বাংলা সিনেমার আশীর্বাদ হয়ে এসেছিলেন জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ। আজ মঙ্গলবার ৫৩তম জন্মদিন আজ। বরাবরের মতো ক্ষণজন্মা এই নায়ককে ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করছে তার কোটি ভক্ত। ১৯৭১ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তার পারিবারিক নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। সিনেমার জন্যই তিনি সালমান শাহ নামটি ধারণ করেছিলেন। ফ্যাশানআইকন সালমান শাহ তার অভিনয় ও সুদর্শন চেহারার জন্য খুব সহজেই সকলের প্রিয় উঠেছিলেন। কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমার মাধ্যমে তার অভিনয় জগতে অভিষেক হয়েছিল। বিভিন্ন সিনেমায় সালমানের ফ্যাশান তরুণ সমাজের মধ্যে যেন ঝড় তুলেছিল। সালমান শাহ তার তিন বছরের ক্যারিয়ারে প্রথমে চিত্রনায়িকা মৌসুমী এবং পরে শাবনূরের সঙ্গেই সর্বোচ্চ সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়ে গেছেন।
সালমান শাহ পড়াশুনা করেন খুলনার বয়রা মডেল হাই স্কুলে। ওই স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমী তার সহপাঠী ছিলেন। পরে ১৯৯৩ সালে একই সঙ্গে দুজনের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। সে বছর সালমান-মৌসুমী জুটি বেঁধে অভিনয় করেন সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে। সেই থেকে একবারের জন্যও পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
মৌসুমীর ভাষ্য, সালমান শাহর সঙ্গে আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল তার। তারা তখন খুলনায় থাকতেন। এই পরিচয় প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, ‘ছোটবেলায় ইমন (সালমান শাহর ডাকনাম) আর আমি প্লে গ্রুপ ও নার্সারিতে একসঙ্গে পড়েছি। বাবার চাকরির কারণে ইমনের পরিবার খুলনা সার্কিট হাউসে থাকত।
ওই স্কুলে আমার ফুফু ছিলেন টিচার। ফুফুর ছুটি হওয়া পর্যন্ত ইমনদের বাসায় আড্ডা দিতাম। সেও আমাদের বাসায় যাওয়া-আসা করত। ভালো বন্ধুত্ব হয়। এরপর হঠাৎ ওরা ঢাকায় চলে আসে। বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর দেখা হওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা থাকে, তা ছবিটি করতে গিয়ে নতুন করে টের পাই। ছবির কাজে আবার নিয়মিত দেখা হয়।
খুলনার পরে সালমান শাহ ও মৌসুমীর দেখা হয় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগে। পরে তারা শুটিং শুরু করেন। সেখানেও তাদের পুরোনো আড্ডা জমে যায়।
সে প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, ‘খুব অল্প সময়ে আমাদের সম্পর্ক আবার আগের রূপ নেয়। নিজেদের সবকিছুই একজন আরেকজনকে বলতাম। আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে তো পরিচালক সোহান ভাই একপর্যায়ে ভুল বুঝতে শুরু করলেন। তিনি ভাবলেন, আমরা একজোট হয়ে গেছি।’
বিভিন্ন সময় পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানও জানিয়েছিলেন, মৌসুমী ও সালমানের ভেতর আগে থেকেই বন্ধুত্ব ছিল। শুটিংয়ের সময় আগে পরিচয় ছিল, এমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখেছেন তাদের মধ্যে।
এদিকে প্রথম সিনেমায় মৌসুমীর সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয়ে এলেও দ্বিতীয় সিনেমা তুমি আমার-এ নায়িকা হিসেবে পেয়েছিলেন শাবনূরকে। এরপর তারা দুজন জুটি হয়ে ১৩টি সিনেমায় অভিনয় করেন। এ জুটির বেশির ভাগ সিনেমা ব্যবসায়িক সফলতা পাওয়ার পাশাপাশি দর্শকনন্দিতও হয়েছে। সালমান শাহর সঙ্গে চিত্রনায়িকা শাবনূরের পর্দার রসায়ন ছিল নজরকাড়া। এ জুটির বাস্তব জীবনের রসায়ন নিয়েও তুমুল চর্চা হতো। সালমান-শাবনূরের তখনকার সম্পর্ক নিয়ে এখনো চর্চা হয়।
সালমানের জন্মদিনে তার ছেলেমানুষীর গল্প শোনালেন শাবনূর। তিনি বলেন, ‘সালমানের মধ্যে ছেলেমানুষি ব্যাপার বেশি কাজ করত। জনপ্রিয় নায়ক হলেও সে ছিল খুবই খোলা মনের একজন মানুষ।’ তিনি আরও বলেন, ‘কখনোই তাকে স্থির থাকতে দেখিনি। খুব প্রাণচঞ্চল একজন মানুষ ছিল। ওর মধ্যে ছেলেমানুষি কাজ করত বেশি। মানুষ হিসেবে খুব শৌখিনও ছিল। টাকাপয়সা নিয়ে খুবই উদাসীন ছিল। সেভাবে ভাবত না। যা আয় করত, তা-ই খরচ করে ফেলত বলা যায়।
গাড়ির প্রতি সালমানের ছিল খুব বেশি আগ্রহ। বাজারে নতুন গাড়ি এলেই তার কিনতে হবে। সালমান গাড়ি চালাতেও খুব ভালোবাসত। শুটিং শেষে প্রায়ই সামিরা, আমার মাসহ গাড়িতে ঘুরতে বের হতাম।’
সিনেমায় অভিষেকের আগের বছর অর্থাৎ ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট তার খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন সালমান শাহ। দাম্পত্য জীবনের ৪ বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎই মাত্র ২৫ বছর বয়সে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেন এই অভিনেতা। ওইদিন ঢাকার ইস্কাটনে নিজ বাসার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার এই আকস্মিক মৃত্যু স্তব্ধ করে দেয় পুরো দেশকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হলেও তার মৃত্যু নিয়ে এখনো রহস্য রয়ে গেছে।
সালমান শাহ অভিনীত সিনেমার মধ্যে অন্যতম- কেয়ামত থেকে কেয়ামত, তুমি আমার, অন্তরে অন্তরে, সুজন সখী, বিক্ষোভ, দেনমোহর, বিচার হবে, এই ঘর এই সংসার, আনন্দ অশ্রু। তবে, তার অভিনীত প্রতিটি সিনেমাই ব্যবসায়িক সফলতা পেয়েছিলো।