বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

চট্টগ্রামে গণপরিবহনে নৈরাজ্য যাত্রী হয়রানি চরমে

আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:০০

চট্টগ্রাম মহানগরীতে গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছে। সরকারনির্ধারিত ভাড়া মানছেন না বাসের চালক-হেলপাররা। যাত্রীদের এক প্রকার জিম্মি করে ইচ্ছেমতো ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। একসময় বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত মিনিবাসে ভাড়া ছিল ৯ টাকা। সেই ভাড়া গত বছরের শেষের দিকে এক লাফে ৬ টাকা বাড়ানো হয়। এরপর আরও দুই দফা বাড়িয়ে এখন ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এভাবে নগরীর প্রায় প্রতিটি রুটেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিকালে অফিস ছুটির পর যাত্রীর চাপ থাকলে অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ভাড়ার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে বিআরটিএর পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে অভিযান চালানো হলেও এই অভিযানের দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাচ্ছেন না যাত্রীরা। যাত্রীরা প্রতিনিয়ত অস্বাভাবিক ভাড়া নৈরাজ্য ও পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পরিবহন শ্রমিকদের সিন্ডিকেটের কাছে যাত্রীরা জিম্মি হয়ে আছেন। তারা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিবাদ করলেই মাঝপথে যাত্রীদের গালাগালি দিয়ে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা নিয়মিত ঘটছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরী সূত্র জানান, নগরীর বেশির ভাগ রুটে চলাচলকারী বাস, মিনিবাস, হিউমান হলার, টেম্পু পারমিটের শর্ত লঙ্ঘন করে অধিক মুনাফার লোভে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী চলাচল করে। তারা পুরো পথে চলাচলের পরিবর্তে অর্ধেক পথে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে পুরো পথের ভাড়া আদায় করছে। যেমন রুট পারমিট অনুযায়ী ১০ নম্বর রুটের বাস পতেঙ্গা থেকে কালুরঘাট যাওয়ার কথা থাকলেও বিকালে কারখানা ছুটির পরে ইপিজেড গেট থেকে আগ্রাবাদ ৪০ টাকা ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের আগ্রাবাদ নামিয়ে দেয়। আবার একই বাস আগ্রাবাদ থেকে বহদ্দারহাটের যাত্রী তুলে তাদের কাছ থেকে ৪০ টাকা করে নেয়। এরপর বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত ২০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী বোঝাই করে। অর্থাৎ এক রুটের বাস ৩ দফায় যাত্রী ওঠানামা করে ভাড়া নেয় ১০০ টাকা। অথচ পতেঙ্গা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত পুরো পথের ভাড়া ৫৫ টাকা। দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের জন্য যাত্রীদের পথে পথে কয়েক দফা উঠানো নামানোর এহেন নৈরাজ্যের কারণে যাত্রীরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর পাশাপাশি রাস্তায় বাসগুলো এলোমেলো দাঁড়িয়ে থাকার কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় যা অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

নগরীর শাহ আমানত ব্রিজ থেকে মইজ্জ্যারটেক পর্যন্ত গণপরিবহনে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ রুটে সরকার ১০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও মাহিন্দ্রা গাড়ি, টেম্পো ও বাসে ২০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলেন, নতুন ব্রিজ থেকে মইজ্জ্যারটেক ২০ টাকা ভাড়া নেয়। অথচ নতুন ব্রিজ থেকে অনেক দূরে পটিয়ার ভাড়াও ২০ টাকা। প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকরা দুর্ব্যবহার করে। এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই গার্মেন্টস কর্মী।            

প্রতিদিন তাদের পক্ষে ৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে যাত্রীরা জানান।    

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে যেসব বাস চলাচল করে তার প্রায় সবই মিনিবাস। মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা। কিন্তু চট্টগ্রামে দুই টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা করে। মহানগরীতে আগে প্রতি কিলোমিটারে বড় বাসের ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সা থাকলেও তা বাড়িয়ে ২ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। মিনিবাসের ভাড়া ছিল ২ টাকা ৫ পয়সা। তা ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ৪০ পয়সা করা হয়েছে। কিন্তু এই ভাড়ার হারও মানা হচ্ছে না।

ইত্তেফাক/এমএএম