রোববার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১৬ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

‘কালই ৪ লাখ টাকার মাল তুলেছি, চার টাকাও বিক্রি করিনি’

দুই দোকানের অর্ধকোটি টাকার কাপড় পুড়েছে ফজলুল হকের

আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৩৫

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে কাপড়ের দুটি দোকান ছিল ফজলুল হকের। দোকানে ছিল প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকার মালামাল। আর কয়েক লাখ নগদ টাকা। কিন্তু আগুনে সব পুড়ে এখন নিঃস্ব এই ব্যবসায়ী। তিনি আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘কালই (বুধবার) আমি ৪ লাখ টাকার মালামাল উঠিয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত চার টাকার মালও বিক্রি করতে পারিনি। তার আগেই সব শেষ। কোনো কিছুই বের করতে পারিনি। কয়েক লাখ ক্যাশ টাকাও পুড়েছে।’

গত বুধবার রাত ৩টা ৪৩ মিনিটের দিকে কৃষি মার্কেটে আগুনের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে ২১৭টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। সংস্থাটি জানায়, মার্কেটটিতে ৩১৭টি দোকান ছিল। এদিকে আগুনে সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ মার্কেটে সবজি দোকানের পাশাপাশি জুতার দোকান, সোনার দোকানসহ অনেক ধরনের দোকান রয়েছে।

ব্যবসায়ী ফজলুল হক বলেন, দীর্ঘ দুই যুগ ধরে এখানে ব্যবসা করছি। এভাবে দোকান পুড়ে গেল, কবে ঠিক হবে, কীভাবে চলবে আবার কবে এখানে বসতে পারব আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। ব্যবসায়ীদের শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

গতকাল সকালে মার্কেটে গিয়ে দেখা গেল, স্তূপ করে রাখা হয়েছে কিছু পোড়া পণ্য। এসব পোড়া পণ্যের পাশে কাঠের টুলে বসেছিলেন জুনাইদ শেখ। তিনি কৃষি মার্কেটের বিক্রমপুর ক্রোকারিজ নামের একটি দোকানের কর্মী। দোকানটির মালিক জিয়াউল হক। তার আরো একটি দোকান রয়েছে, নাম বিক্রমপুর ইলেকট্রিক অ্যান্ড গিফট কর্নার। এই দোকানের কর্মী জুনাইদ শেখ বলেন, মালিকের ফোন পেয়ে দৌড়ে দুই মিনিটের মধ্যে মার্কেটে চলে আসি। কিন্তু কিছুই রক্ষা করা যায়নি। অন্য দোকানিদের মতো তালা বা শাটার ভেঙে মালপত্র বের করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে কিছুই সরাতে পারিনি।

জুনাইদ শেখ জানান, তার মালিকের দুটি দোকান। দুটিই গ-ব্লকে। এর একটি ইলেকট্রিক ও গিফটের দোকান, আরেকটি ক্রোকারিজ পণ্যের। দোকানে ম্যানেজার ছাড়াও সাত জন কর্মী আছেন। এছাড়া মার্কেটের দোতলায় তাদের মোট আটটি গুদাম ছিল। আগুনে সবকটি দোকান ও গুদাম পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে আনুমানিক প্রায় ৩ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। এসবের মধ্যে দামি দামি ওভেন, রাইস কুকার, চুলা, ব্লেন্ডার ছিল বলে তিনি জানান।

চন্দ্রবিন্দু ফ্যাশনের মালিক কবীর হোসেন বলেন, দোকান পুড়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় কোটি টাকার। যা বের করেছি, সেগুলো তো অচল। অচল পয়সা কতটুকু? টাকা ছিঁড়ে গেলে বা পুড়ে গেলে সেই টাকা কি চালানো যায়? পোশাকে সামান্য ছিদ্র থাকলে সেটা কেউ নিতে চায় না। যা বের করেছি, সেগুলো চালানো মুশকিল। মালামাল ছিল প্রায় ৫০ লাখ টাকার। ডেকোরেশনসহ প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, আমার দোকান ছিল, গোডাউন ভরা মাল ছিল। এগুলো কে দেখবে? আমার বাসা কাছেই, সকালে শুনি কৃষি মার্কেটে আগুন লেগেছে। লুঙ্গি পরেই চলে এসেছি। ফায়ার সার্ভিস আসতে অনেক দেরি করেছে।

আগুনের পর লুটপাট ও মার্কেটের ফুটপাতে দোকান প্রসঙ্গে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘লুটপাট কারা করছে বলতে পারব না। কারা ফুটপাত বসায় সেটা বলতে পারব না। সবাই জানে, আপনারাও জানেন। গলিতে ছোট দোকানের ফলে কাস্টমার ঢুকতে পারে না। গলি ভুলে যায়। এখন অনেকেই আসছে। কিন্তু আমাদের এসব সমস্যা কেউ দেখতে আসেনি। আজ আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। এখন অনেকেই দেখতে আসছেন। এই দেখায় কোনো কিছু যায় আসে না।’

ইত্তেফাক/এসটিএম