শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

চট্টগ্রাম মেডিক্যালে অচল যন্ত্রপাতি সচল হচ্ছে না

মেরামত নিয়ে সরবরাহকারীর সঙ্গে জটিলতা

আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:০০

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ভারী যন্ত্রপাতি একের পর এক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট মেশিন মেরামত নিয়ে চলছে দীর্ঘসূত্রতা। এমআরআই, ব্র্যাকিথেরাপি ও ক্যাথল্যাবের পর সিটি স্ক্যান ও মেমোথেরাপি মেশিনও নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু মেশিনগুলো মেরামতের মাধ্যমে সচল করে সেগুলো ব্যবহারের উপযোগী করা যাচ্ছে না। কারণ, যন্ত্রগুলোর মেরামত নিয়ে মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রক্রিয়াগত জটিলতা দেখা দিয়েছে। 

অভিযোগ উঠেছে, এসব মেশিন কেনার ক্ষেত্রে দুর্বল চুক্তির কারণে সাপ্লাইয়ার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। নষ্ট মেশিন মেরামতের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেখে থাকে। এখন মন্ত্রণালয়ে মেরামতকাজের প্রক্রিয়া আটকে আছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নষ্ট মেশিন মেরামতের জন্য মন্ত্রণালয় বারবার চিঠির মাধ্যমে তাগাদা দেওয়ার পরও কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এতে রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে রোগীরা। চিকিৎসকেরা জানান, নষ্ট মেশিনগুলোর বাজারমূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এমআরআই মেশিনটি নষ্ট হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। ব্র্যাকিথেরাপি ও ক্যাথল্যাব মেশিন নষ্ট প্রায় সাত-আট মাস যাবত। ছয় মাস আগে নষ্ট হয় নারীদের ব্রেস্ট ক্যানসার নির্ণয়ের মেমোথেরাপি মেশিনের প্রিন্টার। আর দুই মাস আগে অচল হয় হাসপাতালের একমাত্র সিটি স্ক্যান মেশিনটি। এটির সফটওয়্যার ও টিউবে ত্রুটি দেখা দিয়েছে।

এসব মেশিনে যেসব পরীক্ষা করা হয়, সেগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। পরীক্ষার খরচ কিছুটা কম বলে সরকারি হাসপাতালগুলোই দরিদ্র রোগীদের ভরসা। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেশিনগুলো নষ্ট থাকায় দরিদ্র রোগীরা পড়েছে বিপাকে। বাইরে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে বিপুল ব্যয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর সামর্থ্য অধিকাংশ রোগীরই নেই। রেডিওলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, প্রতিদিনই এমআরআই, সিটি স্ক্যান ও মেমোথেরাপি পরীক্ষার জন্য রোগীরা ভিড় করছে। অনেক আগে থেকেই এমআরআইয়ের সিরিয়াল বন্ধ রাখা হয়েছে। রেডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার বলেন, হাসপাতালে কোটি কোটি টাকা দামের চিকিৎসা উপকরণ রয়েছে। অথচ এসব মেশিন মেরামতের জন্য একজন ইঞ্জিনিয়ারের পদ সৃজন করা হয়নি। ছোটখাটো জটিলতার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলেন, মেডিক্যালের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে দুর্বল চুক্তির কারণে পরবর্তী সময়ে মেশিন মেরামতে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

চিকিৎসকেরা জানান, দীর্ঘদিন যাবত মূল্যবান মেশিনগুলো অচল থাকায় সেগুলোর কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে ১২ লাখ ৩০ হাজার ডলারে বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় এমআরআই মেশিনটি কেনা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট রেডিওলজি বিভাগে এমআরআই মেশিনটি বসানো হয়। মেশিনটির ওয়ারেন্টির মেয়াদ ছিল তিন বছর। ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেশিনটি মেরামতের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেডকে জানালে তারা মেরামতের জন্য ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার চাহিদাপত্র পাঠায়। পরে মেডিটেল কোম্পানি মেশিনটি মেরামত করে। ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নিরবচ্ছিন্ন সেবা পেতে সিএমসি করার জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে দ্বিতীয়বার চিঠি দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ৯ মার্চ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এক বছরের সিএমসি বাবদ ১ লাখ ১০ হাজার ডলার বা ৯৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বলছে, আগে এক বছরের জন্য সিএমসি (কম্প্রিহেনসিভ মেইন্টেন্যান্স কন্ট্রাক্ট) করতে হবে। তখন তারা মেরামতের উদ্যোগ নেবে। সিএমসি করতে গেলে প্রতি মাসে ৯ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

রেডিওথেরাপি বিভাগের ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনটি ২০২২ সালের ১৪ জুন থেকে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এটি দিয়ে নারীদের জরায়ুর ক্যানসারের চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব প্রকৌশলীরা মেশিনটি চালুর চেষ্টা করলেও মেশিনের কিছু পার্টস না থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি। বিষয়টি মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করা হলে জবাবে তারা জানায়, জার্মানি থেকে একসঙ্গে পাঁচটি মেশিন কেনা হয়েছিল। তার মধ্যে তিনটি মেশিনের ৩০ শতাংশ টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি। বাকি টাকা পরিশোধ করা না হলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেশিনগুলোর ওয়ারেন্টি সার্ভিস প্রদান ও মেডিক্যাল ফিজিসিস্ট সাপোর্ট দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে। ফলে এখন মেশিনটি অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, নষ্ট মেশিন মেরামতের প্রক্রিয়া নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রায়ই কথা হচ্ছে। এমআরআই মেশিন নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু কমিটি এখনো মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট জমা দেয়নি। সিটি স্ক্যান মেশিন হয়তো দ্রুত সময়ে চালু করা যাবে।

ইত্তেফাক/এমএএম