রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় বাঘায় কৃষি ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নয়ন 

আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:২০

রাজশাহীর বাঘায় বর্তমান সরকারের ১৫ বছরে স্বাস্থ্য ও কৃষি বিভাগ থেকে নানামুখী সেবা প্রদানের কারণে  এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান বদলে গেছে। এই দুই খাতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি আর নানামুখী পদক্ষেপসহ কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ডাক্তারদের শতভাগ উপস্থিতি দেখা গেছে। এছাড়া কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পরিদর্শনের কারণে এ এলাকার মানুষ কৃষি খাতে নানা পরামর্শ পাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হরেকরকম পরীক্ষা (টেস্ট) ও অপারেশন (ওটি) চালু হওয়ায় সকল প্রকার সেবা পাচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন মনে করছেন, চারঘাট-বাঘার সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলমের সার্বিক প্রচেষ্টার কারণে এ দুই বিভাগ থেকে মানুষ শতভাগ সেবা পাচ্ছে। 

বাঘা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর। ছবি: নুরুজ্জামান

জানা গেছে, রাজশাহীর বাঘায় দুটি পৌরসভা এবং সাতটি ইউনিয়ন মিলে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষি আবাদ হচ্ছে। আর কৃষি পেশার সঙ্গে জড়িত আছেন শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ। এখানকার প্রধান অর্থকারী ফসলের মধ্যে অন্যতম আম, খেজুরের গুড়, ধান, পাট, আখ এবং আলু-পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। এর সঙ্গে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে পলিনেট হাউজে শীতের সবজি গরমে এবং গরমের সবজি শীতে পাওয়ার সুযোগ। এ ছাড়াও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এখানে পাওয়া যাচ্ছে ক্যাপসিক্যাপ মরিচ, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, চিয়াসিট, ড্রাগন ফল এবং উন্নত প্রযুক্তি বিনা ধান ২৫সহ হরেক রকম বিদেশি ফল। 

বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ড. আসাদুজ্জামান জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ হয়েছে। নতুন ওপিডি বিল্ডিং নির্মাণ ও স্বাস্থ্য সেবাকে গতিশীল করতে প্রথম শ্রেণির অফিসার এবং দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য নতুন কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে একটি মসজিদ, চালু হয়েছে ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিক, নতুন বর্জ্য নিষ্কাশন পিট নির্মাণ, এনসিডি কর্নার স্থাপন, পাবলিক টয়লেট, আইভিশন সেন্টার স্থাপন, অপারেশন থিয়েটার স্থাপন, ডিজিটাল এক্সরে মেশিন স্থাপন, আলট্রাসাউন্ড মেশিন স্থাপন, আধুনিক মেশিন সমন্বিত ডেন্টাল ইউনিট স্থাপন, ৮টি পরিবার পরিকল্পনা উপকেন্দ্রসহ আড়ানী পৌর এলাকায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নিজেস্ব অর্থায়নে কেনা জায়গায় গড়ে উঠেছে মা ও শিশু হাসপাতাল। এর ফলে সাধারণ মানুষের আর চিকিৎসা নিতে শহরে যেতে হচ্ছে না। এ জন্য তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী দেখছেন চিকিৎসক। ছবি: নুরুজ্জামান

উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কৃষি ক্ষেত্রে নানা প্রকার সুযোগ-সুবিধাসহ সরকারি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। বিশেষ করে উপজেলার প্রায় তিন হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে আউস প্রণোদনার আওতায় উন্নত মানের নেরিকা বীজ, সার নিড়ানী খরচ ও সেচ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এলাকা ভিত্তিক ৩০টি পাওয়ার টিলারসহ আম গাছে কীটনাশক প্রয়োগ করার জন্য বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয়  সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের পক্ষ থেকে ১শ’ টি স্প্রে মেশিন সরবরাহ করা হয়।

তিনি বলেন, এ উপজেলায় ২০ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিরলসভাবে বিভিন্ন ফসলের নতুন নতুন  প্রযুক্তি দ্বারা সরকারের উন্নয়নের ধারা অবহত রেখেছেন। সেইসঙ্গে পানির স্তর সংরক্ষণের জন্য তাল ও খেজুর গাছ রোপন করাসহ মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার্থে কৃষকদের পরামর্শের মাধ্যমে জৈবসার উৎপাদন অব্যহত আছে। এখানকার আম দেশ বিখ্যাত। গত ৭-৮ বছর থেকে হরট্রেক্স ফাউন্ডেশন ছাড়াও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা বাঘায় উৎপাদিত আম যুক্তরাজ্যে, নেদারল্যান্ড, পর্তুগাল হংকং ও ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত বছর থেকে আমের পাশাপাশি পেয়ারা ও বরই রপ্তানি শুরু হয়েছে। আর এগুলোর সবই সম্ভব হয়েছে চারঘাট-বাঘার অবিভাবক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কারণে। এ জন্য তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

বাঘার আমোদপুর গ্রামের কৃষক মহাসিন আলী বলেন, আমরা যে কোনো ধরনের কৃষি সেবা চাওয়া মাত্রই তা পেয়ে থাকি। ফসলে কখন কোনো বিষ প্রয়োগ করতে হবে, কখন হবে না, এছাড়াও পোকা মাকড়ের আক্রমণ হলে কোনো ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করা প্রয়োজন তার সবটাই আমরা উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ পেয়ে থাকি। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকেও পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন উন্নত চিকিৎসা ও ঔষধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, এই সব উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় এমপি ও বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকেন। মাঝে মধ্যে মন্ত্রী এলাকায় আসলে আমাদের সমস্যার কথা শোনেন। এবং সেটি সমাধানের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। 

কৃষিখাতে হয়েছে ব্যাপক উন্নয়ন। ছবি: ইত্তেফাক

একই কথা বলেন বারখাদিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ, বাউসার শফিকুল ইসলাম ও বলিহারের অমৃত কুমার। তারা আশাবাদী সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে এই জনপদের মানুষ আবারও নৌকাকে বিজয়ী করবেন।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলম বলেন, আমাদের সরকার কৃষকবান্ধব। আমরা মনে করি কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। এ কারণে কৃষিখাতে অনেক ভর্তুকি দিয়ে থাকি। কারণ কৃষি এ দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। বর্তমানে দেশে জিডিপির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অর্জিত হয় কৃষিখাত থেকে। তার চেয়েও বড় কথা কৃষি এ দেশের জনমানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রদানের প্রধানতম এবং অন্যতম উৎস। এ দেশের বিপুল জনসংখ্যার অধিকতর কর্মসংস্থানও হয়ে থাকে কৃষিকে অবলম্বন করে। ফলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, জীবনযাত্রার মানউন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে কৃষিখাতে যে অধিকতর মনোযোগ দিতে হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমার দেখা মতে, বর্তমানে আমার নির্বাচনী এলাকা বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে অনেক শিক্ষত তরুণ ও যুবক নিজেকে কৃষি কাজে সম্পৃক্ত করেছেন। এর ফলে এক সময় যে সকল ফল রাজধানী ঢাকা কিংবা বিদেশে গিয়ে পাওয়া যেত, সেগুলো এখন বাঘায় পাওয়া যায়। ধরে নিতে হবে এটিও বর্তমান সরকারের কৃষি ভাবনার এক বাস্তব প্রতিফলন।

ইত্তেফাক/পিও