বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

দর্শক ভুলতে বসছে সপ্তম টেস্ট ভেন্যু

আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:০০

কবে শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে তা আর মনে করতে পারেন না রূপসা-ভৈরব পাড়ের ক্রিকেট ভক্তরা। আবার কবে এ স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়েও দর্শকদের মধ্যে নেই কোনো মাতামাতি। খুলনার দর্শকরা যেন ভুলেই গেছে, শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা! অথচ এ স্টেডিয়ামটিই দেশের সপ্তম টেস্ট ভেন্যু।

এদিকে, স্টেডিয়ামটির অবস্থাও জরাজীর্ণ। গ্যালারিতে দর্শকদের বসার জন্য প্রায় ১০ হাজার চেয়ার থাকলেও অযত্ন-অবহেলায় অর্ধেকের বেশিই নষ্ট হয়ে গেছে। মিডিয়া বক্স, ইলেকট্রনিক্স স্কোর বোর্ড, প্যাভিলিয়ন ভবন, সাইড স্ক্রিন সবকিছুই ভঙ্গুর অবস্থায়। গত বছর ঘরোয়া লীগ অনুষ্ঠিত হলেও এ বছর কোনো খেলা হয়নি এ স্টেডিয়ামে। তবে ভেন্যু ইনচার্জ মো. মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল জানান, নিয়মিত মাঠের ঘাসকাটা, ঘাস লাগানো ও পিচ পরিচর্যা করা হয়।

খুলনা বিভাগের ক্রিকেটার ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কথা চিন্তা করা যায় না। হাবিবুল বাশার সুমন, মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, এনামুল হক বিজয়, ইমরুল কায়েস, তুষার ইমরান, সৌম্য সরকার, মুস্তাফিজুর রহমানরা এই বিভাগেরই। খুলনা বিভাগ থেকে উঠে আসা বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এক একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। কিন্তু এই নক্ষত্রদের হোমগ্রাউন্ডেই দীর্ঘদিন হয় না আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ!

খুলনা মহানগরীর খুলনা-যশোর সড়কের পাশে মুজগুন্নী এলাকায় শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম অবস্থিত। ২০০৪ সালে এই স্টেডিয়াম উদ্বোধনের পর ঐ বছরই আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের কয়েকটি ম্যাচ হয়। এর ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এই স্টেডিয়ামের যাত্রা। ২০০৪ সালে এই স্টেডিয়ামে দর্শকের ধারণ ক্ষমতা ছিল ১৫ হাজার। এরপর ২০১২ সালে স্টেডিয়ামটির ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে ২০ হাজার করা হয়। ২০০৬ সালে এই স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের অনুমোদন পায়। এই মাঠে সবশেষ টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৫ সালে, পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেছিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সবশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৬ সালের ২২ জানুয়ারি। জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশ সিরিজের চারটি টি-টোয়েন্টিই হয়েছিল এখানে। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে বয়সভিত্তিক নানা প্রতিযোগিতা, সবই অনুষ্ঠিত হয় এখানে।

২০১৬ সালের ৫ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম। কিন্তু এরপর দীর্ঘ সাত বছরেও স্টেডিয়ামের কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে দিনে দিনে ক্ষতিগ্রস্ত স্টেডিয়ামটি আরও জরাজীর্ণ হয়েছে। গ্যালারি, মিডিয়া বক্স, সাইডস্ক্রিন, হসপিটালিটি বক্স প্রায় সবই নষ্ট।  ২০০৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত হওয়া তিনটি টেস্ট, চারটি ওয়ানডে ও পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সবগুলোতেই ছিল গ্যালারি পরিপূর্ণ দর্শক। সবগুলো ওয়ানডে খেলার জয়ের তকমাও আছে এই ভেন্যুর গায়ে। টাইগারদের কখনো খালি হাতে ফেরায়নি স্টেডিয়ামটি। এ কারণে আবু নাসের স্টেডিয়ামকে লাকি ভেন্যুও বলা হয়। অথচ দীর্ঘ সাত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ নেই এই ভেন্যুতে। ফলে ক্ষুব্ধ খুলনা বিভাগের ক্রিকেটপ্রেমীরা।

খুলনা সেন্ট যোসেফ স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মাহিয়ান শিকদার আরিন বলেন, সেই ২০১৬ সালে মামার হাত ধরে শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলাম। তারপর আর যাওয়া হয়নি ওখানে। স্টেডিয়ামটিতে যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতো তাহলে আমাদের মতো হাজারো তরুণ খেলা দেখতে যেত। আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে চাই।

খুলনা বিভাগীয় অনূর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মো. মাহবুবুর রহমান সিফাত বলেন, ২০১৬ সালের পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ নেই। গত বছর লিগের খেলা হলেও এ বছর বন্ধ রয়েছে। জাতীয় ক্রিকেট দলে খুলনা বিভাগের ক্রিকেটারদের অবদান সবচেয়ে বেশি। কিন্তু আবু নাসের স্টেডিয়ামে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত না হওয়ায় খুলনার ক্রিকেট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা খেলোয়াড়রাও হতাশ।

খুলনার স্বনামধন্য ক্রিকেট সংগঠন কপিল মুনি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (কেকেএসপি) সভাপতি নাজমুস সাদাত সুমন বলেন, শেখ আবুনাসের স্টেডিয়ামে দীর্ঘদিন ধরে কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় না। এ কারণে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমীরা।

ভেন্যু ইনচার্জ মো. মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল বলেন, মিডিয়া সেন্টার নষ্ট হয়ে গেছে। খুব দ্রুতই মাঠের কাজ শুরু হবে। সরকার থেকে বিভিন্ন প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার এসেছেন। অলরেডি তারা বাজেট তৈরি করেছেন। টেন্ডার হয়নি তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এস এম মোর্তজা রশিদী দারা বলেন, গ্যালারি পরিত্যক্ত ঘোষণার কারণে বর্তমানে শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। তবে স্টেডিয়ামের আউটফিল্ড  খুব ভালো আছে। এ মাঠে বিদেশি এ টিম, ডেভেলপমেন্ট টিম, অনূর্ধ্ব-১৯, প্রথম শ্রেণির জাতীয় লিগ ও বিভাগীয় বয়সভিত্তিক ম্যাচগুলো নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, গ্যালারি সংস্কারের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বান করে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মহামারি করোনা ও বিশ্বমন্দার (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ) কারণে টেন্ডারটি এখনো পাশ হয়নি। আশা করা হচ্ছে, টেন্ডারটি দ্রুত পাশ হবে। 

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, খুলনা বিভাগ থেকে উঠে এসেছে দেশের অধিকাংশ তারকা ক্রিকেটার। এ কারণে খুলনা বিভাগকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উর্বর ভূমি বলা হয়। অথচ সেই খুলনাই উপেক্ষিত।

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন