মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

কন্যাশিশুর সুরক্ষা

আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৩০

আজ সারা দেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। আর আন্তর্জাতিকভাবে পালন করা হয় ১১ অক্টোবর। তবে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন দিনে দিবসটি পালন করে থাকে। বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে বছরের এই দিন জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালন করা হচ্ছে। একটি দিন শুধু কন্যাশিশুদের জন্য উত্সর্গ করা। অনেকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে স্ট্যাটাস দিয়েই কন্যাশিশু দিবস পালন করছেন। বিভিন্ন আয়োজন ও অনুষ্ঠানে কন্যাশিশুদের প্রতি বৈষম্য নিরসন, তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করার আহ্বান থাকবে।

কানাডা প্রথম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালনের প্রস্তাব দেয়। পরে ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালন করা হয়। এর প্রতিপাদ্য ছিল বাল্যবিবাহ বন্ধ কর। পৃথিবী জুড়ে লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।

সারা বিশ্বেই নানা কারণে কন্যাশিশুরা বেশ অবহেলিত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মর্যাদা, ভালোবাসা—সব দিক থেকেই বলতে গেলে তারা বঞ্চিত। শুধু যে আমাদের দেশের চিত্র এমন তা কিন্তু নয়। সারা বিশ্বেই কোনো না কোনো জায়গায় প্রতি মুহূর্তে অবহেলার শিকার হচ্ছে কন্যাশিশু। পরিবার ছাড়াও সামাজিকভাবেও তারা হচ্ছে বিভিন্নভাবে নির্যাতিত। সামাজিক, রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্রসহ সমস্ত স্থানে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ দূরীকরণ হলো কন্যাশিশু দিবস অন্যতম উদ্দেশ্য। গৃহ-পরিবেশে একজন পুত্রসন্তানকে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে আদর-যত্নে লালনপালন, শিক্ষার প্রতি যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেভাবেই একজন কন্যাশিশুর মানসিক নিপীড়নের হাত থেকে মুক্ত করার কথাই উচ্চারিত হয়ে থাকে এ দিবসে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৭৪ সালে প্রথম শিশু আইন প্রণয়ন করেন। এর ১৫ বছর পরে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ঘোষণা দেয়। এর পরের বছর বাংলাদেশ সেই সনদে সই করে। কন্যাশিশুদের শিক্ষার অধিকার, পরিপুষ্টি, আইনি সহায়তা ও ন্যায় অধিকার, চিকিত্সা সুবিধা ও বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বলপূর্বক বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে এ দিবসের সূচনা।

বিশ্বজুড়ে নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা ও নৃশংসতার ঘটনা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ শিশু, যাদের বয়স আঠারো বছরের কম। আর শিশুদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ কন্যাশিশু যাদের পিছনে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কন্যা-জায়া-জননীর বাইরেও কন্যাশিশুর বৃহত্ জগত্ রয়েছে। স্বাধীনভাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করা ছাড়াও পরিবার, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের প্রকৃত ক্ষমতায়ন করা সম্ভব। এজন্য কন্যাশিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তাসহ বেড়ে ওঠার সব অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

কন্যাশিশু সুরক্ষা পেলে সব বৈষম্য দূর হবে। কন্যাশিশুদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাফল্য অর্জন করেছে। বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে নেওয়া হয়েছে কঠোর আইন। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে। অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হতে হবে কন্যাশিশুদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। কন্যাশিশুর অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে পুরুষকে।

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন