স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল—এ কথা আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। কিন্তু কীভাবে স্বাস্থ্য পরিচর্যা করতে হয়, সে ব্যাপারে আমাদের সম্যক ধারণা থাকে না। অথচ কিছু বিশেষ নিয়ম ও অনুশাসন মেনে চললে আমরা খুব সহজেই স্বাস্থ্য পরিচর্যা করতে পারি।
কী কী বিষয় মানতে হবে, তার একটি সাধারণ তালিকার দিকে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক—১. ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা। ২. রাতে ঘুমাতে দেরি না করা এবং রাত না জাগা। ৩. ভোরে ঘুম থেকে উঠে যাওয়া এবং অনেক বেলা পর্যন্ত না ঘুমানো। ৪. সকালে ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা। ৫. পুষ্টিকর খাবারের প্রতি বিশেষভাবে সচেতন হওয়া। ৬. শরীরের চাহিদা অনুযায়ী খাবারের প্রয়োজন ও পরিমাণ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। ৭. মূল খাবার যেমন—সকাল, দুপুর ও রাতের খাবারের সঙ্গে সঙ্গে চা অথবা কফি পান না করা। অধিকাংশ ব্যক্তি তাদের সকালের নাশতার সঙ্গে চা-কফি পান করে থাকেন। এতে করে খাবারে বিদ্যমান আয়রন শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। তাই মূলত খাবারের অন্তত এক ঘণ্টা পর চা-কফি পান করুন। ৮. খাবারের সঙ্গে লেবু এবং দুপুর ও রাতের খাবারের পর টক ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটি খাবারের আয়রন শোষণে সাহায্য করে এবং আপনার পেটের মেদ কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ৯. বিকেলের নাশতায় বেকারি খাবার ও ভাজা খাবারের বিকল্প হিসেবে তাজা ফলমূল, শসা, গাজর ও বাদাম খাওয়ার অভ্যাস আপনার মুটিয়ে যাওয়া রোধ করতে সাহায্য করবে। ১০. তরতাজা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। খাবার কেনা, ধোয়া, কাটা ও রান্না ইত্যাদির জন্য সময় দিন। তবেই শরীরে পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ হবে। ১১. খাবারের বিষয়ে পণ্য কেনার সময় মুখরোচক ভাষা ও অতিরঞ্জিত প্রচারণার প্রতি বিশেষ সতর্ক থাকুন। অপ্রয়োজনীয় ও পুষ্টিহীন খাবার কেনা থেকে বিরত থাকুন। ১২. বর্তমানে অনেকের মধ্যে শকর্রা কম গ্রহণের প্রবণতা দেখা যায়। অনেকে ভাতকে মোটা হওয়ার অথবা শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার খাবার মনে করেন। অথচ তারাই পাস্তা, নুডল্স, নান, পিত্জা, বার্গার প্রভৃতি খাবার বেছে নেন। এগুলো শর্করাজাতীয় খাবার। মুখরোচক হওয়ার কারণে ভাতের চেয়ে পরিমাণে বেশি খাওয়া হয়, যার ফলে শরীরের ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে। অনেকের ধারণা—‘আমি ভাত খাই না, তার পরেও ওজন বেড়ে যাচ্ছে।’ মূল ব্যাপার হলো, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভাত গ্রহণ করেও শরীরের ওজন ও রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ১৩. অনেকে অতি কম শর্করা ও খাবার গ্রহণ করে থাকেন। ফলে প্রয়োজনীয় ক্যালোরির ঘাটতি দেখা দেয়, যা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ লীন টিস্যু ও বডি ফ্লুইড ক্ষয় হওয়ার প্রধান কারণ। ১৪. সুস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শাকসবজি ও ফল, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। অনুপুষ্টিসমৃদ্ধ (Micro nutrient) হওয়ায় শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যয় হিসেবে কাজ করে। যেমন—বিভিন্ন অর্গান সিস্টেমকে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, আদর্শ ওজন বজায় রাখার পাশাপাশি চর্বি জমে যাওয়ার ভারসাম্য রক্ষা করে। মেটাবলিক নিয়ন্ত্রণ ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ করে। তাই ফল ও শাকসবজি খাদ্যতালিকায় যুক্ত করার জন্য কিছু কৌশল অনুসরণ করা যেতে পারে।
এছাড়া প্রতি সপ্তাহে একটি নতুন ফল ও সবজি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পূর্বের চেয়ে দ্বিগুণ ফল ও সবজি খাদ্যতালিকায় যোগ করা যেতে পারে। সকালের খাবারের সঙ্গে ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নিয়মিত সবজিজাতীয় নানা রকমের খাবার তৈরি ও গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে। সবজির সালাদ ও স্যুপ গ্রহণ স্বাস্থ্যসম্মত। খাবারের সঙ্গে লেটুস, শাক, টমেটো গ্রহণের অভ্যাস করে তোলার চেষ্টা করা যেতে পারে। সময় বাঁচানোর জন্য ফ্রিজে আগেই পছন্দের সবজি হিমায়িত করে রাখা যায় এবং তা অল্প সময়ে প্রস্তুত করে খাবারের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। দুধ বা দইয়ের সঙ্গে ফলের লাচ্ছি বা শরবত পুষ্টি ও তৃপ্তি মেটাতে সক্ষম।
বিশেষ সতর্কতা :উপরোক্ত পরামর্শ সাধারণ নির্দেশনা। কিডনি ও জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য নয়। শরীরের রোগের ভিন্নতা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণের নির্দেশনা ভিন্ন।
লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ, শমরিতা
হাসপাতাল লিমিটেড