বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক কারখানা: আতঙ্কে কেরানীগঞ্জবাসী, উদাসীন প্রশাসন

আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৩, ১৭:০২

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার গদাবাগ ও আতাশুর আবাসিক এলাকায় এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, রসুলপুর  হযরতপুর ও হাসনাবাদে অনুমোদনবিহীন অবৈধ অন্তত শতাধিক রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা রয়েছে। ওই সব কারখানা ও গুদামের রাসায়নিক তেজস্ক্রিয়ায় আশপাশের হাজার হাজার পরিবারের নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্ট ও চোখ জ্বালাপোড়াসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রচার হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

১৫ আগস্ট ভোর ৪টায় গদাবাগ এলাকায় অনুমোদনবিহীন অবৈধ কেমিকেল গুদামে রাসায়নিক বস্তা বিস্ফোরণে পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের শিশু ও নারীসহ ঘটনাস্থলে চার জন ও পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা সোহাগ হোসেন মারা যান। ১৮ আগস্ট রাতে ১০ বছর বয়সী তার শিশুকন্যা তানহা আক্তার রোজা মারা গেছে। এ ঘটনার পর থেকে গুদামের মালিক হাজি আবুল হাসনাত পলাতক।

স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। তিনি এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন এবং  ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্ত কেমিকেল গুদামের  মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে কেরানীগঞ্জের আবাসিক এলাকার সকল রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম উচ্ছেদেরও নির্দেশ দেন। 

ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নিহত পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের ১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সল বিন করিমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তারা আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে ডিসি অফিসে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গদাবাগ ও আতাশুর  আবাসিক এলাকায় প্রায় শতাধিক অবৈধ রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম রয়েছে। এলাকাবাসী সেই পরিবেশেই স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে বহু প্রতিবেদন ছাপা হলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। বরং পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে গুদাম ও কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। সেজন্য মাশুলও গুনছে এলাকাবাসী।

২০১৪ সালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার হাসনাবাদ এলাকায় একটি ওষুধ কোম্পানির রাসায়নিক কারখানার বায়োপ্লান্ট পাইপ ফেটে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়লে এলাকার প্রায় শতাধিক মানুষ ও গৃহপালিত পশু পাখির ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফায়ার সার্ভিসের দুই সদস্যের মৃত্যু হয় ও ১০ সদস্য আহত হন। এ দুর্ঘটনার পরও আবাসিক এলাকায় কারখানাটি চালু আছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ চন্দ্র ঘোষ জানান, জেল হাজতের পাশ ঘেঁষে একটি রাসায়নিক কারখানা রয়েছে। ওই  কারখানার বিষাক্ত তেজস্ক্রিয়তায় হাজার হাজার কারাবন্দি, কারারক্ষী এবং কর্তৃপক্ষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভুগছেন। কারখানাটা সরিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক চিঠি দিয়েও প্রতিকার পাননি।

অ্যাডভোকেট শিউলী আক্তার নামে এক নারী অভিযোগ করেন, হযরতপুর এলাকায় তার একটি খামার বাড়ি রয়েছে। তার পাশের  রাসায়নিক কারখানা থেকে বিষাক্ত বর্জ্য তার বাগানবাড়িতে ফেলায় ইতোমধ্যে একাধিক গাছ মরে গেছে। তিনিও কারখানাটি সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ বলেন, রোহিতপুর এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীর পাশে এক হাজার বিঘা জমিতে কেমিক্যাল পল্লি গড়া হয়েছে। রাসায়নিক ব্যবসায়ীরা সেখানে স্থানান্তর হতে গড়িমসি করছেন। এ ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের নজরদারি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ইত্তেফাক/আরএজে