মাত্র ১০০ কোটি টাকার জন্য ১৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে হবিগঞ্জের শাহজীবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত বছর ২৯ মে অগ্নিকাণ্ডে ৩টি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকেই এটি বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফা চিঠি চালাচালি হলেও এটি সংস্কারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।
এদিকে মাত্র ১৬ মেগাওয়াট চাহিদার এ জেলায় বিদ্যুতের অভাবে লোডশেডিং হচ্ছে দিনের ৩ ভাগের একভাগ। আবার কখনও লোডশেডিং হয় দিনের অর্ধেক সময়। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহলে।
ব্যবসায়ী মহিবুর রহমান টিপু বলেন, আমরা ঠিকই বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছি। কিন্তু নিয়মিত বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।
ইজিবাইকচালক সজিব মিয়া বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে রাতে ইজিবাইক চার্জ দিতে না পারায় সংসার চালানো নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।
ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ যাওয়ার কারণে ব্যবসা করতে পারছি না। নির্মাণ
শ্রমিক লিলু মিয়া বলেন, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে কাজ করতে পারছি না। শ্রমিকদের অধিকাংশ সময় বসিয়ে রেখে টাকা দিতে হচ্ছে।
হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান শামীম বলেন, জেলার সরকারি সবচেয়ে বড় ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনায় বিকল হয়ে ১ বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে। অথচ এ জেলা শিল্পাঞ্চলে সমৃদ্ধ একটি জেলা। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিকল থাকার কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এতে ব্যবসা বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
শাহজীবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী শফি উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুনঃসংস্কার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করা যায় অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এটি চালু করা সম্ভব হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি সূত্র জানায়, এটি সংস্কার করতে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কেটি টাকা ব্যয় হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হলে ১ থেকে ২ মাসের মধ্যেই এ টাকা আয় করা সম্ভব হবে বলেও সূত্রটির দাবি।
শাহজীবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র জানায়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হয় ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এর উদ্বোধন হয় ২০১৭ সালের ১ মার্চ। গ্যাস থেকে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এখানে রয়েছে ২টি গ্যাস টারবাইন ও ১টি স্টিম টারবাইন। ২টি টারবাইনে ১১০ মেগাওয়াট করে ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় গ্যাস থেকে। বাকি ১১০ মেগাওয়াট ১টি স্টিম টারবাইনের মাধ্যমে উৎপাদন হয়। এটিতে ব্যবহার করা হয় ২২০ মেগাওয়াটের পোড়া গ্যাসের তাপ। এখানে আর নতুন গ্যাসের প্রয়োজন হয় না। এটি কম্বাইন্ড সাইকেল না করলে ২২০ মেগাওয়াটের পোড়া গ্যাসের তাপ পুরোটাই বাতাসে ছেড়ে দিতে হতো। এমন সাশ্রয়ী একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ১৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ২০২২ সালের ২৯ মে আগুন লেগে এর ৩টি ট্রান্সফরমারই পুড়ে যায়। এরপর থেকেই এটি বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। বর্তমানে এখানে চলছে ৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি কেন্দ্র। ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১টি বড় ট্রান্সফরমার এবং ২টি ছোট ট্রান্সফরমার (অক্সিলারী) আগুনে পুড়ে গেছে। এগুলো সংস্কার করে পুনরায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করতে ৮০ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মতো খরচ হতে পারে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হলে জেলার পাশাপাশি দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে অনেকটা সহায়ক হবে।