ে। মৎস্য আইন কাগজে আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই, এটিরও বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে হাওরের মাছ বাড়বে।

নিকলীতে মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে নৌকা নিয়ে ছুটছেন জেলেরা। ছবি: ইত্তেফাক

নিকলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপ বলেন, হাওরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে প্রতি বছরই সরকারিভাবে মাছ ছাড়া হয়। এই ছোট মাছগুলোই আমাদের কিছু জেলে চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে ধরে। আর এই অবৈধভাবে মাছ ধরা বন্ধ করতে পারলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হবে। এছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণেও হাওরে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

নিকলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন কারণে হাওরে মাছের উৎপাদন কম হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া, কারেন্ট জালের ব্যবহার ও সম্প্রতি চায়না দুয়ারী জালের ব্যবহারের কারণে হাওরের মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। কারেন্ট জাল ও চায়না জালের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। যারা বিল ইজারা নেন তারা যেন বিল সেচে মাছ না ধরে সেই প্রচারণা চালাচ্ছি। প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মৎস্য আইন বাস্তবায়নে কাজ করছি।

তিনি বলেন, জলমহাল প্রকৃত জেলেরা অর্থাৎ নিবন্ধিত জেলেরা পাচ্ছে কি না তা আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।

ইত্তেফাক/আরএজে