বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

১০ দিনের তদন্ত শেষ হয়নি এক মাসেও

উত্তর সিটির বিটিআই জালিয়াতি

আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৪০

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) সরবরাহ করা মশার লার্ভা নিধনের জৈব কীটনাশক বিটিআই (বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস) আমদানিতে জালিয়াতির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এক মাস পার হলেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রতারণার কারণে সেই পাঁচ টন বিটিআই প্রয়োগও বন্ধ রয়েছে। ফলে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে প্রতিদিনই। সিটি করপোরেশন বলছে, তারা নিজেরাই এখন সরাসরি কীটনাশক আমদানি করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ডিএনসিসিতে এ ওষুধ আমদানিতে একটি সিন্ডিকেট কাজ করেছে, যাদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও রয়েছেন। যে কারণে জালিয়াতি হওয়ার পরেও দায়সারা তদন্ত কমিটি ও কারণ দর্শানোর নোটিশেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। প্রতিবেদন জমা না হওয়ার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘কিছু টেকনিক্যাল কারণে এখনো প্রতিবেদন জমা হয়নি। এই মাসের ভেতর হয়তো প্রতিবেদন জমা হবে। কমিটি কাজ করছে। আমাদের কিছু কর্মকর্তা ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় একটু দেরি হচ্ছে।’

এর আগে সরবরাহ করা পাঁচ টন বিটিআই বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সিঙ্গাপুরে উত্পাদিত এবং তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে। কিন্তু বেস্ট কেমিক্যাল এটি তাদের উত্পাদিত এবং সরবরাহ করা নয় বলে নিজেদের ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে জানায়। এরপর সব প্রমাণ দাখিলসহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য মার্শাল অ্যাগ্রোভেটকে পরপর দুইটি চিঠি দেয় সিটি করপোরেশন। বিটিআই নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার ছয় দিন পর গত ১৯ আগস্ট তদন্ত কমিটি করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটির প্রধান ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দিন। ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, তদন্ত কমিটি আগামী ১০ দিনের মধ্যে উত্থাপিত জালিয়াতির  অভিযোগ ও দরপত্র প্রক্রিয়াসহ সার্বিক বিষয় তদন্ত করে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।

বিটিআই দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি থেকে দেখা যায়, গত ১১ এপ্রিল মশার লার্ভা নিধনের উদ্দেশ্যে বিটিআই ব্যাকটেরিয়া কেনার বিজ্ঞপ্তি দেয় ঢাকা উত্তর সিটির রাজস্ব বিভাগ। এতে বিটিআইয়ের উত্পাদক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, সিংগাপুর, ভারত অথবা মালয়েশিয়ার নাম ছিল। অর্থাত্ এই দেশগুলোর কোনো একটি থেকেই ব্যাকটেরিয়াটি আমদানি করতে হবে। কিন্তু মার্শাল অ্যাগ্রোভেট দরপত্রের ঐ শর্ত ভঙ্গ করে বিটিআই চীন থেকে আমদানি করেছে। চীনা কোম্পানির তথ্য গোপন করতেই প্রস্তুতকারক হিসেবে তারা সিংগাপুরের বেস্ট কেমিক্যালের নাম ব্যবহার করেছে।

পরবর্তী সময়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি তাদের সরবরাহ করা বিটিআই যে বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে উত্পাদিত বা তাদের দ্বারা সরবরাহ করা হয়েছে, এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি। এ বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ডিএনসিসির ইমেইল থেকে সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, মার্শাল অ্যাগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে বিটিআই সরবরাহ করা হয়নি এবং তারা এ প্রতিষ্ঠানের নিযুক্ত পরিবেশকও নয়। এ ছাড়া মার্শাল অ্যাগ্রোভেট মি. লি কিয়াং নামে এক ব্যক্তিকে বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিটিআই এক্সপার্ট ও রপ্তানি ব্যবস্থাপক বলে যে দাবি করেছে, তা মিথ্যা। ঐ ব্যক্তি বেস্ট কেমিক্যালের কর্মকর্তা নন।

ইত্তেফাক/এএইচপি