রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিহত করা হইবে কীভাবে?

আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৩০

বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ঢুকিয়া পড়িয়াছে স্বাধীনতাবিরোধী অনুপ্রবেশকারীরা। তাহারা তৃণমূল হইতে শুরু করিয়া কেন্দ্রীয় কমিটিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতেও বসিয়া আছে। তাহাদের প্রভাব-প্রতিপত্তির নিকট অনেক সময় সংশ্লিষ্ট দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা পর্যন্ত কোণঠাসা হইয়া পড়িয়াছেন। এই যখন প্রকৃত অবস্থা, তখনো অনেকে বলিয়া চলিয়াছেন যে, স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিহত করা হইবে। মজার বিষয় হইল, যিনি বা যাহারা এইরূপ কথাবার্তা বলিতেছেন, অনেক সময় তাহাদের পার্শ্বেই বসিয়া থাকিতে দেখা যাইতেছে সেই সকল রাজাকার, আলবদর, আলশামসের সদস্য বা তাহাদের উত্তরসূরিদের। এই পরিপ্রেক্ষিতে তাহাদের প্রতিহত করিবার এজেন্ডা বাস্তবায়িত হইবে কীভাবে? ইহা কি হাস্যকর বিষয় নহে? এই জন্য বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী মৃত্যুর পূর্বে এই অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক করিয়া গিয়াছেন; কিন্তু তাহার এই মূল্যবান সতর্কবার্তার পরেও আমরা তাহা হইতে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করি নাই।

এদিকে আগামী দিনগুলিতে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া দেশে বিপত্সংকুল পরিস্থিতির সৃষ্টি হইতে পারে বলিয়া আশঙ্কা করা হইতেছে। এই সংকটকালে সেই সকল অনুপ্রবেশকারীর ভূমিকা হইতে পারে আরো ন্যক্কারজনক। ইতিমধ্যে আমাদের দেশে ছোট-বড় এমন অনেক রাজনৈতিক অঘটনের জন্ম হইয়াছে, যাহার পশ্চাতে কলকাঠি নাড়িয়াছে এই স্বাধীনতাবিরোধী ও অনুপ্রবেশকারীরা। একটু চোখ-কান খাড়া রাখিলেই তাহাদের নাম ও বংশপরিচয় বাহির করা অসম্ভব নহে। আমরা বরাবরই বলিয়া আসিতেছি, দলের অভ্যন্তরে ঘাপটি মারিয়া থাকা এই অনুপ্রবেশকারীরা প্রশাসনের একশ্রেণির দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এমন কেনো অন্যায়-অপকর্ম নাই, যাহা তাহারা করিতেছে না। আমরা বিশ্বাস করি, ক্ষমতাসীনরা আজ যেইভাবে সমালোচনার শিকার হইতেছেন, তাহা উচিত ছিল না; কিন্তু এই বহিরাগত ও অনুপ্রবেশকারীদের কারণে সরকারের সমালোচনা ক্রমশ বাড়িয়া চলিয়াছে। সাধারণ মানুষ তাহাদের কারণে হইয়া উঠিয়াছেন ত্যক্তবিরক্ত। তাহারা কথায় কথায় হামলা ও মামলায় দক্ষ। তাহারা স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রকও বটে। তাহারা সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ লইয়া সেই কাজগুলি ঠিকমতো উঠাইতেছে না। এমনকি কোনো কাজ না করিয়াই বিল উঠাইয়া লইতেছে। ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে তাহাদের বিরুদ্ধে কেহ কিছু বলিতেও পারিতেছেন না। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শীর্ষনেতরা এই দুঃসহ পরিস্থিতি কেন্দ্রে ব্যাখ্যা করিবেন, ইহাই সাংগঠনিক নিয়ম; কিন্তু নগদ অর্থের নিকট তাহারাও ধরাশায়ী। আর্থিক লোভে পড়িয়া দলীয় আদর্শকে তাহারা জলাঞ্জলি দিতেছেন। এখনই যদি তাহাদের চিহ্নিত করিয়া ঝাড়িয়া ফেলিয়া দেওয়া না হয়, তাহা হইলে ক্ষমতাসীনরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভের শিকার হইবে নিঃসন্দেহে।

এখন আমাদের কথা শুনিয়াই যে তাহাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা লইতে হইবে, এমনটি নহে। প্রয়োজনে এই ব্যাপারে তদন্ত করিয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হউক। যাহারা বলিতেছেন, তাহারা আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী—তাহাদের এই কথারই-বা কী ভিত্তি রহিয়াছে? যদি তদন্তে প্রমাণিত হয়, তাহারা আসলে বর্ণচোরা ও তাহাদের কর্মকাণ্ড দলের জন্য আত্মঘাতীস্বরূপ, তাহা হইলে তাহাদের দলে রাখা হইবে কেন? তখন তাহাদের দল হইতে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করাই কি সংগত হইবে না? কথায় বলে, দুষ্ট গরুর চাইতে শূন্য গোয়ালই ভালো। এইরূপ দুষ্ট লোকদের লইয়া দলে ভারসাম্য আনয়নেরও কোনো দরকার নাই; কিন্তু যখন আমরা দেখি তাহারা দলের সাধারণ সদস্য পদ তো বটে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবৈধ অর্থের বিনিময়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদেও বসিয়া আছে, তখন আমরা তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারি না। কনফিউজড বা সন্দেহপ্রবণ হইয়া উঠি। এমতাবস্থায় তাহাদের প্রতিহত করিবার কথা না বলাই কি বাঞ্ছনীয় নহে? আমরা প্রায়শ খবরের কাগজে পড়ি, এই সকল অনুপ্রবেশকারী ও দুর্বৃত্তদের দল হইতে উচ্ছেদ করা হইবে, তাহাদের সহিত কোনো প্রকার আপস করা হইবে না ইত্যাদি; কিন্তু বাস্তবে এই কথার কানাকড়ি কোনো মূল্য কি আছে? এখনো সময় আছে, তাহাদের লাগাম টানিয়া ধরিতে হইবে।

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন