শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৭ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

দুশ্চিন্তা থেকে চোখের রোগ!

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৩০

শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ‘শিখো‘র প্রতিষ্ঠাতা শাহির চৌধুরী। কাজের চাপে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেন না। ইদানীং তিনি লক্ষ করছেন, দূরের বস্তু বা দূরের কোনো লেখা তার কাছে ঝাপসা লাগছে। এ সমস্যা নিয়ে তিনি চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে চিকিত্সক পরীক্ষানিরীক্ষা করে বলেন, রোগটির নাম ‘সেন্ট্রাল সেরাস রেটিনোপ্যাথি’।

সেন্ট্রাল সেরাস রেটিনোপ্যাথি হলো চোখের একটি অবস্থান, যেখানে রেটিনার পেছনে তরল জমা হয় এবং দৃষ্টিকে প্রভাবিত করে। সংক্ষেপে একে ‘সিএসআর’ বলে। রেটিনা হলো চোখের পেছনে একটি পাতলা সংবেদনশীল পর্দা, যা আমাদের দেখতে সাহায্য করে। তরল জমা হওয়ার ফলে রেটিনা আংশিক বিচ্ছিন্ন হতে পারে। এটি সাধারণত একটি চোখকে প্রভাবিত করে, যদিও উভয় চোখেই এই রোগ থাকতে পারে। নারীর তুলনায় অল্পবয়সি কিংবা মধ্যবয়সি পুরুষদের এটি বেশি হয় এবং এর অনুপাত হচ্ছে ৩:২।

লক্ষণ: প্রথমে যে লক্ষণটি দেখা যায় তাহলো আক্রান্ত চোখে ঝাপসা দেখা। অন্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে—

# কেন্দ্রীয় দৃষ্টিতে অন্ধকার থাকে।

#  সরলরেখাগুলো আঁকাবাঁকা দেখায়?।

# বস্তু মূল আকারের চেয়ে ছোট দেখায়।

# বস্তু প্রকৃত দূর থেকে আরো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

ধরন: সিএসআর-এর দুটি ধরন রয়েছে—

১. তীব্র: মধ্যবয়স্ক পুরুষদের (২০ থেকে ৫০ বছর) মধ্যে বেশি দেখা যায়। সাধারণত তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে তরল পদার্থ নিজে নিজে পরিশোষণ হয়।

২. দীর্ঘস্থায়ী: এক্ষেত্রে তরল পদার্থ ১২ মাসের বেশি সময় ধরে থাকতে পারে।

কারণ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা সিএসআরের জন্য একটি প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা মানুষের শরীরের কর্টিসল নামক হরমোন নিঃসারণ করে, যা চোখের প্রদাহ করতে পারে এবং এর ফলে রেটিনা ফুটো হতে পারে। গবেষণায? দেখা গেছে, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত লোকদের সিএসআরের ঝুঁকি বেশি। অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলের মধ্যে রয়েছে—

# কর্টিকোস্টেরয়েডযুক্ত ওষুধ সেবন।

# অটো ইমিউন রোগ, যেমন—লুপাস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস।

# হূদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ।

#  অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব (লাজুক বা শান্ত ব্যক্তি যে অন্যের সঙ্গে সহজে মিশতে বা কথা বলতে চান না বা পারেন না)

# হেলিকোব্যাকটর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণ।

# ঘুমের সমস্যা, যেমন—স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং অনিদ্রা।

চিকিত্সা: সেন্ট্রাল সেরাস রেটিনোপ্যাথি অনেক ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যে নিজেই ঠিক হয়ে যায?। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটি তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায?। যদি কয়েক মাসের মধ্যে তরল নিজ থেকে কমে না যায়, তাহলে নিম্নোল্লিখিত চিকিত্সাগ্রহণ করতে হবে।

# ওষুধ: কিছু ওষুধ সাহায্য করতে পারে যেমন—অ্যান্টি ভিইজিএফ, দুশ্চিন্তা কমানোর ওষুধ। কিছু মূত্রবর্ধক তরল কমাতে সাহায্য করে।

# ফটো ডাইনামিক থেরাপি: রোগটি দীর্ঘস্থায়ী হলে ফটো ডায়নামিক থেরাপি ব্যবহার করা হয়?।

# লেজার চিকিত্সা: রোগের ধরনের ওপর নির্ভর করে লেজার চিকিত্সা করা হয়।

 প্রতিরোধ:

# প্রতিদিন রাতে অন্তত ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

# ক্যাফেইন, অ্যালকোহল এবং স্টেরয়েড সীমিত ব্যবহার করতে হবে।

# নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

# প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে।

# দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে হবে।

মনে রাখবেন, সেন্ট্রাল সেরাস রেটিনোপ্যাথি নিজ থেকে চলে যেতে পারে অথবা এটি আরো খারাপ হতে পারে এবং দৃষ্টির স্থায়ী পরিবর্তন আনতে পারে। যদি আপনার কোনো দৃষ্টি পরিবর্তন বা ক্ষতি হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।

কনসালট্যান্ট (চক্ষু), দীন মো. আই হসপিটাল, সোবহানবাগ, ঢাকা

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন