রোববার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

সাইবার সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব থাকিতে হইবে

আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৩০

‘ইনফরমেশন ইজ পাওয়ার’—একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল বিশ্বে এই কথার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব না দিয়া উপায় নাই। ব্যক্তিগতভাবেই হউক কিংবা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রসঙ্গই টানা হউক, যাহার হাতে যত বেশি তথ্য থাকিবে, সকল ক্ষেত্রে তাহার আধিপত্য থাকিবে তত বেশি। ইহাই বর্তমান বাস্তবতা। তবে এই বাস্তবতার নেতিবাচক দিক হইল তথ্য চুরি এবং তথ্যে অযাচিত হস্তক্ষেপ। আর এই কাজটি খুব ভালোমতো আয়ত্তে আনিয়াছে ‘হ্যাকার গ্রুপ’। ইনফরমেশন ওয়ারফেয়ারের যুগে হ্যাকারদের দৌরাত্ম্য কেবল বাড়িতেছেই। হ্যাকারদের কালো থাবা পড়িতেছে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও। ইহা লইয়া নিকট অতীতে বড় ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতাও রহিয়াছে আমাদের। এখন প্রশ্ন হইল, ‘তথ্য দ্বারা চালিত বিশ্বে’ বসবাস করিয়া তথ্যকে সুরক্ষিত রাখিবার প্রশ্নে কতটুকু সতর্ক হইয়াছি আমরা; এবং এই ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতাই-বা কতটুকু?

স্মরণে থাকার কথা, নিজেদের ভারতীয় হ্যাকার হিসাবে দাবি করিয়া গত ৩০ আগস্ট একটি হ্যাকার গ্রুপ বাংলাদেশে সাইবার হামলা চালানোর ঘোষণা দেয়। এই গ্রুপের ঘোষণা ছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর দেশে সাইবার হামলা চালাইবে তাহারা। ইহার পর চলতি মাসের ৩ তারিখে আরেক ঘোষণায় তাহাদের পক্ষ হইতে হুমকি আসে, আগামী বছরের ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে আরেকটি হামলা চালানো হইবে। তথ্য বেহাত ইহবার প্রশ্নে অতীত অভিজ্ঞতা যেই হেতু আমাদের সুখকর নহে, তাই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে আমলে লইয়া ৯ সেপ্টেম্বর সতর্কতা জারি করে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (সার্ট)। ১২ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্টদের লইয়া বৈঠক করিয়া সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলিকে সতর্ক থাকিবার পরামর্শও দেওয়া হয়।

হ্যাকার গ্রুপের দাবি, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত দিন তথা ১৯ সেপ্টেম্বর সত্যি সত্যিই সাইবার হামলা চালাইয়াছে তাহারা! শুধু তাহাই নহে, গ্রুপটি দাবি করিতেছে, দুইটি বেসরকারি হাসপাতালসহ নৌবাহিনীর ওয়েবসাইটে আক্রমণ করিতে সক্ষম হইয়াছে তাহারা। গণমাধ্যমগুলির খবর বলিতেছে, দেশের ১৫টি ওয়েবসাইটে হামলা চালাইয়া অজস্র তথ্য চুরি করিয়া লইয়াছে হ্যাকাররা। উদ্বেগের বড় কারণ হইল, জাতীয় পরিচয়পত্রের সাইটেও হামলা চালানো হইয়াছে বলিয়া দাবি করা হইতেছে। সত্য হউক কিংবা মিথ্যা, ইহা অতি উদ্বেগজনক সংবাদ। দেশের প্রায় ১২ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য রহিয়াছে যেই ওয়েবসাইটে (এনআইডি সার্ভার), তাহা সাইবার হামলার শিকারে পরিণত হইলে যে কী অনর্থ ঘটিবে, তাহাই বিবেচ্য বিষয়! তাহা ছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এনআইডি কার্ডের গুরুত্ব কতখানি, তাহাও অজানা নহে কাহারো। এই ঘটনায় এনআইডি কর্তৃপক্ষ দাবি করিয়াছে, হামলার কোনো ঘটনা ঘটে নাই। যদিও ১৯ সেপ্টেম্বর সকাল হইতে এই লেখা পর্যন্ত এনআইডি সার্ভার বন্ধ পাওয়া গিয়াছে। উল্লেখ করিবার বিষয়, মাঝেমধ্যেই দেশে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটিবার সংবাদ দৃষ্টিগোচর হয়! ইহা যে কতখানি মাথাব্যথার কারণ, আজিকার বিশ্বে তাহা কে না জানে?

তথ্যের বিশ্বে তথ্য হাতাইয়া লইবার প্রবণতা থাকিবেই—ইহা অস্বাভাবিক নহে। কিন্তু তথ্য সুরক্ষিত রাখিবার বিষয়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়া দেখিতে হইবে। যে কোনো রাষ্ট্রের জন্যই এই কথা প্রযোজ্য। তথ্য বেহাত হওয়ার অর্থই হইতেছে ‘ঘরের চাবি পরের হাতে’ চলিয়া যাওয়া। বিশেষ করিয়া রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইহার কারণে চড়া মাশুল গুনিতে হয় এবং তাহা যদি হয় ‘এনআইডির মতো গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়’। বাস্তবতা হইল, হ্যাকারদের কালো থাবা শুধু এই অঞ্চলে পড়িয়া থাকে, ব্যাপারটি এমন নহে। কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন করিয়া চলিবার তো বিকল্প নাই। আমরা বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট শাখা এই সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করিবে।

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন