সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৭ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বাঘায় শিক্ষকদের গান শিখতে বললেন শিক্ষা অফিসার!

আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:২১

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাওয়া ও কোচিং নির্ভরশীল হওয়ার ইস্যু নিয়ে শিক্ষকদের ভালো গান গাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন বাঘা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ.ফ.ম মাহামুদুল হাসান। 

সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইন-শৃংখলা, মাদক নিয়ন্ত্রণ, চোরাচালান প্রতিরোধ ও নাশকতা প্রতিরোধ নিয়ে পৃথক চারটি মাসিক সভায় বক্তারা মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কমে যাওয়া ও লেখা পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে শিক্ষা অফিসার এ কথা বলেন।  

বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোকপাতের একপর্যায় কয়েকজন বক্তা বলেন, বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়ার মান ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে যাচ্ছে। পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বিদ্যালয়সমূহে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত অনেক কমে গেছে। এর কারণ হিসাবে বক্তারা শিক্ষার্থীদের কোচিং বাণিজ্যে ও ভিডিও গেমে আসক্তের কথা উল্লেখ করেন। এ সময় উক্ত সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এই সমস্যা সমাধানের কারণ জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, আমার শিক্ষকরা যে একেবারে খারাপ পড়ায় তা নয়। তবে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে শিক্ষকদের ভালো গান গাওয়া শিখতে হবে। তার এ ধরনের  বক্তব্যে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

অপরদিকে মাদক, চোরাচালন ও বিকাশ হ্যাক নিয়ে অনেকের মুখ থেকে বক্তব্য উঠে এলে বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জের (প্রতিনিধি) উপ-পরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন, পদ্মায় পানি বাড়ার কারণে মাদকের প্রবণতা বেড়েছে। আমরা গত একমাসে থানায় ৩৩টি মামলা রেকর্ড করেছি। এর মধ্যে ২৫টি মাদক। এ সমস্ত মামলায় আমরা ২৭ জন আসামি আটকসহ ২৪১ বোতল ফেন্সিডিল, ৪৯৭ পিচ ইয়াবা এবং ১ কেজি ৬ শ’ গ্রাম গাঁজা ও ৩৩ গ্রাম হেরোইন জব্দ করেছি। আর চলতি মাসের ১০ দিনে পৃথক অভিযানে চারজন আসাসিসহ ৪৫০ পিস ফেন্সিডিল জব্দ করেছি। 

এছাড়া সীমান্তরক্ষী বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার রফিক হোসেন বর্তমানে মাদকের প্রবণতা বাড়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ উপজেলায় দুটি বিজিবি ক্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে আলাইপুর ক্যাম্প থেকে ১৯ বোতল বিদেশি মদ এবং ১৬ পিস ফেন্সিডিলসহ থানায় পরিত্যক্ত দুটি মামলা দেওয়া হয়েছে। 

প্রক্ষান্তরে মীরগঞ্জ ক্যাম্প থেকে ১৯ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার দেখিয়ে একটি পরিত্যক্ত মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ সময় সভার সভাপতি জানতে চান, মামলার সংখ্যা এতো কম এবং আসামি আটক নেই কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে বিজিবি কর্মকর্তা বলেন, আমাদের লোকবল সংকট এবং ভারী অস্ত্র নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া যায় না। তাই আসামি আটক করা সম্ভব হয়নি। এমন উত্তরে অনেকেই প্রশ্নবিদ্ধ হন এবং অসন্তোষ প্রকাশ করেন। 

সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত উক্ত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জুয়েল আহাম্মেদ, বাঘা পৌর মেয়র আক্কাস আলী, বাঘা উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা খাতুন লতা, পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, বাজুবাঘা ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহাম্মেদ রঞ্জু , মোজাহার হোসেন মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নছিম উদ্দিন, বাঘা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুল লতিফ মিঞা ও সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান। 

এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তা, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। 

আয়োজিত পৃথক চারটি সভায় বক্তারা, মাদক, সুদের ব্যবসা, হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়, গণহারে যে কোনো বিষয় নিয়ে মাইকিং, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ, দ্রব্য মূল্যের বাজার মনিটরিং, যানজট নিরসন, শিক্ষার্থীদের ভিডিও গেমে আসক্ত, ইমো-বিকাশ হ্যাকিং, প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেন। 

এদিকে পৃথক চারটি সভার সভাপতি ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার বলেন, আজকের সভায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় উঠে এসছে। পর্যায় ক্রমে সব গুলোয় দেখভাল করা হবে। তিনি নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাঘা থানা পুলিশসহ উপস্থিত সকলের সহোযোগিতা কামনা করেন।

ইত্তেফাক/পিও