শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বাইরে মাস্ক, ভেতরে অবৈধ ব্যবসা

আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:২৭

রাস্তার পাশে দোকানে থরে থরে সাজানো রয়েছে রং বেরংয়ের হাজারো মাস্ক। পুরো দোকান মাস্কে ঘেরা থাকলেও সামনের দিকের একটি অংশ দিয়ে খুব সহজেই দোকানে প্রবেশ করতে পারতো দোকানটির মালিক। প্রায় এক ফুট কাউন্টারের ফাঁকা জায়গা দিয়েই বেচাকেনা করতো সে। দোকানটি নিয়ে রহস্য ছিল পুরো এলাকার মানুষের কাছে।

সেই রহস্যেরই পর্দা ফাঁস করলেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুর রহমান। রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কৌতুহলবশে পৌরসভার পুরাতন ব্যাংকের মোড়ে রহস্যে ঘেরা ওই দোকানটি চোখ এড়ায়নি তার। দোকানের মালিককে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলে ওঠে- ‘এখানে মাস্ক ছাড়া অন্য কিছু বিক্রি হয় না।’ দীর্ঘক্ষণ কথা বলার পর ইউএনওর ওই দোকানদারকে সন্দেহ হয়। সঙ্গে থাকা একজন আনসার সদস্যকে কৌশলে তল্লাশির আদেশ দেন তিনি (ইউএনও)। এর মধ্যেই সুযোগ বুঝে দোকানটির মালিক পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট থানায় খবর দেওয়া হলে পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সাব্বির রহমান ও পরিদর্শক (অপারেশন) সঞ্জয় সাহার যৌথ অভিযান শুরু হয়। এ অভিযান রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

‘এখানে মাস্ক ছাড়া অন্য কিছু বিক্রি হয় না’

মাস্কের দোকান লাগোয়া কালীগঞ্জ রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ (আরআরএন) পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যায়য়ের চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবক বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে গিয়ে আমার ছেলে ২০ টাকা দিয়ে ওই দোকান থেকে পুকেমন নামের এক ধরনের কার্ড কিনে নিয়ে আসে। যা অনেকটা তাসের আদলে তৈরি। আমি আমার ছেলেকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই সে আমাকে এটি খেলার নিয়ম শিখিয়ে দেয়। খেলার নিয়ম অনেক তাস খেলার মতো। ওইদিন থেকে আমি আমার ছেলেকে চোখে চোখে রাখি এবং এর কুফল সম্পর্কে বলি। তখন সে ওই কার্ডগুলো ছিড়ে ফেলে ও আর কোনো দিন কিনবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেয়।’

ওই অভিভাবক আরও বলেন, ‘দোকানটি যেহেতু উপজেলার ঐতিহ্যবাহী একটি সরকারি স্কুলের পাশে রয়েছে, সেই কারণে বিষয়টি নিয়ে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে আমি কথা বলি। পাশাপাশি ইউএনওর আকস্মিক এ অভিযানে খুশি হয়েছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালীগঞ্জ আরআরএন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, এক অভিভাবকের কাছে বিষয়টি শুনে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার চেষ্টা করি।

দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘স্কুলের পাশে হওয়া সত্ত্বেও আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। কারণ খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছি স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের ছত্রছায়ায় দোকানটির মালিক মাস্কের আড়ালে অবৈধ সব জিনিসপত্র বিক্রি করতো।

ইত্তেফাক/এইচএ