অবশেষে বহু প্রতীক্ষার পর সিলেট নগরীর বুক চিরে সুরমা নদীর ওপর স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী ক্বিন ব্রিজের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকালে বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্রিজের কাজ শুরু করে।
ব্রিজ সংস্কারের মেয়াদ দুই মাস ধরা হলেও এর আগেই কাজ শেষ হবে বলে রেলওয়ে বিভাগ আশাবাদী। এর আগে বুধবার (১৬ আগস্ট) থেকে উত্তর ও দক্ষিণ সুরমার সংযোগকারী ব্রিজটির দুই প্রবেশ মুখে ব্যারিকেড দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। ব্রিজটি উত্তর সুরমা ও দক্ষিণ সুরমা এলাকার সংযোগ রক্ষা করে আছে।
ব্রিজটি বন্ধ থাকলেও যান চলাচলের জন্য এই ব্রিজের অদূরে কাজীরবাজর সেতু ও উপশহরের কাছে সেতু দুটি রয়েছে। প্রায় ৮৫ বছরের পুরানো এই ব্রিজ নড়বড়ে হয়ে পড়লে বেশ কয়েক বছর আগেই ব্রিজ দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে হালাকা যার চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়।
সওজ সূত্র জানায়, ঐতিহাসিক এ ক্বিন ব্রিজ সংস্কারের জন্য ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সেতুটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন হলেও এটি সংস্কার করবে রেলওয়ের সেতু বিভাগ। তবে ঐতিহাসিক এই ব্রিজটি দেখভাল করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ।
জোট সরকারের আমলে ব্রিজটিতে মরিচা ধরে একেবারে নাজেহেল অবস্থা হয়। তখন এটি সংস্কার করে এলএডি লাইট লাগিয়ে দৃষ্টিনন্দন রূপ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সেখানে সুরামার তীর সংরক্ষণ করে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে তৈরি করা হয়। তাই এখানে পর্যটকদের ভিড় জমে প্রতিদিন বিকালে। কিন্তু যত্নের অভাবে ক্রমেই ব্রিজটির সৌন্দর্য্য হারায় ও দুর্বল হতে থাকে।
ব্রিটিশ আমলে লোহার কাঠামোর দৃষ্টিনন্দন এই ব্রিজটি নির্মাণ করে রেলওয়ে বিভাগ। টানা দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় এবং তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর ‘মাইকেল ক্বিন’এর নামে নামকরণ হয় ‘ক্বিন ব্রিজ’। প্রায় ৯ দশক ধরে সচল এই ব্রিজটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর ওপর প্রথম সেতু।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ক্বিন ব্রিজ সিলেট তথা দেশের একটি ঐতিহ্য। সিলেটের পরিচয়বহনকারী স্থাপত্য এটি। এটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানী সৈন্যরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে গ্রেনেড মেরে ভেঙে ফেলা হয়। সেতুটি ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রথম দফা সংস্কার করে। এরপর আর বড় ধরনের কোনো সংস্কার হয়নি।
গত ২৫ জুলাই এই ব্রিজ দিয়ে চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। তবে নানা কারণে কয়েক দফা পিছিয়ে গত বুধবার থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ করে ব্রিজের কাজ শুরু হয়।
সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সংস্কার শেষে আবারও জনসাধারণের জন্য এটি খুলে দেওয়া হবে। সংস্কারে পরেও ক্বিন ব্রিজ দিয়ে বড় ধরণের যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হবে না।
রেলওয়ে বিভাগের পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত জানান, বুধবার দুপুর সকাল থেকে ব্রিজটির ওপর ও নিচে একযোগে কাজ শুরু হয়। মেয়াদ দুই মাস থাকলেও আশা করছি দুই মাসের আগেই কাজ শেষ করতে পারবো।
২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঝুকিপূর্ণ সেতুটির দুই দিকে লোহার বেষ্টনী দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে সিটি করপোরেশন। তবে নাগরিকদের প্রতিবাদের মুখে বন্দের কিছুদিন পরেই হালকা যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হয়।