ভারতের সঙ্গে পূর্বঘোষিত ‘বাণিজ্য মিশন’ নামের বহুল প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা সরকার। নির্ধারিত সূচি মোতাবেক আগামী মাসে ভারতে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর কথা ছিল অটোয়ার। কিন্তু হঠাৎই সেই সফর বাতিল করা হয়েছে। অক্টোবরে দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও কারণ উল্লেখ না করেই শুক্রবার এ ঘোষণা দিয়েছেন কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী ম্যারি নাগের মুখপাত্র শান্তি কসেন্টিনো।
তিনি বলেছেন, ভারতে আসন্ন বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করছি আমরা। অবশ্য আগের দিন ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ‘কানাডায় রাজনৈতিক ইস্যুতে’ একটি বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী ম্যারি এনজির নেতৃত্বে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালাতে অক্টোবর মাসে দিল্লিতে আসার কথা ছিল একটি প্রতিনিধিদলের। কিন্তু সেই সফর বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট করেনি কানাডা। তবে ২০১৭ সালের জুনে শিখস ফর জাস্টিস (এসএফজে) নামের একটি সংগঠন ২০২০ সালে পাঞ্জাবের স্বাধীনতার দাবিতে এক গণভোটের আয়োজনের ডাক দিয়েছিল।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে কানাডা ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই গণভোটের পক্ষে প্রচারণা চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয় সে সময়। ভারতে নিষিদ্ধ খালিস্তানপন্থিদের কানাডায় বিতর্ক কর্মকাণ্ডে দিল্লি অটোয়ার সম্পর্কের অবনতি ২০২৩ সালে দৃশ্যমান হলো। এই বিতর্ক নতুন করে উসকে দিলেন নরেন্দ্র মোদি। দিল্লিতে সদ্য শেষ হওয়া জি-২০ সম্মেলনের এক ফাঁকে তিনি শিখ ইস্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সমালোচনা করেন।
ভারতীয় বিশ্লেষকদের মতে, দেশটিতে খালিস্তানিদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কানাডাকে কড়া বার্তা দিয়েছে ভারত। দিল্লিতে সদ্য সমাপ্ত জি-২০ সম্মেলনেও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই টানাপড়নের জেরেই থমকে গেছে বাণিজ্য চুক্তি। ২০১০ সাল থেকেই ভারত ও কানাডার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। গত বছর আনুষ্ঠানিকভাবে এই আলোচনা আবার শুরু হয়। মাত্র তিন মাস আগেই দুই দেশই জানিয়েছিল, চলতি বছরের মধ্যেই মুক্ত বাণিজ্য নিয়ে একটি চুক্তি করতে চায়। কানাডায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত সঞ্জয় কুমার ভার্মা দেশটির সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, অটোয়া আপাতত আলোচনায় বিরতি চেয়েছে। যদিও কেন এই সিদ্ধান্ত, সে বিষয়ে তিনি কিছু স্পষ্ট করেননি।
সম্প্রতি কানাডায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে খালিস্তানিরা। নিশানা করা হয়েছে ভারতীয় দূতাবাসকে। নানা প্রান্তে ‘কিল ইন্ডিয়া’ পোস্টারও লাগানো হয়। এই বিষয়ে ট্রুডো সরকারকে কড়া বার্তা দিয়েছে ভারত। তবে বিশেষ ফল মেলেনি। কানাডার জনসংখ্যার একটা বড় অংশই শিখ। তাদের মধ্যে খালিস্তানি আদর্শ বেশ জনপ্রিয়। সেই কারণেই বরাবর শিখ ভোটারদের মন জয় করতে চেয়ে খালিস্তানিদের নিয়ে নীরব থেকেছে কানাডার রাজনৈতিক দলগুলো। কয়েক দিন আগেই এই বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, ভোটব্যাংকের কথা মাথায় রেখে যেভাবে খালিস্তানিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কানাডা, তার প্রভাব পড়েছে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে।
গত মে মাসে কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী নাগ এবং ভারতের পীযূষ গোয়াল যৌথ বিবৃতি জানিয়েছিলেন, বছরের শেষ নাগাদ তাদের দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে আশাবাদী। যা এখন ভেস্তে যাওয়ার পথে। জি-২০ সম্মেলন থেকেই বিষয়টি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। যখন নরেন্দ্র মোদি জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসেননি। তখন থেকে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন ওঠে।