দিনভর রাজধানীতে ছিল বৃষ্টির আবহ। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। টানা ছয় ঘন্টার অভাবনীয় ভারী বর্ষনে ডুবে গেছে নগরীর অনেক সড়ক। এতে ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের। বৃষ্টিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে গোটা রাজধানী। ডুবে যায় শহরের প্রায় সকল সড়কসহ অলিগলি। বেশিরভাগ এলাকার ফুটপাতও ছিল পানির নিচে। চলতি বছরের মধ্যে গতকালের বৃষ্টিতে ভোগান্তির মাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি। লম্বা সময় ধরে একই স্থানে আটকে আছে অসংখ্য যানবাহন।
আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মক্ষেত্র থেকে ঘরে ফেরা মানুষজন। লম্বা সময় ধরে একই স্থানে আটকে আছে অসংখ্য যানবাহন। হেঁটে যেখানে যেতে ১০ মিনিট লাগে, গাড়িতে সেই জায়গায় যেতে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগেছে।
ভারী বৃষ্টিপাতে ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, মিরপুর, বনানী, ফার্মগেট, তেজগাঁও, মতিঝিল, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর,মিরপুর রোড,কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউর বিভিন্ন অংশ, আসাদ গেট, তেজতুরী বাজার, কারওয়ান বাজার, রায়েরবাজার,হাজারীবাগ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকাজুড়ে ঘরে ফেরা মানুষের দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়। দৈনিক বাংলা, পুরানা পল্টন, বিজয়নগর, সেগুনবাগিচা থেকে শুরু করে সংলগ্ন এলাকায় রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
রাজধানীর নিচু এলাকাগুলিতে হাঁটু থেকে কোমর পানিতে ঢেউ খেলছে। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জলবাদ্ধতার খবর জানিয়েছেন। রাত ১১টার দিকে রাজধানীর বেগম রোকেয়া সরণিতে কয়েক শ গাড়ি আটকা পড়ে। এর আধা ঘণ্টা আগেই তলিয়ে যায় গ্রিন রোড এলাকা। রাত সোয়া ১০টার দিকে ওই সড়কে বহু গাড়ি আটকে থাকতে দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদদের ভাষায় এটি অতিভারী বর্ষণ। সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে আগামী দুদিন এমন বর্ষণের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাত ১২টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত সারাদিনের গড় বৃষ্টিপাত ছিল ৯ মিলিমিটার। তবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ২৩ মিলিমিটার গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় লঘুচাপ রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় রয়েছে। এর প্রভাবে আগামী দু’দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪ মিলিমিটার-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে।
শুক্রবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।