রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

আমার দেখা আধুনিক শিল্প উদ্যোক্তা

আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৭

প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান একজন উদীয়মান শিল্প উদ্যোক্তা, অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন ব্যক্তি। হাস্যোজ্জ্বল উচ্ছল প্রাণবন্ত একজন মানুষ। পড়ালেখা শেষ করে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস ব্যবসায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। অল্প সময়ে গার্মেন্টস ব্যবসায় অসামান্য অবদান রাখতে না রাখতেই পরিবারের ডাকে ২০০৬ সালে লেকচার পাবলিকেশন্সে যোগ দেন। তিনিই প্রথম লেকচার পাবলিকেশন্সকে লিমিটেড কোম্পানি রূপে নিবন্ধন করেন এবং অল্প সময়ে দেশের অন্যান্য পাবলিকেশন্স থেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় পাবলিকেশন্সে উন্নীত করেন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তির সতর্ক ব্যবহার করে প্রকাশনা জগতে লেকচার পাবলিকেশন্সকে বাংলাদেশের ১ নম্বর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেন। আমার ছোটবেলায় স্কুলের পাঠ্যবই ক্রয় করতে শহরে বন্দরে গেলে একমাত্র পুঁথিঘর লাইব্রেরির কথা শুনেছি। গত প্রায় চার দশক পুঁথিঘরের নাম ততটা নেই। এখন একটি নাম সবার মুখে মুখে। লেকচার পাবলিকেশন্স, যেখানে গেলে সব বই পাওয়া যায়।

১৯৯৪ সালে সাংবাদিকতার সুবাদে আমি ‘দৈনিক খবর’-এর স্টাফ রিপোর্টার হয়ে একটি নিউজ কভার করতে চট্টগ্রাম যাই। তখন দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী র্যাংগস গ্রুপের স্বত্বাধিকারী এ রউফ চৌধুরীর সি রিসোর্সেস প্রতিষ্ঠানের ১৪টি ট্রলার জব্দের বিষয়ে বন্দর থানায় মামলা হয়। সি রিসোর্সেস প্রতিষ্ঠানটি গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরে ফ্রোজেন করে থাইল্যান্ডে বিক্রি করত। মামলার বাদীপক্ষ চট্টগ্রামের তত্কালীন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এ নিয়ে দেশের শীর্ষ দৈনিকগুলো ধারাবাহিক নিউজ করে। আমি ডিসির সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত জেনে দৈনিক খবরে ধারাবাহিক প্রতিবেদনসহ আরো সাতটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় নিউজ করি। রউফ চৌধুরী আমাকে ডেকে পাঠান তার অফিসে। তিনি আমাকে সত্যপ্রকাশে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। একটা সময় তিনি তার কিছু কাজের জন্য আমাকে খণ্ডকালীন দায়িত্ব দেন। পরে আমি প্রখ্যাত সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খানের দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় যোগদান করে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর কাজ করি। আমার এক বন্ধু করপোরেট ব্যক্তিত্ব সাব্বির হোসেন খান আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন অমিকন গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসানের সঙ্গে। বলে রাখি—এরই মধ্যে প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান আরো অন্যান্য সফল নতুন ব্যবসার সূচনা করেন এবং অমিকন গ্রুপের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আমার কথা শুনে বলেন, আমার গ্রুপে আপনার মতো একজন কর্মকর্তা দরকার। সাব্বির ভাইয়ের অনুরোধে আমি কনসালট্যান্ট হিসেবে প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসানের অমিকন গ্রুপে যোগদান করি। তিনি তার মাসিক পত্রিকা ‘এডুকেশন টুডে’র সম্পাদকের দায়িত্ব আমাকে দেন। পত্রিকাটি যথাসময়ে মিডিয়া তালিকাভুক্ত করি। তিনি প্রধান সম্পাদক আর আমি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি। এডুকেশন টুডে ইতিমধ্যে প্রচুর পাঠক সমাদৃত হয়েছে।

মধ্যবিত্ত ঘরের আদর্শ পিতা-মাতার সন্তান প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসানের জন্ম ১৯৮৪ সনে আমিরাবাদ, গৌরীপুর, দাউদকান্দি, কুমিল্লাতে। বনানী এআইইউবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন। ছোটবেলা থেকেই প্রচণ্ড মেধাবী এবং তুখোড় ছাত্র মেহেদী হাসান কখনো দ্বিতীয় হননি। তার দূরদর্শিতাই ব্যবসাসফল ব্যক্তি হিসেবে তাকে পরিণত করেছে। একবার মেহেদী হাসানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে অফিসে আমিও উপস্থিত ছিলাম। তার পিতা লেকচার পাবলিকেশন্সের সমবেত অফিস কর্মচারী, কর্মকর্তা এবং আগত অতিথির উদ্দেশে বলেন—আপনারা আমার ছেলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবনের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন। মেহেদী বর্তমান প্রজন্মের সন্তান। আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে তার যে অগাধ জ্ঞান, তা তিনি কাজে লাগাচ্ছেন। ছেলের প্রতি আন্তরিকতা আমাকে গভীর আত্মবিশ্বাস ও প্রেরণা দিয়েছে।

কুমিল্লার আর একজন খ্যাতনামা ব্যক্তি অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় ৩০ বছরের মতো। তিনি একদিন আমাকে বলেন, ‘আমি বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার পারিবারিক নাক কান গলার চিকিত্সক। এই সুবাদে আমার জনপ্রিয়তা বেড়ে গেলেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আমার যোগ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে বঞ্চিত হই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারে এসে ঠিকই আমাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব দেন এবং সবশেষ কুমিল্লার একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন দেন এবং আমি নির্বাচিত হই।

প্রসঙ্গের অবতারণা এই জন্য যে, জ্ঞানী, গুণী ব্যক্তিরা একসময় জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহণ করেন। মেহেদী হাসান, রউফ চৌধুরী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারা যথাক্রমে ১৬, ২২ ও ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অসংখ্য বরেণ্য ব্যক্তি এই সেপ্টেম্বর মাসেই জন্মগ্রহণ করেছেন।

প্রকৌশলী মেহেদী হাসান পরপর দুই বার দেশের সেরা করদাতা মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন—মানুষের বড় হওয়ার জন্য তিনটি জিনিস প্রয়োজন। প্রথম হলো বংশপরিচয়, দ্বিতীয় পারিবারিক স্নেহ ভালোবাসায় বেড়ে ওঠা এবং তৃতীয়ত প্রচুর জ্ঞান অর্জন ও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া। এই তিনটি গুণের  প্রতিফলন ঘটেছে বলে তিনি আজ বড় মানুষ। ২০১৬ সালে প্রকৌশলী মেহেদী হাসান তত্কালীন দেশে জঙ্গিবাদ উত্থান এবং শিক্ষাঙ্গনে প্রতিরোধ করণীয় একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন পরামর্শ দেন। আমি কয়েক জন খ্যাতনামা ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ করি এবং গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম এবং জার্নালিজমের প্রধান অধ্যাপক শহীদুল আলমসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে গোলটেবিলে প্রকৌশলী মেহেদী হাসান অনবদ্য বক্তব্য রেখে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মাত্র ৩৩ বছর বয়সের মানুষটির দূরদর্শী বক্তব্য আমাকেও মুগ্ধ করেছে। এই দেশে শিল্প বিকাশে তার অবদান তরুণ প্রজন্মকে উত্সাহ প্রদান করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

লেখক: সাংবাদিক ও কলাম লেখক

ইত্তেফাক/কেকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন