বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

দাঁতের ব্যথায় খেতে পারছেন না সু চি, পাচ্ছেন না জরুরি চিকিৎসা

আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৫৩

মিয়ানমারের আটক সাবেক প্রধানমন্ত্রী অং সান সু চিকে (৭৮) অসুস্থতা সত্ত্বেও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমনকি তিনি প্রচণ্ড দাঁতের ব্যথায় কাতরাচ্ছেন, খেতে পারছেন না কিছুই। সু চির ছেলে কিম অ্যারিস এমনটাই দাবি করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

কিম বলেন, জান্তা সরকারের কাছে তার মায়ের জন্য জরুরি চিকিৎসার আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

তবে জান্তার একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, সু চি ভালো আছেন এবং সামরিক ও বেসামরিক ডাক্তাররা তার চেক-আপ করছেন।

২০২১ সালে ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন সু চি। এরপর থেকেই কারাগারে আছেন তিনি। জুলাই মাসে তাকে কারাগার রাজধানী নেপিদোতে স্থানান্তরিত করা হয় গৃহবন্দী অবস্থায়। তবে তাকে কোথায় রাখা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।

বিবিসি বার্মিজকে পাঠানো এক বার্তায় কিম অ্যরিস বলেছেন, ‘একজন অসুস্থ বন্দীর প্রস্তাবিত চিকিৎসা সেবার প্রবেশাধিকার অস্বীকার করা নির্মম এবং নিষ্ঠুর।’

৪৬ বছর বয়সী কিম বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তার ভাষ্য, তার মা প্রচণ্ড অসুস্থ। মারাত্মক মাথা ঘুরানো অনুভব করছেন তিনি এমনকি বমিও করেছেন।

সু চির দাঁতের ব্যথা সম্পর্কে কিম বলেন, যাদের এমন বেদনাদায়ক মাড়ির রোগ আছে তারা স্বাভাবিকভাবেই খেতে পারেন না। তারওপর যদি উপযুক্ত চিকিৎসা না দেওয়া হয় তবে তাদের স্বাস্থ্য সম্পূর্ণ ঝুঁকিতে থাকে।’

সু চির ঘনিষ্ঠরা বিবিসিকে জানিয়েছেন তার দীর্ঘস্থায়ী মাড়ির অসুখ রয়েছে। তিনি নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন। বর্তমানে তার মাড়ির সমস্যা আরও বেড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, তাকে নরম খাবারের পাশাপাশি দাঁতের ব্যথা উপশমের জন্য ওষুধযুক্ত জেলি খেতে দেওয়া হয়েছে।

মিয়ানমারের নির্বাসিত জাতীয় ঐক্য সু চির মতো সকল রাজনৈতিক বন্দীদের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন জান্তাকে চাপ দেওয়া হয়।

অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে প্রায় পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধ চলছে। যার ফলে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সামরিক বাহিনী বিমান হামলার মতো কৌশল ব্যবহার করে নির্মমভাবে বিরোধীদের দমন করেছে, যার ফলে প্রচুর বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির সামরিক নেতাদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে অধিকার গোষ্ঠীগুলো।

বিশ্ব নেতারা অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছেন এবং মিয়ানমারের জেনারেল ও সামরিক মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।

একসময় গণতন্ত্রের আইকন হিসেবে বিবেচনা করা সু চিকে তার রাজনৈতিক কর্মজীবনে গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য সমাবেশ করার সময় একাধিকবার আটক করা হয়েছিল।

কিন্তু তার মেয়াদকালে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উপেক্ষা করার অভিযোগের কারণে দেশের ডি ফ্যাক্টো নেতা হিসেবে তার ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গণে নষ্ট হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ায় চলমান আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনেও মিয়ানমারের অভ্যুত্থান সংকট আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় ব্লকের নেতারা দেশে অব্যাহত সহিংসতার জন্য জান্তার নিন্দা করেছেন। এই অভ্যুত্থানের পর টানা দুই বছর মিয়ানমারকে আঞ্চলিক বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

ইত্তেফাক/এসএটি