রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

উপাচার্যের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চাইলেন জাবির সেই ছাত্রলীগ নেতা

আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৪

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের ছোটভাই আরমান খান যুবর বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জাহিদ হাসান ইমনকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ইমন। এছাড়া সেখানে নিজের জীবনের নিরাপত্তাও চেয়েছেন তিনি।

শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম ও উপাচার্যের সচিব গৌতম কুমার বিশ্বাসকে ই-মেইলে অভিযোগপত্র পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা। 

ইমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শেখ রাসেল হলের আবাসিক ছাত্র। এছাড়া তিনি জাবি ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।

অভিযুক্তদের মধ্যে বাংলা বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের (৪১তম ব্যাচ) সাবেক শিক্ষার্থী আরমান খান যুব ছাড়াও রয়েছেন প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের (৪২তম ব্যাচ) সাবেক শিক্ষার্থী আরাফাত, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের (৪১তম ব্যাচ) সাবেক শিক্ষার্থী তুষণ ও অজ্ঞাত আরেক ব্যক্তি। কয়েক বছর আগে ছাত্রত্ব শেষ হলেও যুব এখনও মওলানা ভাসানী হলের একটি কক্ষ দখল করে রেখেছেন। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকের সিন্ডিকেট ও মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে ‘টর্চার সেল’ পরিচালনার অভিযোগ বেশ পুরনো।

উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্রে ইমন বলেছেন, আরমান খান যুব ও তার সহযোগীরা তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে গালাগালি করেছেন মর্মে স্বীকারোক্তি দিতেও তাকে বাধ্য করা হয়েছে। একইসঙ্গে তার শরীরে পিস্তল ঠেকিয়ে ঘটনা প্রকাশ না করার হুমকি দেন যুব।

উপাচার্য বরাবর দেওয়া একই অভিযোগপত্র ইমন তার ইন্সটিটিউটের পরিচালক এবং শিক্ষার্থীকল্যাণ উপদেষ্টাকে পাঠিয়েছেন। কারণ ইমনের এখনও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হয়নি। একটি কোর্সের পরীক্ষা বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

জাহিদ হাসান ইমন বলেন, হলে কোনো চাঁদার ভাগ আমি নিতাম না, সোহেল (জাবি ছাত্রলীগ সভাপতি) ভাইকে বলেছি আমার মায়ের নিষেধ আছে। আর কেউ নেয় কিনা সেটা জানি না।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কোনো ধরনের চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত না। চাঁদার বিষয়ে ছাত্রলীগ কখনো প্রশ্রয় দেয় না। এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স মানা হয়। আমি জানি না সে কোথা থেকে চাঁদার বিষয়টা বলেছে, সে এখন নতুন করে ইস্যু ক্রিয়েট করছে। আমরা তার সঙ্গে কথা বলবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলে ইমনকে মারধরের ঘটনাটি ঘটেছিল চলতি বছরের ১৩ আগস্ট। এতদিন পরে অভিযোগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানানোর পরেও তিনি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেননি। বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রক্টর। ঘটনার পরদিন প্রক্টরের বাসায় ছাত্রলীগ সভাপতির একান্তে বৈঠকের খবর পেয়েছি। যে কারণে প্রক্টরের ওপর আমার আস্থা নেই। তাই উপাচার্যের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

অভিযুক্ত আরমান খান যুব বলেন, রাজনীতির আগে পিছে কখনই আমি ছিলাম না। কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না, আমি বড় ভাইয়ের পরিচয় ব্যবহার করি। ইমনের বাড়িওয়ালার সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল। এটা নিয়ে ইমন আমার রুমে এসেছিল, কিন্তু তার সঙ্গে শুধু কথা হয়েছে; মারধরের ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার তদন্ত করা উচিত। যেগুলো বলা হচ্ছে সেগুলো মিথ্যা। এতদিন পরে কেন সে এসব কথা বলছে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ইমন নির্যাতনের বিষয়টি আমাকে জানিয়েছিল। আবার সে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিতেও বলে। সে আমাকে বলেছিল, এ বিষয়ে সে নিজে থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার সচিব গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেছেন, অফিস বন্ধ থাকায় কী ই-মেইল এসেছে তা জানি না।

ইত্তেফাক/এবি