উল্লাপাড়ার ভূতগাছা-পাঁচলিয়া আঞ্চলিক সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বড়হর গ্রামের মধ্যে করতোয়া নদীর পাড় দিয়ে যাওয়া প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে গিয়ে নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই এসব স্থানে দুর্ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তায় বড়হর গ্রামের মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন ৫০/৬০ মিটার অংশের জমি নিয়ে সৃষ্ট গোলযোগের কারণে রাস্তাটি মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এই এলাকার ১২ গ্রামের মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় ১৬ বছর আগে এলজিইডি বগুড়া-নগবাড়ি মহাসড়ক থেকে ভূতগাছা গ্রামের পাশ দিয়ে পাঁচলিয়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়কটি নির্মাণ করার পর এ অঞ্চলের মানুষের উল্লাপাড়া উপজেলা সদরে সুষ্ঠু যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছিল। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন বড়হর ইউনিয়নের ভূতগাছা, পেচরপাড়া, বড়হর, অলিপুর, আমডাঙ্গা, সড়াতৈল, বাদুল্লাহপুর, রশিদপুর, তারুটিয়া ও পাঁচলিয়া সহ ১২ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে থাকেন।
কিন্তু ৫/৬ বছর ধরে রাস্তাটি বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে যায়। রাস্তার মাঝে মাঝে সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। ওপরের কার্পেটিং উঠে গিয়ে ইট, খোয়ার আচ্ছাদন বেরিয়ে পড়েছে কয়েক বছর আগে। বিশেষ করে বড়হর ইউনিয়নের বড়হর ও পেচরপাড়া গ্রামের পাশে করতোয়া নদীর পাড় ঘেঁষে যাওয়া অন্তত দেড় কিলোমিটার অংশ একেবারেই ভেঙ্গে গেছে। এসব ভাঙ্গা স্থান দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে অটোভ্যান, ট্রাই সাইকেল, সিএনজি চালিত অটোভ্যান, ভটবটি, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন।
বড়হর গ্রামের নদী পাড়ের ভাঙ্গা স্থান গুলোতে প্রায় দিনই রিক্সা ভ্যান উল্টে নদীর মধ্যে পড়ে গিয়ে যাত্রীরা আহত হচ্ছেন। এমতাবস্থায় বড়হর গ্রামের নূর মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তির জমির ওপর দিয়ে প্রায় ৬০ মিটার রাস্তার অংশ চলে যাওয়ায় নতুন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এই ভূমি মালিকের সংগে গোলযোগ মিটছে না বড়হর ইউনিয়ন পরিষদ ও উল্লাপাড়া এলজিইডি অফিসের। ফলে সংস্কার হচ্ছেনা রাস্তার ঝুঁকিপূর্ণ অংশ। চরম ভোগান্তিতে চলাচল করছে এলাকার লোকজন।
বড়হর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল হাসান নান্নু বলেন, বড়হর গ্রামের মধ্যে মূল রাস্তা কয়েক দফা করতোয়া নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। এখন একটি স্থানে ৫০ থেকে ৬০ মিটার অংশ স্থানীয় পেচরপাড়া গ্রামের নূর মোহাম্মাদ নামের এক ব্যক্তির জমির ওপর দিয়ে রয়েছে। ঐ জমি নূর মোহাম্মাদের কাছ থেকে নেবার জন্য উল্লাপাড়া এলজিইডি অফিসের সহায়তায় কয়েকবার নূর মোহাম্মদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও জমি মালিক তার জমি দিতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি সংস্কার করতে পারছেন না। অথচ এসব ভেঙ্গে যাওয়া স্থানে অহরহ দূর্ঘটনা ঘটছে। আহত হচ্ছেন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা।
এ ব্যাপারে উক্ত ভূমি মালিক নূর মোহাম্মাদের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ঐ স্থানে ১০ বছর আগে তার চার বিঘা জমি ছিল। দফায় দফায় করতোয়ার ভাঙ্গনে দেড় বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। যতবার নদী ভাঙ্গে ততবারই তার জায়গার ৫/৭ শতক অংশ দখল কওে ঐ স্থানে নতুন করে রাস্তা চালু হয়। এভাবে জমি দিতে দিতে তার এখন দুই বিঘারও কম জমি আছে। এই জমিটিই তার সংসার পরিচালনার একমাত্র সম্বল। এ যাবত যতবার রাস্তার জন্য জমি দিয়েছি তার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ বা এলজিইডি থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ বা অর্থ তাকে দেওয়া হয়নি। বর্তমানে তার জমির ওপর প্রায় ২০ শতক জায়গা রাস্তা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিধায় তার পরিবারের বেঁচে থাকার স্বার্থে শেষ সম্বল এই জমিটুকু তিনি আর রাস্তার জন্য দিতে রাজি নন।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া এলজিইডি অফিস প্রধান উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু সায়েদ বলেন, এলজিইডি থেকে ভূতগাছা-পাঁচলিয়া সড়ক সংস্কারের জন্য অনেক আগেই একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু বড়হর গ্রামের মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন (নূর মোহাম্মদ) ১৬ থেকে ২০ শতক জায়গা নিয়ে মালিকের সঙ্গে সৃষ্ট গোলযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য ঢাকায় পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুর্ঘটনা ঘটছে নদী পাড়ের ভাঙ্গা অংশ গুলোতে। নূর মোহাম্মদ জমি না দেবার ব্যপারে তার সিদ্ধান্তে অনড়। তার পরেও জনসাধারণের বৃহত্তর স্বার্থে ভূমি মালিকের সঙ্গে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সুধিজনদের নিয়ে আবারও আলোচনায় বসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।