শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তাধীন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:০৫

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লি শাংফুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলছে। তিনি দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিখোঁজ ছিলেন। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১০ জনের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং চীনা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে থাকা তিনজনের মতে, লি-র তদন্ত সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে তিনি কোন সরঞ্জাম কেনার তদন্তের অধীনে ছিল তার বিশদ বিবরণ পায়নি রয়টার্স।

২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত লি’র নেতৃত্বে থাকা চীনা সামরিক বাহিনীর প্রকিউরমেন্ট ইউনিটের আটজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও তদন্তাধীন বলে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে থাকা দুজন রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

মার্চ মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত লি এবং আট কর্মকর্তার তদন্ত সামরিক বাহিনীর শক্তিশালী শৃঙ্খলা পরিদর্শন কমিশন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে বলে ওই দুই ব্যক্তি বলেছেন।

লি’র বিরুদ্ধে অভিযোগের বিস্তারিত পরীক্ষা এবং তদন্তের সময় সূত্রের সাক্ষাত্কারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করেছে রয়টার্স। এর মধ্যে প্রতিবেদন তৈরিতে যারা চীনের সিনিয়র রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এধরনের ব্যক্তি এবং চীনের রাজনীতির ঘনিষ্ঠ জ্ঞান রাখেন এ ধরনের আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের সহযোগিতা রয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত নন। স্টেট কাউন্সিল এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক মন্তব্যের জন্য অনুরোধে সাড়া। লি’র সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করা যায়নি।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভিয়েতনামি এবং সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন লি (৬৫)। তাকে শেষবার ২৯ আগস্ট বেইজিংয়ে আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে একটি নিরাপত্তা ফোরামে মূল বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। এর আগে তিনি রাশিয়া ও বেলারুশ সফরে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন।

মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, লি দুর্নীতির জন্য তদন্তাধীন ছিলেন এবং সম্ভবত তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। লিকে অফিস থেকে এমন সময় সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে যখন ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এর আগে বলেছিল, মার্কিন সরকার মনে করে লি তদন্তাধীন রয়েছে।

জাপানে ওয়াশিংটনের রাষ্ট্রদূত রাহম ইমানুয়েল এক্স-এর একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রথমত—প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লি শাংফুকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে কোথাও দেখা বা শোনা যায়নি। দ্বিতীয়ত—ভিয়েতনাম সফরের জন্য তিনি নো-শো ছিলেন। এখন—সিঙ্গাপুরের নৌবাহিনী প্রধানের সঙ্গে তার পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকেও অনুপস্থিত তিনি। এর কারণ কি তাকে গৃহবন্দী করে রাখা?

পোস্টের সঙ্গে উইলিয়াম শেক্সপিয়রের বিখ্যাত নাটক হ্যামলেটের বিখ্যাত উক্তি ‘সামথিং ইজ রোটেন ইন দ্য স্ট্যাট অব ডেনমার্ক’ যোগ করেছেন।

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি। টোকিওতে মার্কিন দূতাবাস বলেছে যে তারা তাৎক্ষণিকভাবে আর কোনো মন্তব্য করেনি। লি তদন্তাধীন কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং একটি দৈনিক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এ ব্যাপারে প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে অবগত নন।

সিঙ্গাপুর নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল শন ওয়াট ৪ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীনে ছিলেন এবং পিএলএ নৌবাহিনীর কমান্ডার ডং জুন এবং অন্যান্য নৌবাহিনীর নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন বলে সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তার ওয়েবসাইটে জানিয়েছে। ওয়েবসাইটে তাদের সঙ্গে অথবা লি এর সঙ্গে দেখা করার কথা উল্লেখ করেনি।

জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দীর্ঘ সময় নিখোঁজ এবং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পিপলস লিবারেশন আর্মির এলিট রকেট ফোর্সের নেতৃত্বে নাড়া দেওয়ার পরে জুলাই মাসে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং-এর ব্যাখ্যাতীত প্রতিস্থাপনের পরে লিকে ঘিরে নতুন জল্পনা শুরু হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসির সহযোগী অধ্যাপক আলফ্রেড উ বলেছেন, ‘কিনের পরপরই লি-এর অন্তর্ধান, বহির্বিশ্বের কাছে চীনা অভিজাত রাজনীতি কতটা রহস্যময় হতে পারে তারই ইঙ্গিত৷ শির অধীনে চীন বিশ্বের কাছে নিজেকে ব্যাখ্যা করার কোনো প্রয়োজনই মনে করে না।’

এই পদক্ষেপগুলো চীনের নেতৃত্বে স্বচ্ছতার অভাব এবং অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে বিশ্লেষক এবং কূটনীতিকদের কাছ থেকে প্রশ্ন তুলেছে। লিকে মার্চ মাসে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি চীনের পাঁচটি স্টেট কাউন্সিলরদের মধ্যে একজন। এটি হলো মন্ত্রিসভার একটি পদ যা একজন নিয়মিত মন্ত্রীর চেয়ে উঁচু মানের।

রাশিয়ার বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক রোসোবোরোনেক্সপোর্টের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার জন্য ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জা ইয়ান চং বলেছেন, লিকে ঘিরে স্পষ্টতার অভাব চীনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে অনিশ্চয়তাকে আরও জোরদার করেছে। অনুমানের পরিসর বর্তমানে পিআরসি (পিপলস রিপাবলিক অব চায়না) সিস্টেমের উচ্চ অনিশ্চয়তা প্রদর্শন করে।

ইত্তেফাক/এসএটি