মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

আছে পদমর্যাদা, নেই দায়িত্ববোধ

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:১৮

মানুষ বন্য দশা থেকে সভ্যতার বিকাশের মাধ্যমে সভ্য জাতিসত্তা গড়ে তোলে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুন্দরভাবে পরিচালিত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে বর্তমান আধুনিক সমাজে। প্রাচীন সমাজে একজনকে দলপতি নির্বাচন করা হতো। তার তত্ত্বাবধানে পরিচালনা হতো সকল কার্যক্রম। সবাই তাকে মেনে চলত। তিনিও তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেষ্ট থাকতেন। যুগে যুগে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষমতা হস্তান্তর হতে থাকে। তবে কারো ক্ষমতাই স্থায়ী নয়—যুগে যুগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে শক্তিশালী সম্রাট-শাসক-রাজা-বাদশার সাম্রাজ্য।

রাষ্ট্রকে সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য সকল দেশে আছে বিভিন্ন পরিষদ, সেক্টর, মন্ত্রণালয় যাদের ওপর অর্পিত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার একাধিক দায়িত্ব। দেশকে সুন্দরভাবে পরিচালিত করতে এইসব বিভাগের লোকবলের দায়িত্বের শেষ নেই। কিন্তু অনেকেই তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেতন নন। তাদের দায়িত্বের অবহেলার কারণে দুর্বিপাকে পড়তে হয় জনগণকে। সবাই যেন বসে আছে পদমর্যাদা নিয়ে—যেন নেই কোনো দায়িত্ব। কিছু বলতে গেলে বলে—আমি সরকারের চাকরি করি, আপনার না। যে লোক প্রতিবাদ করল তার ফাইল হয়তো ডাস্টবিনে পড়ে রইল। কিছু কর্মচারী-কর্মকর্তা বাড়তি কিছু পাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে। তারা মুখে বলে না আর্থিক লেনদেনের কথা, কিন্তু কাজেকর্মে বুঝিয়ে দেয়।

কোনো কারণে যাওয়া হলে একটা ফরম ধরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘পূরণ করে নিয়ে আসেন’। কিছু একটা বুঝতে না পারলে তাদের কাছে নিয়ে গেলে বলেন, আপনি অমুক কর্মচারীর কাছে যান সে বুঝিয়ে দেবে। তার কাছে গেলে বলে তার কাজ আছে। সামান্য একটা বিষয় মানুষ নাই বুঝতে পারে, কিন্তু তাই নিয়ে তারা একাধিক কথা শুনিয়া দেন। বলেন—এইটুকুই বোঝেন না আপনি বাকি কাজ সম্পূর্ণ করবেন কীভাবে। বিভিন্নভাবে অপমান, অপদস্থ করেন—তাও বুঝিয়ে দেন না। অনেক ঘোরাঘুরির পরে বলেন অমুকের কাছে যান—তাকে কিছু দিলে সুন্দরভাবে পূরণ করে দেবে। প্রতিটি সেক্টরে এধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় জনসাধারণকে। একজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে জানা যায়—তিনি একটা ফাইল জমা দেন একটি সরকারি অফিসে। কিছুদিন পরে যোগাযোগ করে জানতে চান, স্যার আমার ফাইলটা? তাকে দেখিয়ে বলা হয়—ঐ যে আলমারির ওপরে রাখা। ভুক্তভোগী বলেন, স্যার আমার কাজটা কবে নাগাদ হবে? স্যার বলেন, আপনার ফাইল তো আপেই আছে সমস্যা কী। ভুক্তভোগী অনুনয়-বিনয় করতেই থাকেন, স্যার আমার কাজটা করে দিলে খুব উপকার হতো। পরে অফিসার মহোদয় বলেন, আপনি বোঝেন না কীভাবে ফাইল আপ থেকে ডাউন করতে হয়।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এধরনের ব্যবহার কখনোই কাম্য নয়। প্রতিটি স্তরে আছে বকশিশ নামক মরণ ছুরির ব্যবস্থা, যা গলা না কাটলেও হূদয় কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলছে সাধারণ জনতার। তাই প্রশাসনিক মহলের কাছে জোর আবেদন—এই সকল সমস্যার প্রতিকারে ব্যবস্থা নিন।

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন