শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৮ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

মরক্কোর মর্মন্তুদ ভূমিকম্প: আমরা শোকাহত

আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৫০

ভূমিকম্প এই বিশ্বের সবচাইতে বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলির মধ্যে একটি, যাহা কোনো ধরনের পূর্বাভাস ছাড়াই যে কোনো মুহূর্তে আঘাত হানিতে পারে। ইহা মূলত পৃথিবীর টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়ার কারণে ঘটিয়া থাকে। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ ভূত্বক কয়েকটি ছোট এবং বড় স্তর বা আবরণের মাধ্যমে গঠিত হইয়াছে। সহজ কথায় বলিলে, পৃথিবীর ভূত্বকের এই স্তরগুলির অস্বাভাবিক নড়াচড়ার কারণে ভূত্বকের উপরিভাগে একধরনের কম্পন সৃষ্টি হয়, যাহাকে আমরা ভূমিকম্প বলিয়া অভিহিত করিয়া থাকি। আমাদের মাথার উপরে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পার হইয়া এমনকি আমাদের আকাশগঙ্গা ছাড়াইয়া কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে অন্য কোনো সৌরজগতের গ্রহ-নক্ষত্রে কী ঘটিতেছে তাহা পর্যবেক্ষণ করিবার প্রযুক্তি থাকিলেও আমাদের পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ ভূত্বকে কী ঘটিতেছে তাহা নিরীক্ষণ করিবার প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব হয় নাই। ইহার কারণে অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ন্যায় পৃথিবীর কোন অঞ্চলে কোন সময়ে ভূমিকম্প হইতে পারে তাহার আগাম বার্তা পাওয়া সম্ভব নহে। তবে, সময়ের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব না হইলেও পৃথিবীর ভূত্বকের স্তরগুলির গঠন পর্যবেক্ষণ করিয়া কোন অঞ্চলগুলিতে ভূমিকম্প হইতে পারে তাহা নির্ণয় করা সম্ভব হইয়াছে। জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, তুর্কি, চীন ইত্যাদি দেশগুলি এমন সকল অঞ্চলে অবস্থিত, যাহার ভূত্বকের স্তরগুলি তুলনামূলকভাবে ভঙ্গুর। অর্থাত্ এই সমস্ত দেশে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় ভূমিকম্প হইবার আশঙ্কা অনেক অধিক।

গতকাল উত্তর আফ্রিকায় অবস্থিত ৯৯ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ মরক্কোর মধ্যাঞ্চলে রিখটার স্কেলের ৬.৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানিয়াছে। উক্ত ভূমিকম্পের আঘাতে গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২ সহস্রাধিক মানুষ নিহত হইয়াছেন। আহত হইয়াছেন আরো ২ সহস্রাধিক। আশঙ্কা করা হইতেছে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়িবে। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানাইয়াছে, মারাক্কেশ শহর হইতে ৭১ কিলোমিটার দূরে এটলাস পর্বতমালা এলাকার ১৮.৫ কিলোমিটার গভীরে ভূত্বকের অবস্থানগত পরিবর্তনের কারণে উক্ত ভূমিকম্পের উত্পত্তি হইয়াছে। ভূমিকম্পটির ১৯ মিনিট পর আবারও ৪.৯ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় ইহাকে আফটার শক বলা হইয়া থাকে। ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত না হইয়াও মরক্কো ১৯৬০ সালের পর পুনরায় শক্তিশালী ভূমিকম্পের শিকার হইয়াছে। ১৯৬০ সালের ভূমিকম্পে ১২ হাজারেরও অধিক মানুষ নিহত হন। মরক্কোতে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের আঘাতে ২ সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। নিহতের পরিবার এবং আহত মানুষের প্রতি জানাই বিশ্রব্ধ সমবেদনা।

আমরা জানি, এই বত্সরের ফেব্রুয়ারি মাসে সিরিয়া সীমান্তের নিকট দক্ষিণ-পূর্ব তুর্কিতে ৭.৮ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল আরো ভয়াবহ। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের তুলনায় তুর্কি অধিক ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। প্রায়শই ভূমিকম্পের শিকার এই দেশটিতে ২০২৩ সালের এই ভূমিকম্পটি ছিল সবচাইতে বিপজ্জনক। ৫০ হাজারেরও অধিক মানুষ নিহত হন। আহত হন লক্ষাধিক। এই লক্ষাধিক মানুষের পুনর্বাসনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত হইতে অসংখ্য মানুষ তুর্কি ও সিরীয় সরকারের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াইয়া মনুষ্যত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। অনুরূপভাবে বিপদগ্রস্ত মরক্কোবাসীর প্রতিও আমাদের মানবিক সাহায্য-সহযোগিতার হস্ত সম্প্রসারণ করা বাঞ্ছনীয়।

ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যাহা পৃথিবীর গতিশীল প্রক্রিয়া দ্বারা সংঘটিত হইয়া থাকে। ইহার কারণে ইহা একটি অনিবার্য ও অপ্রতিরোধ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। ইহা সত্ত্বেও বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোগত পরিবর্তন, প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সমন্বয়ে ভূমিকম্পের ধ্বংসাত্মক পরিণতি প্রশমন করা যাইতে পারে। আমরা আশা করি, বিজ্ঞানের ধারাবাহিক অগ্রগতির কল্যাণে ভূমিকম্পের কবল হইতে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব হইবে।

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন