আমি আর মাসুদ ভাই এক অফিসে চাকরি করি, কিন্তু ভিন্ন শাখায়। আমার রুমের একটা রুম পরেই উনি বসেন। কাজ না থাকলেই এসে জিজ্ঞেস করেন, শামসু ভাই কেমন আছেন? আমিও তার সাথে তাল মিলিয়ে বলি, ‘ভালো আছি, বেশ আছি।’ তাকেও জিজ্ঞেসে করি, ‘আপনি কেমন আছেন?’ তিনি মুখ খেঁচিয়ে বলেন, ‘ভালো না। টাকা ছাড়া ভালো থাকা যায় বলেন? আমার বউ বাচ্চা আছে, সংসার আছে। টাকা না থাকলে সত্যি কথা ভাই মাথাও কাজ করে না। মাথা হয়ে যায় এক অকেজো বস্তু। কি এক আশ্চর্য জিনিস না ভাই? হা হা হা! আপনাদের ক্ষেত্রে হয়তো মাথা কাজ করতে পারে, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে করে না। পকেটে টাকা না থাকলে আাামাকে মহিলা মহিলা মনে হয়। হা হা হা! কিছু মনে করবেন শামসু ভাই। আপনি আবার ভাববেন না মহিলাদের ছোট করছি। কি আচানক! হা হু কিছু করেন; একা একা কথা বলার তো কোনো মানে হয় না।’
আমি বললাম, ‘আপনার কথা মন দিয়ে শুনছি।’
‘তা তো শুনছেনই। গত শুক্রবার থেকে আপনার ভাবি অসুস্থ। পেটে ব্যথা নিয়ে বসে আছে। ঘরে অসুস্থ রুগি নিয়ে বসে থাকা যায়? হাসপাতাল হাসপাতাল মনে হয়।’
আমি বললাম, ‘ডাক্তার দেখান। অসুস্থতা নিয়ে বসে থাকা ঠিক না। অসুস্থতার চার ভাই, একটার পর আরেকটা আসে।’
‘হ্যাঁ শামসু ভাই, আপনি ঠিক ধরেছেন। আপনার ভাবি আবার একটু বেশি পাকনা। এত পাকনামি তো আমার ভালো লাগে না! কয়েকবার বলছি ডাক্তার কাছে চলো। সে যাবে না তো যাবেই না, আমার পয়সা দিয়ে নাকি চিকিত্সাও করাবে না। করাবে না কেন? আপনার ভাবির ধারণা আমি নাকি উেকাচ খাই। এটা কোনো কথা! মহা মসিবত না বলেন? বাইরের কথা ঘরে বলা যে কত বড় মসিবত এর ফল পাচ্ছি হাতেনাতে।’
ক’দিন পর মাসুদ ভাইও অসুস্থ হয়ে পড়ল। অসুস্থতা নিয়েই অফিসে এল। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। মনে হয় রাতে ভালো ঘুম হয়নি। মুখ হয়ে গেছে শুকনো আমের মতো। আমার কাছে এসে প্রতিজ্ঞা করল, কখনও আর উেকাচ খাবে না। অফিসের কলিগদেরও ডেকে বলল, ‘এই যে কান ধরে ইস্তফা দিলাম। কিরা কাটলাম। মাসুদ ভালো হয়ে যাবে।’
এক দুপুরবেলা। এক লোক দেখি তাকে এক হাজার টাকা দিচ্ছে এবং যত্ন করে টাকাটা বুক পকেটে রেখে দিল। তার পাশেই বসা আমি। বললাম, ‘আপনি না আর টাকা নিবেন না বলছেন!’
মাসুদ ভাই বলল,‘হ্যাঁ টাকা তো খাব না বলছি। এই টাকা দিয়ে জুতা কিনব। পাড়াইয়া শেষ করে দিব।’
পরদিন নতুন জুতা পড়ে অফিসে এল। বলল, ‘একশ টাকা জরিমান দিলাম। ১ হাজার ১০০ নিছে। কেমন মানিয়েছে বলেন শামসু ভাই?’ হা হা হা করে রুম কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন। আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম নির্বিকার হয়ে। তার মুখ খুশিতে চিকচিক করছে।
-মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা