সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৭ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গণসচেতনতাই প্রধান দাওয়াই

আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৩০

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসিতেছে না কিছুতেই। চলতি মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পাইয়াছে। গতকাল পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী দেশে এই পর্যন্ত ৭৯০ জন মারা গিয়াছে ডেঙ্গুতে। গত মাসের তুলনায় মৃত্যুর হারও অধিক। গত মাসে গড়ে দৈনিক ১১ জন করিয়া মৃত্যুবরণ করিয়াছে ডেঙ্গুতে। আর চলতি মাসে গড়ে প্রতিদিন ১৩ জনেরও অধিক প্রাণ হারাইয়াছে এই রোগটিতে। হু তথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইহার পূর্বে একাধিক বার আমাদের সতর্ক করিয়াছে; কিন্তু কোনো সতর্কবার্তায় কাজ হইতেছে না। এক দিনে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ২ হাজার ১২৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হইয়াছে। চলতি বছরের এই পর্যন্ত ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৯৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হইয়াছে। উদ্বেগের বিষয় হইল, এখন গ্রামাঞ্চলে রাজধানীর চাইতে দ্বিগুণের অধিক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হইতেছে। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার পর ডেঙ্গুতে মৃত্যু অধিক হইতেছে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে। এই দুই বিভাগে ইতিমধ্যে মারা গিয়াছে যথাক্রমে ৭১ ও ৬৯ জন।

ডেঙ্গু রোগ কী ও কেন এবং ইহার প্রতিকারই-বা কী—তাহা লইয়া গত কয়েক বছর ধরিয়া আমরা বহু লিখিয়াছি। লিখিতে লিখিতে পরিশ্রান্ত হইলে কী হইবে, ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিশ মশা এই দেশে বীরবিক্রমে তাহার বংশ বিস্তার করিয়া চলিয়াছে। আমরা বরাবরই প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতার উপর গুরুত্বারোপ করিয়া আসিতেছি; কিন্তু পূর্বে যেইখানে ইহা কেবল রাজধানীতে সীমাবদ্ধ ছিল, সেইখানে ডেঙ্গুর উপদ্রব বিভিন্ন মেট্রোপলিটন শহরসহ এখন গ্রামে-গঞ্জেও ছড়াইয়া পড়িয়াছে উদ্বেগজনকভাবে। ফলে ডেঙ্গু মোকাবিলা করা আজ বড় চ্যালেঞ্জ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। গত শুক্রবার ঢাকায় এক সচেতনতামূলক সভায় কীটতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলিলেন, এক ফোঁটা পানিতেও এডিস মশা শতাধিক ডিম পাড়িতে পারে। সেই পানিটা তিন দিনের অধিক থাকিলেই সেইখান হইতে লার্ভা তৈরি হইয়া জন্ম লইতে পারে পূর্ণাঙ্গ এডিস মশা। আমাদের ঘরের ভিতর এমন অনেক জায়গা থাকে, যেইখানে তিন দিন কেন, দিনের পর দিন পানি জমিয়া থাকে। আশপাশের জায়গার কথা তো বলাই বাহুল্য। ইহা ছাড়া নূতন নূতন ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কৃত হইতেছে যাহা আমাদের আরও বিপাকে ফেলিয়া দিতেছে। তাহা হইলে প্রশ্ন হইল, আমরা সকলে মিলিয়া কীভাবে ডেঙ্গুমুক্ত থাকিতে পারি?

অবস্থাদৃষ্টে ও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি, সমগ্র বাংলাদেশে এবং ঘরে ঘরে মশা নিধন করা কঠিন। তাই আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নাই। প্রত্যেক নাগরিককেই নিজ নিজ অবস্থান হইতে সজাগ ও সচেতন হইতে হইবে। প্রতিদিন ফ্রিজারের পশ্চাতে ও বারান্দায় কীটনাশক স্প্রে করিতে হইবে। দিনের বেলায়ও মশারি টানাইয়া ঘুমাইবার অভ্যাস গড়িয়া তুলিতে হইবে। মশারিই এখন বড় দাওয়াই—কোনো সন্দেহ নাই। কর্মস্থলে মশা থাকিলে পূর্বে মশা মারিয়া তবেই কাজে মনোনিবেশ করিতে হইবে। ঘরবাড়ি তো বটে, আশপাশের পরিবেশ সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখিতে হইবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হইবার পর প্রথম হইতেই ডাক্তারের পরামর্শে থাকিতে হইবে। ইহার পাশাপাশি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া আমরা বলিতে চাই, রাজশাহী ও খুলনাসহ যেই সকল অঞ্চলে স্যালাইনের তীব্র সংকট দেখা দিয়াছে এবং ইহাতে রোগীরা বিপাকে পড়িয়াছে, সেইখানে অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। কেননা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে দিনে এক হইতে দুই লিটার এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইহারও অধিক স্যালাইন দেওয়ার প্রয়োজন হয়; কিন্তু শিরায় প্রয়োগ করা যায়—এমন এক ব্যাগ স্যালাইন ২০০ টাকা দিয়াও কোনো কোনো অঞ্চলে ক্রয় করিতে পাওয়া যাইতেছে না। আবার প্লাটিলেট সংগ্রহেও ভোগান্তি বাড়িতেছে। সরকারি হাসপাতালগুলিতে প্লাটিলেট পৃথকীকরণে প্রয়োজনীয় মেশিনের সংকট রহিয়াছে। এই জন্য বেসরকারি হাসপাতালে ছুটিতেছে রোগীরা এবং সেইখানে প্রতি ব্যাগ প্লাটিলেট সংগ্রহে খরচ হইতেছে ২০-৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই সংকটেরও অবসান হওয়া একান্ত প্রয়োজন।

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন