সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ইহাতে আশ্বস্ত বোধ করিবার কী রহিয়াছে?

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:১৫

গত বুধবার নির্বাচন ভবন সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: প্রত্যাশা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে সিইসি তথা প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলিয়াছেন যে, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত বোধ করিতেছেন তিনি; কিন্তু ইহাতে আশ্বস্ত বোধ করিবার কী রহিয়াছে? একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশের সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রদান করিয়াছে। সংবিধানের ১১৮ ধারা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাহারা স্বাধীন। ১২৫ ধারা অনুযায়ী তাহাদের কোনো কোনো পদক্ষেপের বিষয়ে আদালতে পর্যন্ত প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না। আবার ১২৬ ধারা অনুযায়ী তাহাদের দায়িত্বপালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। এত বড় আইনি সুরক্ষা ও ক্ষমতার অধিকারী হইয়াও তাহারা কীভাবে সরকারের প্রতিশ্রুতি বা আশ্বাসের কথা বলেন? কমিশন নির্বাচন চলাকালে নিজের সুবিধা অনুযায়ী প্রশাসনিক ক্ষেত্রে রদবদল আনয়ন করিতে পারে। বলা হইয়াছে, এইবারই প্রথম সরকার এমন প্রতিশ্রুতি দিল। এমন কথারও কি কোনো অর্থ আছে?

সম্প্রতি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলায় একটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া যে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়াছে, তাহাতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা লইয়া কি প্রশ্ন উঠে নাই? ইহার পর সিইসি ও অন্যান্য কর্মকর্তার কম কথা বলা কি বাঞ্ছনীয় নহে? যেইখানে ছোট যুদ্ধে কমিশনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হইয়াছে, সেইখানে কুরুক্ষেত্রে যাইবার পূর্বে চিন্তাভাবনা করিয়া কথা বলাই সংগত। অনেক উদাহরণ দেওয়ার প্রয়োজন নাই। একটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের প্রাক্কালে তথাকথিত সরকারসমর্থক ও অনুপ্রবেশকারী একজন নেতা বলিয়াছেন যে, নৌকা মার্কা যখন পাইয়াছেন, তখন আবার নির্বাচন কীসের? তাহার পরও যদি কেহ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে চান, তাহা হইলে নির্বাচন কত প্রকার ও কী কী তাহা দেখানো হইবে; কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। অন্যদিকে পৌরসভা নির্বাচনে সিসিটিভি ক্যামেরার লাইন কাটিয়া দেওয়া হইলেও আজ পর্যন্ত তাহার কোনো সুরাহা হয় নাই।

সরকারের পক্ষ হইতে আশ্বস্ত হইবার কথা বলা হইতেছে কেন? কেননা নির্বাচন কমিশন এমন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, যাহারা কাহারো ফেভার বা আনুকূল্য পাইবার প্রত্যাশা করিতে পারেন না। তাহারা প্রয়োজনে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের সাহায্য লইতে পারেন। তাই তাহাদের দায়দায়িত্ব এড়াইবারও কোনো অবকাশ নাই। নির্বাচন কমিশন যদি ছোট ছোট নির্বাচনের নানা অনিয়মের ক্ষেত্রে অ্যাকশনে যাইত, তাহা হইলে আজ এমন প্রশ্ন উঠিত না। ইহার কারণ কি এই যে, সরকারসমর্থক দল, সরকারি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিচার বিভাগ আজ মিলিয়া-মিশিয়া একাকার হইয়া গিয়াছে? আমরা দেখিতে পাইতেছি, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে যাহারা কর্মরত রহিয়াছেন, তাহারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারসমর্থক দলের নেতাকর্মীর চাইতেও বড় কর্মী বনিয়া গিয়াছেন। কতিপয় ওসি-ডিসির কথাবার্তায় কি তাহার প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে না? কমিশনের এইরূপ ভূমিকার কারণে যাহারা অবিপ্লবী এবং গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী, তাহারাও আজ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিবেন কি না, তাহা ভাবিয়া দেখিতে শুরু করিয়াছেন।

ইত্তেফাক/এসটিএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন