জবাই করার আগে গবাদি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ দেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক নেই দিনাজপুরের প্রথম শ্রেণির পৌরসভা ফুলবাড়ীতে। নিয়ম অনুযায়ী পৌরসভা নিয়োজিত ভেটেরিনারি সার্জন কিংবা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের এই সনদ দেওয়ার কথা। বাস্তবে এ কাজটি তদারকি করছেন ফুলবাড়ী পৌরসভার এক জন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কখনো পৌরসভার স্যানেটারি ইন্সপেক্টরের মৌখিক সনদেই পশু জবাই করা হয়ে থাকে। গতকাল সোমবার ফুলবাড়ী পৌরসভার পৌরবাজারের মাংসহাটি, রেল ঘুটটি, বাসস্ট্যান্ড, নিমতলা মোড় ও গড় ইসলামপুর বউবাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া যায়।
খাসির মাংস কিনতে আসা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, মাংস কিনেছি। কিন্তু খাসি সুস্থ নাকি অসুস্থ তা জানি না। সাধারণ ক্রেতারা উচ্চমূল্য দিয়েও ভেজালমুক্ত মাংস কেনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পৌর বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ভোররাতে সবার অগোচরে গরু-ছাগল ও ভেড়া জবাই হয়। ফলে আমরা কী সুস্থ নাকি অসুস্থ, পশুর মাংস টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছি তা কেউই আমরা জানি না।
গবাদি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ছাড়পত্র চিকিৎসক দিয়েছেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে পৌর বাজারের খাসির মাংস বিক্রেতা লালু মিয়া ও মো. মোরশেদ বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পৌরসভাকে একটি খাসির জন্য ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং গরুর জন্য ৫০ টাকা দিতে হয়। জবাইয়ের আগে কোনো পশুচিকিত্সক পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে আসেন না। তাই স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই পশু জবাই ও মাংস বিক্রি করে আসছে সবাই। এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
পৌরসভার স্যানেটারি ইন্সপেক্টর মুরাদ হোসেন সরকার বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে তার সঙ্গে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানেটারি ইন্সপেক্টরও বিষয়টি দেখভাল করছেন। তবে জবাইয়ের আগে পশুর ডাক্তারি পরীক্ষা করা প্রাণিসম্পদ বিভাগের দায়িত্ব। মাংস বিক্রেতারদের পশু জবাইয়ের আগে পশুসম্পদ দপ্তর থেকে ডাক্তারি পরীক্ষা করার জন্য বলা হলেও কোনো মাংস বিক্রেতাই তা করছেন না। তারা রাত ৩টায় পশু জবাই করে বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। ফলে কোনটি সুস্থ আর কোনটি অসুস্থ পশু, তা বলা যাচ্ছে না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এটা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কাজ না। কসাইখানায় আনা গবাদি পশু চিকিৎসক পরীক্ষানিরীক্ষার পর তার দেওয়া সনদের ভিত্তিতেই জবাই করার বিধান রয়েছে। তবে সে দায়িত্ব পালন করবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। পৌর সভায় পশু চিকিৎসক না থাকলে সে বিষয়ে মাংস বিক্রেতারা জবাইয়ের আগে তাদের পশু প্রাণিসম্পদ দপ্তরে আনলে তা পরীক্ষা করে সনদ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ আলী মিরু বলেন, পশু জবাই করার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার মতো জনবল আমাদের নেই। এজন্য তৃতীয় শ্রেণির এক জন কর্মচারীকে দায়িত্ব দেওয়া আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মাদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।