বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফাই বিটা সাই’ পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশি অধ্যাপক

আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:১৬

অভিনব আবিষ্কারের জন্য গত বছর ‘ফাই বিটা সাই’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন ড. জসিম উদ্দিন। এ বছরেও টানা দ্বিতীয়বারের মতো একই অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন আমেরিকার ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক। এর আগে তিনিই প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন।

ক্যান্সার নির্ণয় এবং উন্নত চিকিৎসার একটি ন্যানোমেডিসিন আবিষ্কারে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তাকে এই পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। রোগ নির্ণয় এবং থেরাপি দুই বিভাগ মিলেই এই পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি।

ক্যানসার গবেষণায় ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার করে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছেন আমেরিকার ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বাংলাদেশি গবেষক ড. মো. জসিম উদ্দিন। ক্যানসারের নির্দেশক কক্স-২ এনজাইমকে চিহ্নিত করতে তিনি আবিষ্কার করেছেন এক বিশেষ রাসায়নিক যৌগ। যার দরুণ মানব দেহে ক্যানসার আক্রমণের প্রাথমিক ধাপেই রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

জসিম উদ্দিনের আবিষ্কৃত ‘ফ্লোরকক্সিব-এ’ যৌগটি ইতিমধ্যেই ক্যানসার শনাক্তকরণে সফল হয়েছে। ‘ফ্লোরকক্সিব এ’ হলো প্যাটেন্টেড (Patent No. US 2020/0254910) এর একটি যৌগটি মানব দেহে প্রবেশ করলে ক্যানসার আক্রান্ত কোষে অতিমাত্রায় নিঃসারিত হওয়া ‘কক্স-২’ নামের এনজাইমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আক্রান্ত কোষকে আলোকিত করে। ফলে খুব সহজেই চিহ্নিত করা যায় ক্যানসার আক্রান্ত কোষ।

প্রবাসে থেকেও বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় গবেষণা নিয়ে সহযোগিতা করতে আগ্রহী তিনি। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে গবেষণায় বিনিয়োগের জন্য সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা উচিত বলে তিনি মনে করেন তিনি।  স্বপ্ন দেখেন, একদিন বাংলাদেশ থেকেই বেরিয়ে আসবে রসায়ন ও চিকিৎসাশাস্ত্র সহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী।

এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার। গবেষণা, শিক্ষকতা আর জীবন-সংসারের রসায়ন নিয়ে কেটে গেছে বহু বছর। খুব শীঘ্রই এই প্রযুক্তিটি মানবদেহে প্রয়োগের আশা করছেন ড. জসিম উদ্দিন। মানব কল্যাণে তার গবেষণা অবদান রাখবে—সর্বশক্তিমানের কাছে তার এটুকুই চাওয়া।

মো. জসিম উদ্দিনের জন্ম নোয়াখালী জেলার বাটাইয়া গ্রামে। ঢাকার রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে। সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নের পর জাপানের শিনসু ইউনিভার্সিটিতে অর্গানিক কেমিস্ট্রির ওপর পিএইচডি করেন।

ছোটবেলা থেকেই তার জৈব যৌগের প্রতি আগ্রহ ছিল। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই তিনি শিক্ষকদের সহযোগিতায় জৈব যৌগ নিয়ে নানা গবেষণা শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে জসিম উদ্দিন প্রথমে চাকরি করেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক প্ল্যান্টে। বর্তমানে তিনি ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক (গবেষণা) হিসেবে কর্মরত আছেন।

ইত্তেফাক/এসটিএম