শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

কিশোরগঞ্জের ৮ গ্রামে এক বছরে হয়নি কোনো বাল্যবিয়ে: ওয়াল্ড ভিশনের জরিপ 

আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ২১:৫২

কন্যা শিশুর স্বপ্ন পূরণে বড় বাঁধা বাল্যবিয়ে। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে যায়। বিয়ের বিষয়টি বুঝে ওঠার আগেই তাদের সংসার ভেঙে যায়। এমন ভাগ্য বিড়ম্বনায় অনেকের ঠাঁই হচ্ছে বাবার বাড়িতে। আবার অনেকে অত্যাচার নির্যাতনে বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথও।
 
এ অন্ধকার জীবন থেকে কন্যা শিশুদের আলোর পথের এগিয়ে নিতে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ‌‘আমার গ্রাম আমার দায়িত্ব, শিশুর জীবন হোক বাল্যবিয়ে মুক্ত’। এ মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন ও জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ৪১টি মাধ্যমিক ও ২৫টি মাদারাসাগামী ২৯ হাজার শিক্ষার্থী এখন আলোর পথে, স্বপ্নের পথে। এর নেপথ্যে সরকারের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাতিঘর হিসেবে কাজ করছে কিশোরগঞ্জ এপি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ।

তারা বাল্যবিয়ে মুক্ত উপজেলা গঠনে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা প্রসাশন, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গসহ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পর্যায়ের প্রধানদের সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে বাল্যবিয়ের কুফল ও প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। যা অংশগ্রহণকারীরা একই কাতারে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। যার ফলশ্রুতিতে বাল্যবিয়ে নিয়ে মানুষের প্রচলিত ধ্যান ধারণা পাল্টিয়ে আচরণগত পরিবর্তন এসেছে। যদিও করোনাকালীন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় দেশের অন্য এলাকায় মতো এ উপজেলায় বাল্যবিয়ের হার আশঙ্কাজনভাবে বেড়ে যায়। যা বর্তমান সময়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টার অনুপ্রেরণামূলক যাত্রায় বাল্যবিয়ের হার এখন নিম্নগামী। আর বাল্যবিয়ের কুফল জানতে পেরে শিক্ষার্থীরা শপথ নেয় লেখাপড়া শেষ না করে অল্প বয়সে বিয়ের পিড়িঁতে বসবে না। অন্য কেউকে বসতে দিবেন না।
 
ওয়াল্ড ভিশন সূত্র জানায়, এক জরিপে তাদের কর্ম এলাকার ২০টি গ্রামের মধ্যে ১২টি গ্রামে তালিকাভুক্ত ১২ থেকে ১৮ বছরের মেয়ে শিশু রয়েছে এমন ৪ হাজার ৫৮৫টি পরিবারের মাঝে জরিপ করে। সেই জরিপের ফলাফলে দেখা যায় ২০টি গ্রামের মধ্যে ৮টি গ্রামে বিগত ১ বছরে কোনো বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়নি। অবশিষ্ট ১২টি গ্রামে বাল্যবিয়ের হার ১০.৯৭%।
 
ওয়াল্ড ভিশনের কিশোরগঞ্জ উপজেলা শাখার ম্যানেজার পিকিং চাম্বুগং বলেন, বাল্যবিয়ে হচ্ছে একটি সামাজিক ব্যাধি। বাল্যবিয়ে একটি শিশুর জীবনে অভিশাপ হয়ে আসে। বাল্য বিয়ে বন্ধ করার জন্য ওয়াল্ড ভিশন কাজ করে যাচ্ছে। সামাজিকভাবে সকলের সহযোগিতাই পারে বাল্য বিয়ে রোধ করতে। আপনাদের জরিপে দেখা গেছে, ১২টি গ্রামে বাল্য বিয়ের হার ১০.৯৭%। তাহলে গোটা উপজেলায় বাল্য বিয়ের হার কত প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা ছোট্ট পরিসরে জরিপটি চালিয়েছি। বৃহৎ পরিসরে করলে আরও বেশি হবে। এছাড়া ৮টি গ্রামে গত একবছরে কোনো বাল্য বিয়ে হয়নি। সে বিষয়টি লক্ষ্য করলে বাল্য বিয়ে রোধ করা সম্ভব।
 
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম নুরুল আমিন শাহ বলেন, অত্যন্ত উৎসাহজনক বিষয় হলো কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রতিটি মাধ্যমিক ও মাদ্রাসায় বাল্যবিয়ে মুক্ত গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যা ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ২৯ হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ভিশনের উদ্দ্যোগে প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার বাল্যবিয়ে মুক্ত সেশন পরিচালনা করা হচ্ছে। সর্বোপরি  বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হলে উপজেলা প্রশাসন, সমাজসেবা ও মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, কাজী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তাহলে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা সম্ভব। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আগের চেয়ে উপস্থিতির হার বেড়েছে। যা বাল্য বিয়ের ওপর বিভিন্ন সেশন পরিচালনা করায় এতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হওয়ায় বাল্য বিয়ের হার কমছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, বাল্য বিয়ের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে কোনো জরিপ নেই। বাল্যবিয়ে মুক্ত হয়েছে এমন বলা যাবে না। তবে বাল্যবিয়ে বন্ধে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপজেলায় পর্বের থেকে অনেকাংশে বাল্যবিয়ে কমে এসেছে। বাল্যবিয়ের খবর পেলে তাৎক্ষণিক আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে দিন দিন বাল্য বিয়ের হার কমেছে। 

ইত্তেফাক/পিও