বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না কিডনি রোগীরা’

আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:১৫

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে দেশের অধিকাংশ কিডনি রোগী বাংলাদেশে সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। দেশেই কিডনি রোগীদের চিকিৎসা সহজলভ্য এবং চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে। দেশের তরুণ ডাক্তারদেরকে কিডনি রোগের চিকিৎসায় আধুনিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন (বিআরএ) আয়োজিত তিনদিনের ১৭তম ইন্টারন্যাশনাল সাইন্টিফিক কনফারেন্সে কিডনি বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী সমুদ্র তীরের একটি রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে এই কনফারেন্স শুরু হয়।

কনফারেন্সে চিকিৎসক নেতারা বলেন, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কমবেশি কিডনি রোগে ভুগছে। এতো বিপুল সংখ্যক কিডনি রোগীর চিকিৎসায় দেশে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন রয়েছে। কিডনি চিকিৎসা খুবই জটিল ও ব্যয়বহুল এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে সহজলভ্য নয়। তাই অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাচ্ছে। রোগীদের বিদেশমুখী প্রবণতা কমাতে এবং দেশে কিডনি রোগীদের চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধির বিকল্প নেই। বিভাগীয় শহর ছাড়াও জেলা শহর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কিডনি চিকিৎসা সহজলভ্য করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। এতে সহযোগী হচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাও।

তারা বলেন, সাইন্টিফিক কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদেশি রিসোর্স পার্সন ও বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে দেশের নবীন কিডনি চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যাতে তারা দেশের সাধারণ ও গরীব কিডনি রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন।

১৭তম ইন্টারন্যাশনাল সাইন্টিফিক কনফারেন্স। ছবি: সংগৃহীত

এই বিজ্ঞান সম্মেলনে বক্তারা কিডনি রোগীদের বিদেশমুখী প্রবণতা ও নির্ভরতা কমানোর প্রতিও গুরুত্বারোপ করেছেন। বক্তারা আরও বলেন, বর্তমান সরকারও দেশে জেলা পর্যায়ে প্রতিটি হাসপাতালে ১০ বেডের এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫০ বেডের কিডনি রোগীদের ডায়ালেসিস সেন্টার করার উদ্যোগ নিচ্ছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে আরও অভিজ্ঞ কিডনি চিকিৎসক ও নার্সিং স্টাফ প্রয়োজন রয়েছে।

কনফারেন্সের উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডা. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ নেফ্রিউলজির সভাপতি অধ্যাপক ডা. নারায়ণ প্রসাদ এবং ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ নেফ্রিউলজির সহ-সভাপতি প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ রফিকুল আলম।

বিআরএ'র সভাপতি প্রফেসর ডা. মো. নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অন্য রোগের মতো দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে বিভাগীয় শহরগুলো ছাড়া হাতের কাছাকাছি এ রোগের চিকিৎসা করাতে পারেন না আক্রান্তরা। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ সঠিক সময়ে নিয়মিত ডায়ালায়সিস করাতে ব্যর্থ হয়ে জীবনসংকটে পড়ছেন। আধুনিক যুগ হিসেবে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। সে হিসেবে জেলা শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে অন্য রোগের চিকিৎসার মতো কিডনি রোগের চিকিৎসাও সহজলভ্য করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। সেই প্রচেষ্টাকে বেগবান করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এ স্বাস্থ্য বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে একত্রিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিআরএ'র মহাসচিব এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কিডনি ডিজিস এন্ড ইউরোলজির ডিরেক্টর প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ বাবরুল আলম বলেন, এ বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ সার্কভুক্ত দেশসমূহের খ্যাতনামা কিডনি রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কক্সবাজারে এসেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশি প্রায় চার শতাধিক কিডনি রোগ চিকিৎসক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক এবং এটি ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি স্বীকৃত।

ইত্তেফাক/এসকে