শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

গরম চা ঢেলে ব্যবসায়ীর শরীর ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে 

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:৫৯

চাঁদপুরে মকবুল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীকে গরম চা ঢেলে শরীর ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ীকে মারধর ও দোকান ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে। 

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) কচুয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কোয়া নামক এলাকায় গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। 

আহত ওই দোকানিকে উদ্ধার করে শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে কোনো চিকিৎসা না দেওয়ায় তাকে নিয়ে ভর্তি করা হয় পার্শ্ববর্তী হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। জানা গেছে, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর পিঠসহ শরীরের ৬/৭ শতাংশ ঝলসে গেছে। 

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মকবুল খান বলেন, আমার অভাবের সংসার। চা-এর ব্যবসা করে ডাল-ভাত খেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছি। আমাদের ভাইস চেয়ারম্যানের বাড়িও একই এলাকায়। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে এক ছেলে এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট চাইলে তার কাছে আমি ৩৫০ টাকা রাখি। যেটি আমি কিনেছি ৩২০ টাকায়। তবে এই সিগারেট প্যাকেট ভাইস চেয়ারম্যানের জন্য কেনা হয়েছে জানার পর ২০ টাকা ফেরত দিতে চাইলেও ওই ছেলেটি টাকা না নিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরই ৭-৮ জন ব্যক্তিসহ ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম এসে আমাকে দোকান থেকে বের হতে বলে। আমি তাদের দেখে ভয়ে দোকান থেকে বাইরে বের হইনি। একপর্যায়ে চায়ের ট্রে’র মধ্যে থাকা প্রায় ২৫টি কাপ ও তিন কেজি চিনি ফেলে দেয়। এরপর কেটলির গরম লিকার আমার গায়ে ঢেলে দেয়। এ সময় আমি কান্নাকাটি করলেও তাদের মন গলেনি।
 
চা ব্যবসায়ী বলেন, কচুয়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলেও সেখানে আশপাশে তাদের লোকজন থাকায় ভর্তি হতে পারিনি। পরে আমার জামাইয়ের সহযোগিতায় ভ্যানে করে বাড়িতে যাই। সকালে আমি হাজীগঞ্জ হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসকরা ভর্তি করেন।

ভুক্তভোগীর ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফয়সাল বলেন, আমার বাবার গায়ে কেটলির গরম পানি ঢেলে দেওয়া হয়েছে। মারধর করা হয়েছে। তার পিঠ ও হাতের একাংশ ঝলসে গেছে। দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। এক সুযোগে আব্বা সেখান থেকে পালিয়ে আসছে। তা না হলে তারা আমার বাবাকে সেখানেই মেরে ফেলতো। পরিবারে অভাব ও ঋণ থাকায় আমি দিনে দোকানে বসি, আর বাবা রাতে দোকান চালান। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর আমরা আতঙ্গের মধ্যে আছি। কারণ, তারা খুবই প্রভাবশালী। 

ভুক্তভোগীর ভাই নসিমনচালক আরিফ বলেন, গভীর রাতে সিগারেটের প্যাকেটের দাম ২০ টাকা বেশি রাখার অভিযোগে আমার বড় ভাইয়ের গায়ে গরম লিকার ঢেলে দেওয়া হয়। এ সময় দোকান ভাঙচুর করা হয়। তিনি বলেন, আমরা অসহায় হওয়ায় আগেও সিগারেট নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যানের ভাই পৌরসভার কাউন্সিলর মামুন তাকে মারধর করে। তাদের কাছে সিগারেট বিক্রি করলেও দোষ, না করলেও দোষ।

হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক জালাল উদ্দিন বলেন, একজন লোক আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আমাদের জরুরি বিভাগে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এখনই কথা বলতে পারবো না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত কচুয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম বলেন, আমি এ ঘটনার সময় পাশে ছিলাম কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত না।

কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজান শিশির জানান, ঘটনাটি জেনেছি। দোকানদারকে চিকিৎসা নিতে বলেছি।

কচুয়া থানার ওসি ইব্রাহিম খলিল জানান, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ইত্তেফাক/পিও