বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বুনো পথের এক দুরন্ত ছবিয়াল

আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ২৩:৫৮

পেশায় একজন তথ্য নিরাপত্তা গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু চোখে-মুখে ভিন্ন নেশা। সময় পেলেই বের হয়ে পড়েন অজানা, অদেখার সন্ধানে। নদী-পাহাড়-জঙ্গল পেরিয়ে ছুটে চলেন দুর্গম সব পথে-প্রান্তরে। শিহরণ জাগানো এক-একটি মুহূর্তকে ফ্রেম-বন্দি করে নিতেই যেন এ প্রয়াস। যার গল্প বলছি, তিনি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলমাস জামান।

পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে তথ্য নিরাপত্তা গবেষক বিশেষজ্ঞ হিসাবেও কাজ করছেন। কিন্তু এতকিছুর মাঝেও একটি ভিন্ন পরিচয় আছে আলমাসের। তিনি বন্যপ্রাণীর ছবি তুলেন, ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার। তার ক্যামেরায় ধরা পড়েছে দেশের বিলীন হয়ে যাওয়া এমন কিছু বিরল পশুপাখি, যাদের দেখা মিলেছে গত কয়েক দশকে মাত্র হাতেগোনা দু-এক বার। ছবিগুলো রীতিমত আলোচনা সৃষ্টি করেছে ছবিয়াল পাড়ায় ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মাঝে।

এক মফস্বল শহরে বেড়ে উঠা এই তরুণের দৃষ্টি কীভাবে গভীর জঙ্গলে গিয়ে আটকালো সেই গল্প জানিয়েছেন তিনি ইত্তেফাক প্রজন্মের সঙ্গে আলাপচারিতায়।

আলমাস জামান

আলমাস বলেন, ‘২০১৪ সালের কথা। শখের বসে একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনলাম। কিন্তু সমস্যা হলো ক্যামেরা হাতে নিয়ে কোথাও বের হতে বা মানুষের মাঝে গিয়ে ছবি তুলতে পারতাম না, খুব সংকোচ লাগত। তাই ল্যান্ডস্কেপ ছবি তুলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম, আর সুযোগ পেলে পাখির ছবিও তুলতাম। একবার এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে যাই। সেখানে ফসলের মাঠে ছবি তুলছিলাম, এমন সময় একটি স্টর্ক জাতীয় বড় পাখি ধরা পড়ে ক্যামেরার সাটারে। আমি ধরে নিই পাখিটা এশীয় শামুকখোল জাতীয় কিছু একটা হবে। কিন্তু বাড়ি ফিরে ইন্টারনেট ও কিছু বইয়ে মিলিয়ে দেখি এটি হলো কমন ক্রেন বা পাতি সারস পাখি। যাকে গত ১১০ বছরে শুধুমাত্র রাজশাহীর সীমান্ত সংলগ্ন চরাঞ্চলে দেখা গিয়েছে দু-তিন বার। একদিন পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হকের সাথে কথা বলে পুরোপরি নিশ্চিত হই সেটি সত্যিই কমন ক্রেন পাখি ছিল।’

আলমাস জামানের তোলা কিছু ছবি

এ ঘটনা আলমাসের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সবার ধারণা—দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করে বহু স্থানে ঘুরে ছবিটি তুলতে হয়েছে আলমাসকে। এ বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে গিয়েই আলমাসের ভিতরে একটা দায়িত্ববোধ তৈরি হয়। তখন তিনি ইন্টারনেট, বিভিন্ন বইপত্র ও গবেষণাপত্র থেকে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর তালিকা, বৈশিষ্ট্য, আবাসস্থল সম্পর্কে জানতে শুরু করেন। কয়েকজন বন্যপ্রাণী গবেষকদের সাথে পরিচিত হন এবং বাংলাদেশে কখন কোন স্থানে কোন প্রাণীর দেখা মিলতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর সময় ও সুযোগ বুঝে সহধর্মিণী মেহেনাজ মৌ বা কাছের দু-একজন বন্ধুকে নিয়ে বের হয়ে পড়েন বিভিন্ন স্থানে। মাইলের পর মাইল ঘুরে ছবি তুলেন সেখানকার পশু-পাখির।

আলমাসের ভাগ্য বরাবরই প্রসন্ন। কমন ক্রেনের মতো আরও কিছু দুর্লভ পশু-পাখি প্রত্যাশিত কিংবা অপ্রত্যাশিত ভাবেই যেন ধরা দিয়েছে তার ক্যামেরায়।

সম্প্রতি রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে ‘পাথ অব প্যাশন’ শিরোনামে আলমাসের ফটোগ্রাফির একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বেশ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে প্রদর্শিত প্রতিটি ছবি।

ইত্তেফাক/এসটিএম